সম্পাদকীয়

 

রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে, পলাশে;
রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত-আকাশে...

বসন্তকে চিরবসন্ত করে যে মহামনীষী বাঙ্গালীর কৃষ্টি, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মননে বসন্তকে চিরপ্রোথিত করে দিয়ে গেছেন, সেই মনীষার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই,
"এলো আমার হারিয়ে যাওয়া
কোন ফাগুনের পাগল হাওয়া
বুঝি এই ফাগুনে আপনাকে সে মাগল,
সর্ষে ক্ষেতে ঢেউ হয়ে তাই জাগল।
নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল,
বসন্তে সৌরভের শিখা জাগল।
"

ঋতুরাজের শেষ চরণে যখন বসন্ত প্রকৃতির দখল নিয়ে নেয়, তখন দেখি নিস্পত্র গাছের শাখায় নবকিশলয়ের অঙ্কুরোদ্গম, প্রস্ফুটিত ফুলে নীল দিগন্ত যেন রাঙা হাসি হাসছে। দখিনা মলয় বাতাস শুধু প্রকৃতিকে জারিত করে না, প্রাণীজগতে তার সুতীব্র প্রভাব রেখে যায়, এক অনাবিল আনন্দ, এক অভাবনীয় ভালোলাগা চারপাশে ছড়িয়ে থাকে, তখন সবকিছুকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।

"আজ এই বসন্তের রাতে
ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে
ওই দিকে শোনা যায় সমুদ্ৰের স্বর
স্কাইলাইট মাথার উপর
আকাশে পাখিরা কথা কয় পরস্পর...
"

জীবনানন্দ দাশ মনে হয় গাছেদের পাখিদের ভাষা জানতেন। তাই সাবলীলভাবে বলে দিতেন ওদের বসন্ত গাথা। কবিদের কবি হয়ে ওঠা এই ভাষা রপ্তের দক্ষতায়। তাদের কাছে ঋতুরাজ বসন্তের একটাই চরিত্র, তা হলো - "বসন্ত বায় বহিছে কোথায়, কোথায় ফুটেছে ফুল"। বঙ্গ প্রকৃতির ষষ্ঠ চরণ নাহলে হঠাৎ হাওয়ার মতো সব ঋতুকে ছুঁয়ে যায় কিভাবে? সব ঋতুতে গাছেদের পাখিদের ভাষায় কবিরা কবিতা লেখেন কিভাবে? ফুল ফুটুক না ফুটুক/ আজ বসন্ত। - এই দাবি কখনোও ঔদ্বত্যপূর্ণ মনে হয় না।

বসন্ত তোমাকে সকাল সন্ধ্যা সব ঋতুতে স্পর্শ করে, তোমার মন ছুঁতে চায়, তুমি ধরা দাওনা। সেটা তোমার ভীতি, তোমার অহঙ্কার না নিস্প্রয়োজন তোমার কাছে, সেটা জানার জন্য আবার বসন্তের আগমন। তোমার বয়স অনেক বসন্তের সাক্ষী। তোমার মন হয়তো আহত হয়েছিলে কোনো এক বসন্তে। জানলা খুলে দেখ তোমাকে ভোলাতে, ক্ষতে প্ৰলেপ দিতে বসন্ত এসেছে, একমনে ডেকে চলেছে তোমাকে।

প্রকৃতির বুকে বসন্ত খোঁজার চেয়ে নিজের অন্তরে সম্বৎসর বসন্তকে আহ্বান করার নিরন্তর চেষ্টা থেকেই কবি গেয়ে ওঠেন, "ফুল ফুটুক বা না ফুটুক, আজ বসন্ত।"

ধরার বুকে উতলা চিরসবুজ, চিরনবীন বসন্তকে অন্তরের মাঝে চিরকালীন করে রেখে দেওয়ার শুভ প্রচেষ্টা যেন অবিরত আমাদের মধ্যে জাগ্রত থাকে। তাই কবির ভাষায় বলি, "রঙ যেন মোর মর্মে লাগে, আমার সকল কর্মে লাগে..."


১৫ মার্চ, ২০২৪