আমাদের বড়ো ক্ষতি হয়ে গেল। বিশেষ করে, বাঙালিদের। বাঙলার মনীষার দুই নক্ষত্র আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। একজন বছর কয়েক আগে, যার শতবর্ষ পূরণ হয়েছে ১৪ই মে, ২০২৩ আর বাকি জন সম্প্রতি। প্রথমজন চলচ্চিত্রের সুবাদে সবিশেষ পরিচিত, অন্যজন ইতিহাসবেত্তা, যিনি ২৩শে মে, ২০২৩ শতবর্ষ পূরণ করেছেন। শতাব্দী প্রাচীন এঁরা হলেন, যথাক্রমে মৃণাল সেন ও রণজিৎ গুহ।
মৃণাল সেনের ছবি মানেই চমক, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সিনেমার মধ্যে নাটক, নাটকের মধ্যে সিনেমা, সাহসের সঙ্গে দর্শকদের বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করানো, ৭১-এর ইতিহাস তুলে ধরা, এ ওঁনার পক্ষেই সম্ভব। তিনি একাধারে যেমন দেশে-বিদেশে পুরস্কৃত হয়েছেন, প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনি ফর্ম ভাঙার জন্য সমালোচিতও হয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমা মৃগয়া, আকাশ কুসুম, ভুবন সোম, ইন্টারভিউ, কলকাতা ৭১, খন্ডহর, খারিজ, একদিন অচানক ইত্যাদি। সিনেমার ওপর দুটি বই লিখেছেন 'অলওয়েজ বিইং বর্ন' এবং 'মাই চ্যাপলিন'।
একজন যদি সিনেমার ফর্ম ভাঙেন, অন্যজন ভেঙেছেন ইতিহাসের ফর্ম। রণজিৎ গুহ রাজা-বাদশাদের ইতিহাস, শাসকের ইতিহাস, শাসকের নির্দেশে লেখা ইতিহাস খারিজ করে সাব-অল্টার্ণ স্টাডিজ বা নিম্নবর্গীয় মানুষের জীবনসংগ্রাম ও তাদের প্রতিবাদী ইতিহাসকে কেন্দ্র করে নতুন আঙ্গিকে গবেষণা শুরু করেন। সেই সময় এবং পরবর্তীকালে অনেক গবেষক এই চর্চায় জড়িয়ে পড়েন।
রণজিৎ গুহের নজরকাড়া বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁর লিখনশৈলী, ভাষার ওপর অসম্ভব দখল এবং মন্ত্রমুগ্ধ করা বিশ্লেষণ। মূল লক্ষ্য, ক্ষুদ্র ইতিহাসের ভেতর থেকে বৃহৎ ইতিহাসকে খুঁজে বার করা।
এটা ঠিক, মণীষীর মৃত্যু আছে, মনীষার মৃত্যু নেই। আমাদের মাঝে সেই মনীষা জাগরিত থাকুক।
সুদীপ কুমার ধর
সম্পাদক, সমন্বয়
১৫ জুন, ২০২৩