সম্পাদকীয়

 

ভারতের গণতন্ত্র, গণতন্ত্রের ভারত

১৯৬৬ সাল। খাদ্য আন্দোলনে বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গ। নুরুল ইসলাম, আনন্দ হাইতের রক্তে স্নাত বঙ্গে প্রফুল্ল সেনের আক্ষেপ, 'কৃষ্ণনগর ডুবুডবু, নদিয়া ভেসে যায় রে'। সত্যজিত রায়ের আহ্বানে আয়োজিত শহীদ মিছিলে লক্ষ মানুষের ঢল। প্রেসিডেন্সি জেলে শতাধিক রাজবন্দীর মাঝে এই বিশ্বাসে স্থির আছি, 'আগামী বছরে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার পরিবর্তন হচ্ছে'।

তখন কংগ্রেসের প্রতীক চিহ্ন জোড়া বলদ। প্রতীকীভাবে বললে, বলদের আয়ু আবার বিশ বছর! যথারীতি শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, ৯টি অঙ্গরাজ্যে ১৯৬৭ সালে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হলো। বোঝা গেল, ভারতের গণতন্ত্র তখন হামাগুড়ি দিচ্ছে।

১৯৭৫ সাল, তখন জরুরী অবস্থা। সাধারণ মানুষের তেমন কোনো অসুবিধা ছিল না, ছিল শুধু ভয়ের বাতাবরণ। '৭৭ সালের নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের ৮৫ আসনে ও বিহারের ৫৪ আসনে কংগ্রেস ০ আসন পেয়েছিল। এই প্রথমবার কংগ্রেস কেন্দ্র থেকে ক্ষমতাচ্যুত হলো। বুঝলাম, ভারতের গণতন্ত্র তখন হাঁটতে শুরু করেছে।

তখন থেকেই মিলিঝুলি সরকারের পথ চলা। মাঝে একটা ব্যতিক্রম হলেও, এই পর্ব চলেছিল ২০১৪ পর্যন্ত। তখন ভারত পরিণত গণতন্ত্রের ছাপ রেখেছিল পৃথিবীর মানচিত্রে।

বিভেদের রাজনীতিকে চূড়ান্তভাবে জয়ী করে ২০১৪ সালে প্রথমবার এক স্বৈরাচারী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতা মানুষকে পাগল করে দেয়, বিশেষকরে পূর্ণ ক্ষমতা। তা নাহলে যার হাত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রক্তে রাঙ্গানো, যার মুখ বিভেদের বিষে কলুষিত, ক্ষমতায় আসার ১০ বছরের মধ্যে সে বলছে, "আমি মানুষ হয়ে পৃথিবীতে আসিনি, আমি স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতিনিধি হয়ে এসেছি"!

ভারতের অভিজ্ঞ গণতন্ত্র, সবে তার গলায় লাগাম পরিয়েছে। কোনো চিন্তা নেই, গণতান্ত্রিক ভারত দ্রুত এদেরকে চিহ্নিত করে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে আর ভারতের গণতন্ত্র পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুতপায়ে প্রগতির পথে এগিয়ে যাবে।

আপনি কি দাঁড়িয়ে থাকবেন? না সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে হাঁটতে থাকবেন?


১৫ জুন, ২০২৪