সারা বসন্ত মোক্ষম ফুল ফুটিয়ে বকুল গাছটা যতটা ক্লান্ত হয়নি, তার ছায়াটাকে কেন্দ্র করে যারা নিত্য আড্ডা দিতে আসে তার চাইতে বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ল।
ঘোর দুর্যোগে, উৎসবের দিনে, কখনও এখানে আড্ডার কামাই নেই। আড্ডার যেকোনো বিষয়ে নানা মুনির নানা মত। সেটাই স্বাভাবিক। এটা একটা সরকারি অফিসের সংরক্ষিত এলাকা। এখানে আড্ডা তৈরি করা বেশ কঠিন কাজ। কিন্তু এই কঠিন কাজটাই এরা অনায়াসে করতে পেরেছে বছরের পর বছর ধরে। কারণ, এরা সকলেই সমাজের কোনো না কোনো অংশের প্রভাবশালী।
বর্ষায় সূচনা। রাজ্যে ভোটের দামামা বেজে উঠলো। এখানের পরিবেশ দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। সরগরম পরিস্থিতি। মেঘনাদ ঠেকের অন্যতম সদস্য। একদিন একটা খবরের রেশ টেনে বললে, "লোকে এত মরে সে হল পিপীলিকার আত্মাহুতি"।
মেঘবাহন মানুষের জীবনের অধিকার, জীবনের অপব্যবহার নিয়ে উচ্চকিত সওয়াল করল। আশপাশের সবাই পক্ষে বিপক্ষে চলে গেছে। মাঝখানে ফুট কেটে আলোচনার গুষ্টির তুষ্টি করে দিল গাঙ্গুপদ। সে বলল, "সামরিকীকরণের সর্বাত্মক প্রয়োগেই ওম্ শান্তি"। ব্যাস, মেঘনাদ ও মেঘবাহন একযোগে আক্রমণ করল তাকে। চিৎকার চেঁচামেচি এমন উচ্চকিত হয়ে উঠল যে বড়ো রাস্তা থেকে কিছু আউটসাইডার ঢুকে পড়লো অফিসের ক্যাম্পাসে। অফিসের দোতলার বারান্দা থেকে দু'এক জন থামতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানালো। কিন্তু কারো কথাতেই কেউ থামলো না। এই তর্কের মধ্যেই যে দুটো স্পষ্ট গ্রুপ হয়েছিল, সেই অনুযায়ী ঠেক দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল।
পরদিন সবাই এলে চূড়ান্ত অসুবিধায় পড়লো পটা। পটার ওখানে একমাত্র চায়ের দোকান। কে কোন খাতের চায়ের পেমেন্ট করবে এই নিয়ে বেশ হয়রানি হল তার।
এভাবেই চলছিল। বর্ষার তুমুল বৃষ্টি হলে ঠেক মুলতুবি, সেদিনের মত। আবার ঝিরঝির বৃষ্টির মধ্যে গাছের সুগন্ধী আবেষ্টনী আশ্রয় দিল। তবে বাইরে রাজনীতির হাওয়া যত উত্তপ্ত হল, প্রতিনিধিরা নিজেদের মত ও অবস্থান জোরের সঙ্গে ঘোষণা করতে ভুলল না।
একদিন হঠাৎ অফিসের পক্ষ থেকে বকুল গাছটিকে কেটে দেওয়া হল। ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে রইলো লতা, পাতা, ফুল, পাখির বাসা, বিনষ্ট দুটো ডিম।
সেদিন বিকেলে সকলে বিরক্ত, ক্রুদ্ধ ও এককাট্টা হল।
এই ঘোর বর্ষায় এমন ফুলের গাছ কে কাটে? কী নিদারুণ শত্রুতা! এর একটা সমুচিত জবাব, প্রতিবাদ যদি সম্ভব হয়।
ন্যাড়া বকুলপীঠে অনেকদিন পরে আবার সবাই মিলেছে। বিভাজিকা তুলে নিলে দুটো দেশ মিলবে ব'লে যেমন বিশ্বাস করেন সুস্থ মানুষেরা।
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।