এই বছর বাংলার ১৪৩০ সালের দুর্গাপুজো হতে চলেছে একটু অন্যরকম। সাধারণত শরৎকালে অর্থাৎ আশ্বিন মাসে দুর্গাপুজো হয়, তাই একে 'শারদোৎসব' বলা হয়। এবার কিন্তু কার্তিক মাসে হতে চলেছে 'দুর্গোৎসব'। এবারের শারদীয়া পুজোকে তাই 'হৈমন্তিক' বলা যায়।
অকালবোধন হলেও দুর্গাপুজো কিন্তু শাস্ত্রের নানান নিয়ম-নিষ্ঠায় আবদ্ধ। দুর্গাপুজোর দিনক্ষন সম্বন্ধে ও শাস্ত্রে বলা আছে। আশ্বিন মাসের ছয় তারিখ থেকে কার্তিক মাসের ছয় তারিখ-এর মধ্যে পুজো শুরু করতে হয়।
মায়ের আগমন-গমনও সপ্তাহের বার হিসাবেই নির্ধারিত হয়। শাস্ত্রে বলা রয়েছে -
"রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া
ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ
গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং
নৌকায়াং বুধ বাসরে।।"
অর্থাৎ রবি ও সোমবার গজের দিন, শনি ও মঙ্গলবার ঘোটকের দিন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার দোলার দিন, বুধবার নৌকার দিন। আগমন বা গমন যাই হোক না কেন।সাধারণত আগমন ধরা হয় সপ্তমীর দিন, গমন ধরা হয় দশমীর দিন। যেমন এ'বছর সপ্তমী পড়েছে শনিবার, তাই দেবীর আগমন ঘোটকে আবার দশমী পড়েছে মঙ্গলবার। মঙ্গলবারও ঘোটকের দিন। তাই এ'বছর দেবীর আগমন-গমন উভয়ই ঘোটকে, যার ফল খুব একটা শুভ বার্তা দেয় না।
এবার আসি নবপত্রিকার কথায়। এটি বাংলার দুর্গাপুজোর এক বিশিষ্ট অঙ্গ। 'নবপত্রিকা' শব্দের আক্ষরিক অর্থ নটি গাছের পাতা, তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নটি গাছ যেমন - কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মানকচু ও ধান। একটি কলাগাছের সঙ্গে বাকি আটটি গাছকে একত্র করে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর রূপ দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার প্রতিমার ডানদিকে দাঁড় করিয়ে পুজো করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকাকে 'কলাবউ' বলা হয়। নবপত্রিকা আসলে দেবী দুর্গার ন'টা বিশেষ রূপের প্রতীক। এই নয় দেবী হলেন ব্রহ্মানী, কালিকা, উমা, কার্তিকী, শিবা, রক্তদন্তিকা, শোকরহিতা, চামুন্ডা ও লক্ষ্মী।
এবার আসি সন্ধিপুজোয়; সন্ধিপুজো সম্বন্ধে শাস্ত্রে বলা আছে, অষ্টমী তিথির শেষ চব্বিশ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম চব্বিশ মিনিটকে বলা হয় সন্ধিক্ষণ, এই সময়ে দেবী চন্ড ও মুন্ড দুই ভয়ঙ্কর অসুরকে নিধন করেন। এই ঘটনাকে মনে রাখতে করা হয় সন্ধিপুজো।
এবার আসি কুমারী পুজোর কথায়। শাস্ত্রমতে কুমারী পুজোর উদ্ভব হয় বানাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে। বর্নিত আছে বানাসুর একসময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বিপন্ন দেবগন মহাকালীর শরণাপন্ন হন, দেবগনের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী পুনর্জন্মে কুমারী রূপে বানাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকে মর্ত্যে কুমারী পুজোর প্রচলন হয়। এইভাবেই প্রচুর নিয়ম আচার রীতিনীতি মেনে পালিত হয় বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গোৎসব। আজ এইটুকুই।
মায়ের কাছে প্রার্থনা মৃন্ময়ী মাগো, চিন্ময়ী হয়ে এসো। আনন্দময়ী মা তোমার আগমন সার্থক হোক। তোমার আশীর্বাদে প্রতিটি ঘর আনন্দে ভরে উঠুক। বলো দুর্গা মাইকি জয়।
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।