মহাভারতের সময়ে অর্থাৎ খ্রীষ্টের ৫ হাজার বছর আগে এই বৃহৎ চরিত্রগুলো আমাদের ধর্মীয় অবস্থানের মধ্যে রাখা হয়। এটা খুব পরিষ্কার, ভালোবাসা দু'রকম। আর দু রকমের নারী ও পুরুষ আছেন। যে পুরুষ সমস্ত রকম দায়িত্ব কর্তব্য, সমাজ মনস্কতা বজায় রেখে শুধুমাত্র একটি নারীতে তার ভালোবাসা আবদ্ধ রাখতে পারেন, আমি মনে করি, তিনি প্রকৃত প্রেমিক। তার মানে এই নয় তিনি অন্য কোনো নারীতে আসক্ত হবেন কিনা বা প্রয়োজনে তার সব করণীয়তা সম্পর্কের নিরীখে তিনি একগামীতা বজায় রাখবেন কিনা সে অন্য প্রশ্ন। এমন হতে পারে তেমন এক পুরুষের জন্য কোনো নারী পাগল, কোনো নারী সত্যিই তাকে ভালবাসে তবে তেমন নারীর সাথে তিনি আসক্তিহীন সঙ্গ করবেন। মানসিকভাবেই তিনি বৃহন্নলা থাকবেন।
আগে তো মুক্ত যৌনতার সমাজ ছিল। যে কোনো নারী যে কোনো পুরুষে সহবাস করতে পারতেন। যে কোনো পুরুষ যে কোনো নারীর সাথে স্বেচ্ছায় সহবাস করতে পারতেন। সমাজ কোনো বাধা দিত না। আমরা জানি ঠিক কবে থেকে সম্পর্কের নিরিখে, বাঁধনের নিরিখে, নিয়মের নিগড় ঢুকে গেছে মানুষে মানুষে। কিন্তু প্রশ্ন উঠলো আমি যাকে ভালোবাসি, যার জন্য আমি জীবনের সব পূর্ণ করার আয়োজন করবো সে কেন অন্যের সাথে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হবে। কেন তার এই যৌনতার ইচ্ছে।
রাধাকে আমি যদি ভালোবাসি সে যে কোনো অবস্থানে, আমি রাধা ছাড়া অন্য কোনো নারীতে আসক্ত হবো না। একই দেহে আমার যৌনতাও থাকবে আবার আমার প্লেটনিকতাও থাকবে।
এটাও উভয়ের জন্য প্রযোজ্য।
কেন কৃষ্ণ সাধুকে শর্ত দিয়েছিলেন যে তোমার লিঙ্গ থাকবে না, লিঙ্গ বা আসক্তি প্রকৃত ভালোবাসার অন্তরায় আবার এক নারীর ক্ষেত্রে অন্তরায় নয়।
যে মানুষ আসক্তিপ্রবণ সে যে কোনো অবস্থায় যে কোনো পরিস্থিতিতে অপ্লেটনিক ভালোবাসার বিশ্বাস ভঙ্গ করতে পারে। এখানে অন্যপক্ষের প্লেটনিকতার কোনো দাম নেই। তোমার নিজস্ব নারীর ইচ্ছে-অনিচ্ছের কোনো দাম নেই। ধরো আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, আমি সেই সীমাবদ্ধতাগুলোকে মেনে নিয়ে জীবনযাপন করব। আমার কাছে যে কোনো পরিস্থিতিতে অন্য কোনো নারী অন্য কোনোভাবে প্রবেশ করতে পারবে না। আমি দায়িত্ব পালন করব, কর্তব্য পালন করব, সামাজিকতা মানবো, সাংসারিক নিয়ম মানবো কিন্তু এক নারী বই অন্য কোনো নারীতে আমি আসক্ত হবো না। এটাই ভালোবাসার চরমতম নিদর্শন।
মানুষ বড় বিচিত্র জীব। তার কোনো কিছুতেই সন্তুষ্টি নেই। সে এক নারীতে মায়ের প্রতিবিম্ব দেখে, এক নারীতে সমস্ত সদগুণ চায়, এক নারীতে তার কাম চরিতার্থতার কথা ভাবে। সেই এক নারী কি সংগ্রামী নারী। সেই এক নারী কি পৃথিবীর সব চাহিদা পূরণ করতে পারে পুরুষের। আসলে তো কোনো মানুষই কারো চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম। এই ধরো আমি, আমি ভালো কবিতা লিখি। এই কবিতা ভালোবেসে অনেক নারী আসবে। অনেক নারী তোমাকে কাছে পেতে চাইবে। অনেক নারী তোমাকে দিয়ে তোমাকেই ব্যবহার করে উপরে উঠতে চাইবে। এবারে ভাবো তোমার ভিতরে আর এক নারী আছে। তোমার ভিতরে আর এক পুরুষ আছে। যে অপেক্ষা জানে। মমত্ব জানে।
কর্তব্যবোধ, কর্মবোধ, অভিজ্ঞানবোধ, প্রাজ্ঞতাবোধ সব আছে। কিন্তু তোমার ভিতরে লিঙ্গহীনতা যদি থাকে তাহলে সেই নারীর যৌন চাহিদা কিভাবে পূরণ করবে। সেই ক্ষেত্রে নারী যদি অন্য কারো সাথে শুয়ে পড়ে দোষ দেবেন?
