জুনিয়র ডাক্তার ও আমরা
জুনিয়র ডাক্তারেরা নিরলসভাবে কাজ করে বলেই হাসপাতালে অজস্র রোগীদের সুষ্ঠ পরিষেবা দেওয়া সম্ভবপর হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সাত লক্ষ মানুষ চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে যান। অধিকাংশই বহির্বিভাগের রোগী। এতো মানুষকে নিয়মিত পরিষেবা দেওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ। এই কঠিন কাজটাই জুনিয়র ডাক্তারেরা হাসিমুখে সিনিয়র ডাক্তারদের সহযোগিতায় দিবারাত্র করে চলেছেন। একেক সময় টানা ৩৬/৪০ ঘন্টা জুনিয়র ডাক্তারদের কাজ করতে হয়, যা এক অর্থে অমানবিক। এই অমানবিকতার মুখ্য কারণ রোগীর অনুপাতে ডাক্তারের সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। যতক্ষণ না ডাক্তারের সংখ্যা বৃদ্ধি ও হাসপাতালের পরিকাঠামোর গুণগত মান উন্নয়ন হচ্ছে, ততদিন রোগীদের সুষ্ঠ পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় রকমের গলদ থেকে যাবে।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ, বিশেষকরে নিম্নমধ্যবিত্ত ও গরীব, তাদের একমাত্র গতি সরকারি হাসপাতাল, অন্যথায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু। এই রকম পরিস্থিতিতে জুনিয়র ডাক্তাররা যদি কর্মবিরতি ঘোষণা করেন, সেই আক্রমনের অভিমুখ যতটা না উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, তার থেকে অনেক অনেক বেশি অসহায় দুঃস্থ রোগীদের বিরুদ্ধে। ডাক্তারদের দাবি দাওয়া যতই ন্যায়সঙ্গত হোক, যত গণ সংগঠন ও সাধারণ মানুষ তাদের পাশে থাকুক, তাদের ধর্মঘট আসলে সরাসরি আক্রমন করবে অসহায় গরীব রোগীদের, সেই মানুষগুলোর অবস্থা হবে পরীক্ষাগারের গিনিপিগের মতো। প্রশ্ন হলো, সাধারণ মানুষকে কেন পরীক্ষাগারের গিনিপিগ করা হবে? দাবিদাওয়া আদায়ের প্রশ্নে সাধারণ মানুষকে কেনই বা পণবন্দী করে রাখা হবে?
প্রতিবাদ তো থাকবেই। সঙ্গে থাকবে দায়িত্ব। দায়িত্বশীল প্রতিবাদই সঠিক পথ নির্দেশ করতে পারে। যদি সেখানে এসে রাজনীতি উপস্থিত হয়, কেউ যদি ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়ে, অবশ্যই তখন সঠিক বিচার না পাবে ডাক্তার, না পাবে রোগী। অতএব সাধু সাবধান!
১৫ অক্টোবর, ২০২৪