সম্পাদকীয়

 

 

স্বাধীনতা দিবস, ২০২৩

ভারতের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ভারতের নাগরিকরা কতখানি স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তার সঠিক মাত্রায় হিসেব করতে বসলে এক নিদারুণ করুণ ছবি ফুটে ওঠে। প্রশ্ন ওঠে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের মধ্যে কি দুস্তর কোন পার্থক্য দৃশ্যমান আছে?

চিরকালীন দারিদ্র, অপুষ্টি, অনাহার, অশিক্ষা, শিশুশ্রম দেশের অধিকাংশ নাগরিকদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছিল যেমন স্বাধীনতার আগে, তেমনই নয় কি দৃশ্যত সেই ছবি স্বাধীনতার পরেও?

যে সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা দেশ স্বাধীন করার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, ফাঁসির মঞ্চে জীবন বলিদান করেছেন, যাবজ্জীবন কারান্তরালে ছিলেন, যাঁদের দ্বীপান্তর হয়েছিল, প্রশ্ন ওঠে তাঁরা কি এই স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন? একটা কথা শোনা যায়, দেশের মানুষ রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পায়নি। প্রকৃত প্রেক্ষিতে অধিকাংশ ভারতীয় নাগরিক আর্থিক, রাজনৈতিক কোনও স্বাধীনতাই পায়নি। সেই অর্থে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ বলা যেতেই পারে প্রায় বিফলে গেছে।

স্বাধীনতা নেই সিবিআই, ইডি, আইটি, এনআইএ'র, এরা সব খাঁচায় বাঁধা তোতাপাখি। স্বাধীনতা নেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের, নির্বাচন কমিশনের, বিচার বিভাগের। সবই কর্তাভজা। তানাহলে সুপ্রীম কোর্টের মুখ্য বিচারপতি অবসরের পরই রাজ্যসভার সাংসদ হয়? এও একপ্রকার পরোক্ষ ঘুষ। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নেই, নেই সাংবাদিকদের স্বাধীনতা। বিরোধী কণ্ঠ হলেই, জেল অথবা গুপ্তহত্যা। গুপ্তহত্যার শিকার এম. এম. কালবুর্গি, গোবিন্দ পানসারে, নরেন্দ্র দাভলকর, গৌরী লঙ্কেশের মতো সমাজকর্মীরা। সাম্প্রতিকতম উদাহরণ সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদের জেলমুক্তি। শুধু বিরোধী কণ্ঠ নয়, বিরোধী দলেরও কোনো স্বাধীনতা নেই। কাশ্মীরে সমস্ত বিরোধী নেতাদের হয় গৃহবন্দী, নয় জেলবন্দী করেছে।

এই পোড়া দেশে বিত্তবানদের তবু কিছু স্বাধীনতা আছে, গরীবদের সেটুকুও নেই। অস্তিত্বের চরম সংকট নিয়ে কোনক্রমে দিনাতিপাত করে চলেছে।

তাই স্বাধীনতার ৭৭তম বছরে এই অঙ্গীকারে স্থির প্রতিজ্ঞ আমাদের থাকতে হবে, যেন সমাজের শেষ সারির শেষ ব্যক্তির কাছে পূর্ণ মাত্রায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা পৌঁছে দেওয়া যায়। আর সেটাই হবে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মহান আত্মত্যাগের প্রতি আজকের দিনে যথার্থ সম্মাননা জ্ঞাপন।

 

১৫ আগস্ট, ২০২৩