আমরা সব আপেক্ষিক চরিত্র।
আমাদের এটা আছে, ওটা নেই। আমাদের যৌনতা আছে তো কর্তব্যবোধ নেই। মানবিকতা নেই তো অযৌন।সংসারকে ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা দেওয়ার অবস্থান নেই। এর কোনো একটি কম হলে যে কোনো পুরুষ যে কোনো নারীতে আসক্ত হবেই। রাধা এবং কৃষ্ণ এই দু'য়ের কথা যদি ভাবো তাহলে উভয়ে এই পৃথিবীতে এই নামে বাস্তবিক কোনো চরিত্র থাকতে পারে না। একজন মানুষ সবাইকে খুশি করতে পারে না। সে অর্থ দিয়ে হোক, যৌনতা দিয়ে হোক, চূড়ান্ত ভালবেসে হোক, সব উজাড় করেও হোক, তবু পুরুষ কেন অন্য নারীতে বসত করবে। নারী কেন অন্য পুরুষের পতঙ্গ হবে। আমাদের জ্ঞান আপেক্ষিক। আমাদের সীমাবদ্ধতা আপেক্ষিক। আমাদের চাহিদাও আপেক্ষিক। আমাদের অস্তিত্ব আছে এবং নেই। আমার ভিতরে পুরুষ আছে এবং নেই। বৈপরীত্য আছে কিন্তু আমরা দেবোনা। আমার ভিতর প্রকৃতি আছে। আমার ভিতর 'আমি' আছে কি। এই কি প্রশ্ন ও তার অর্থ আমার প্রজ্ঞতা। আমার অভিজ্ঞান, আমার বৌদ্ধিক মনন, আমার মানবিকতা। আমার সব সব।
মানুষ কোনো অবস্থায় জিতেন্দ্রীয় নয়।
এখানে রাধা বা কৃষ্ণ ভাব কল্পনা করা বাতুলের প্রলাপ।
ধরো তোমার স্বামী খুব ভালো। তবু তুমি একটা সুন্দর গড়নের পুরুষ দেখলে। কোথাও না কোথাও তোমার আসক্তি উঠবেই। কখনও কখনও দুর্বল মুহূর্তে তুমি বা সেই পুরুষ মানসিকভাবে আসক্ত হবেই একে অন্যের প্রতি। সেটা তাদের তাদের যৌন আসক্তি থেকে তার প্রথম কারণ। পরের আসক্তিগুলো এক দীর্ঘমেয়াদী চমৎকারিত্ব। খুব কম মানুষ বোঝে। সম্মান করে। এই সম্মান করা এবং শ্রদ্ধা করাটা শিক্ষণীয়। এটা তার সংস্কার তার মূল্যবোধ তার পরম্পরা তাকে মূল্যায়িত করে।
তুমি যদি কোনো মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হও, যে চাহিদা কোন অনৈতিক নয়, কোন অসম্মানের নয়, সেই অপূর্ণতা যদি কারো থাকে, তাহলে যদি কোনো পুরুষ বা যদি কোনো নারী অন্যতে আসক্ত হয় এই আসক্তি প্রক্রিয়াটা মানাই শ্রেয় শিক্ষা। সংস্কার এবং জীবন।
এখানে পারস্পরিক স্বাধীনতা ও মূল্যবোধ যা মানুষকে খাটো করে না এবং আত্মসম্মান বজায় রাখে।
সচেতন, সমাজ সচেতন, আত্মসচেতন, সম্মান সচেতন মানুষ হিসেবে এই ভার বহন করা আজকের দিনে খুব সহজ নয়।
তাই রাধা ভাব সোনার পাথরবাটি মাত্র।
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।