ঋতুশ্রেষ্ঠ শরৎ...
প্রকৃতির ঋতুচক্রের অমোঘ নিয়মে বর্ষার পরে আসে শরৎকাল। এই সময়ে বর্ষার আকাশ থেকে কালো মেঘ সরে গিয়ে, দেখা দেয় ঘন নীল আকাশ। সেই নীলাকাশে সতত ভেসে বেড়ায় সাদা সাদা, পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ। সতেজ সবুজ ঘাসের ওপর জমা শিশিরবিন্দুর ওপর ভোরের সূর্যালোক পড়লে মনে হয় প্রকৃতির রূপ যেন ঝলমল করছে, প্রকৃতি যেন হাসছে। এই সময় ফোটে শিউলি, শেফালি, পদ্ম, কাশ ইত্যাদি। কাশ ফুলে মাঠ, প্রান্তর ভরে ওঠে। শিউলি ঝরা প্রাঙ্গনকে মনে হয় সবুজের বুকে সাদা তুলির আঁচড়। শরতের সোনালী রোদ, কাশ ফুলের সমাহার, শিউলি ফুলের সুগন্ধ পরিবেশকে করে তোলে অতীব মনোহর। প্রকৃতি এই সময়ে হয়ে ওঠে স্নিগ্ধ ও মনোরম। দিগন্ত বিস্তৃত প্রান্তরে সোনার ধানের বুকে রৌদ্র ও মেঘ লুকোচুরি খেলে, সেখানে নির্মল স্নিগ্ধ বাতাস দোলা দিয়ে যায়, উঠতে থাকে ঢেউ, সেই ঢেউ আশা ও স্বপ্ন গড়ে দিয়ে যায় কৃষকের প্রাণে, মনে। তাই কবিগুরু বলেছেন - "শরতের রংটি প্রাণের রং। তাহা কাঁচা, বড়ো নরম। রৌদ্রটি কাঁচা সোনা, সবুজটি কচি, নীলটি তাজা। এইজন্য শরৎ নাড়া দেয় আমাদের প্রাণকে..."।
এই ঋতুতে কোথায় যেন বাজতে থাকে আগমনীর সুর। এই সুর আনন্দের, মিলনের, প্রাণের। অন্যদিকে শরৎ বঙ্গজীবনে প্রধান উৎসবের ঋতু, এই ঋতুতে বাঙালির প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা মানে বাঙালির প্রাণের উৎসব, খুশির উৎসব, মহামিলনের উৎসব। সর্বধর্ম, ভাষা, কৃষ্টির উর্দ্ধে বাংলার এক সার্বজনীন উৎসব। এই উৎসব বাংলার রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির এক মেলবন্ধন।
পেঁজা তুলোর মেঘে একাকার ঘন নীল আকাশ, সূর্যকরোজ্জ্বল দিন, স্নিগ্ধ মৃদুমন্দ বাতাস, শিউলি, কাশফুল, সোনার ধানের আগমন, আনন্দ, মিলন, উৎসবের সময় অর্থাৎ শরৎ এসেছে। শরৎ এসেছে, সঙ্গে নিয়ে এসেছে আনন্দঘন দিনের স্বপ্ন। ঘরে ঘরে সেই স্বপ্ন সত্যি হোক।
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