যুদ্ধবিগ্রহ ও আমরা
আমরা মধ্যবিত্ত, অতিসাধারণ এবং শান্তিপ্রিয়। বলা ভালো যে বিষয়ের অবতাড়না, তার প্রেক্ষিতে আমরা অকিঞ্চিৎকর, অর্বাচীন, অপাংক্তেয়। কথায় আছে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। এ ক্ষেত্রে আমরা উলুখাগড়া বা উলুখড়। এই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্খিত যুদ্ধ যার জেরে ভয়, আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে নিরীহ দেশবাসীকে। কখন যে কী হবে? পরমাণু যুদ্ধ না সাবেকী প্রথাগত যুদ্ধ, না নিরীহ সীমান্ত সংঘর্ষ তা কেউ জানে না। দেশের পূর্বদিকে যতো না বিপদ, পশ্চিম দিকে বিপদ ততোধিক। সেখানে সাইরেন বাজচ্ছে, ব্ল্যাক আউট হচ্ছে। বিশেষকরে কাশ্মীরে, পাঞ্জাবে জঙ্গী খোঁজার নামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষজনকে যখন তখন বিব্রত করছে। কে চায় এই ভয়ের বাতাবরণে থাকতে? কে চায় এই অশান্তি?
ভূস্বর্গ কাশ্মীরের পহেলগাঁও এ নরক নেমে এসেছিল সেদিন, যেদিন ২৬ জন নিরীহ পর্যটককে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। জঙ্গিদের কোনো জাত, ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি, দেশ, কাল বলে কিছু নেই। তাদের একমাত্র পরিচয় তারা জঙ্গি, টাকার বিনিময়ে শুধু মানুষ খুন করে। এক দেশের হয়ে অন্য দেশে বা আক্রান্ত দেশের হয়ে আক্রমণকারী দেশে। এ ঘটনা নিরন্তর ঘটে চলেছে সারা পৃথিবী জুড়ে। যারাই আজ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদে মুখর হচ্ছে, তারাই এখন দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদী পাঠাচ্ছে।
রাশিয়ার কেজিবি, আমেরিকার সিআইএ, পাকিস্তানের আইএসআই ও চিনের এমএসএস, এরা সব কুখ্যাত গুপ্তচর ও গোয়েন্দা সংস্থা। এরা কেউ শান্তির বাণী প্রচার করে না। করে গুপ্তহত্যা, ঘাতক বাহিনী পাঠিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও উস্কানি মূলক প্ররোচনা দিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত করিয়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোকে করে তোলে অস্থির। দুর্ভাগ্যবশত আমরা আজ এর শিকার।
পরিশেষে বলি, জাতীয়তাবাদের জোয়ারে গা না ভাসিয়ে নিরপেক্ষ অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে নিজেদের আজ দেখতে হবে, জানতে হবে কোথায় রয়েছে আমাদের সঠিক অবস্থান।
এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অভিব্যক্তি তুলে ধরি -
"দলগত প্রবল উত্তেজনা যুদ্ধে বিগ্রহে এবং প্রমোদ-উৎসবে উপযোগী হইতে পারে, ক্ষণিকতাই তাহার প্রকৃতি - কিন্তু স্নেহ প্রেম দয়া ভক্তির পক্ষে সংযত-সমাহিত শান্তিই শোভন এবং অনুকূল, কারণ তাহা অকৃত্রিমতা এবং ধ্রুবতা চাহে, আপনাকে নিঃশেষিত করিতে চাহে না।"
১৫ মে, ২০২৫