এক দেশ, দুই পৃথিবী
পৃথিবীর বুকে ভারতবর্ষ দেশটা অশিক্ষা, অপুষ্টি, অনাহার, শিশুশ্রমিক, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দারিদ্র্যের দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। হবে নাই বা কেন, যেখানে স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও দেশের শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ প্রকৃত অর্থে অশিক্ষিত রয়ে গেছে এবং আর্থিক দিক দিয়ে দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করছে।
২০২৩ সালের 'অক্সফাম' রিপোর্ট বলছে, মাত্র ১ শতাংশ ধনীর হাতে জমা আছে দেশের মোট সম্পদের ৪০.১ শতাংশ। অন্যদিকে ৫০ শতাংশ দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের ভাগে জুটেছে ৬.৪ শতাংশ সম্পদ। আরও পরিষ্কার চিত্র হলো নিচের দিকের ৯০ ভাগ মানুষের মোট সম্পদ আছে মাত্র ওপরের দিকের ৫৭ জন শিল্পপতির হাতে। ২০১৮ থেকে ২০২৩, এই পাঁচ বছরে শুধুমাত্র মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানির মোট সম্পদ ৪ লক্ষ ১৭ হাজার কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তাদের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লক্ষ ২৪ হাজার কোটি টাকায়। প্রশ্ন তো আসবেই কেন্দ্রীয় সরকার কার স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যস্ত? সাধারণ মানুষের না পুঁজিপতিদের?
বিগত ৮ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোল-ডিজেলের ওপর ট্যাক্স বসিয়ে আয় করেছে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা। ফলশ্রুতিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। গরীব মানুষদের তার জন্য নিদারুণ খেসারত দিতে হয়েছে। অন্যদিকে সরকার বৃহৎ পুঁজিপতিদের, যাদের অধিকাংশই গুজরাতি ৫৬ লক্ষ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব করেছে ও ট্যাক্সে ছাড় দিয়েছে। একদিকে সরকার জনগণের ওপর ট্যাক্সের বোঝা বাড়াচ্ছে, অপরদিকে পুঁজিপতিদের ট্যাক্সে ছাড় দিচ্ছে। এও এক চূড়ান্ত বৈষম্য!
গরীব মানুষের ওপর যত শোষণ জুলুম বাড়ছে কেন্দ্রীয় সরকার ততই সামরিক খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে চলেছে আর শিক্ষাখাতে ব্যয় বরাদ্দ কমাচ্ছে। অন্যদিকে উন্নত দেশ থেকে, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবি থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ধার করেছে ১,৬৯,৪৬,৬৩৬,৮৫ কোটি টাকা, সে কারনে ২০২৩-এর বাজেটে প্রতি ১০০ টাকায় ধার শোধের বরাদ্দ রাখতে হয়েছে ৪০ টাকা। ভাবা যায় অর্থনৈতিকভাবে কত বিপন্ন আমাদের এই দেশ!
বৃহৎ পুঁজিপতিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে না পেরে, শুধুমাত্র ২০২২ সালে ৭ লক্ষ ২৪ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। উপরন্তু বহুজাতিক সংস্থাগুলি শুধু হোলসেল নয়, রিটেল ব্যবসায় দখল নেওয়ার ফলে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের ওপর জোরালো আঘাত নেমে এসেছে। ফলশ্রুতিতে মধ্যবিত্ত পরিবারের সংখ্যা ৯ কোটি ৬০ লক্ষ থেকে দ্রুত কমে ৬ কোটি ৩০ লক্ষ হয়েছে। খুবই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা!
সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের, দেশের ৬০ শতাংশ মানুষের দৈনিক রোজগার ১৬০ টাকা এবং ৩০ শতাংশ মানুষের দৈনিক রোজগার ৮০ টাকা। সে কারণেই দেখা যায় একজন ৫,০০০ কোটি টাকা দামের বাড়িতে বাস করে, আরেকজন খোলা আকাশের নীচে রাত কাটায়।
এখন ঠিক করুন, আপনি কোন পৃথিবীর পক্ষে থাকবেন?
সূত্রঃ
১) পিউ রিসার্চ, ১৮-১০-২০২৩
২) দি ইকোনমিক টাইমস, ২১-০৩-২০২৪
৩) বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ২২-০৪-২০২২
৪) বিজনেস টুডে, ০৮-০৯-২০২২
১৫ মে, ২০২৪