কবিতা

মাতৃরূপেন সংস্থিতা



রূপালী ঘোষ


শরতের আকাশে আজ কি অপরূপ উন্মাদনা
প্রকৃতির বুকে আবেগ মাখানো রোদ
মাঠ ভরা থোকা থোকা কাশফুল
বাতাসে ভাসছে ঢাকের বাজনা আগমনী সুর
প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে মায়ের মৃন্ময়ী রূপ...
বুকের মধ্যে গুঞ্জন তোলে ফেলে আসা শৈশব-কৈশোর।

মাথার মধ্যে আজও শারদীয়া সুর বাজে
মা দুর্গা আজ বিশ্বের দরবারে।
তবু কেন মাগো চারপাশে আশ্রয়হীন বিরহ যন্ত্রনা
দীর্ঘশ্বাসের পর দীর্ঘশ্বাস ছুঁয়ে যায় - ভেঙে পড়ে সেতু
বন্ধু সুখ আগুন ছড়ায়,
ভবিষ্যৎ মুছে যায় অতীতের কাছে এসে
উদাসীনতা ছুঁয়ে যায় জীবন।
রাত আসে - ঘন কালো রাত।

মাগো, আজ আমার লাবন্যহীন স্তব্ধ আকাশ
হেঁটে চলেছি একা কুয়াশা ঘন অন্ধকারে।
চারপাশে অমানুষের ফিসফাস
পায়ের নিচে চোরাবালী-মাটি খুঁড়ে চলেছে প্রমোটার
আমি শুন্যতা মেপে চলি প্রতিটি নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে
ক্রমশ ঘন হচ্ছে রাত্রির নিবিড় আলাপ।

মন ভালো নেই , ক্ষুধার্ত শূন্যতা আর্তনাদ করে
বাইরে ঝোড়ো হাওয়া জানলা ঝাপটায়
অন্ধকারে হাজার জোনাকি ডানা মেলে ওড়ে
কবি থমকে দাঁড়ায়।

এ কোন পৃথিবী দেখালে আমাকে মাগো
প্রতিদিনের তুচ্ছতাকে আঁকড়ে বেঁচে থাকা
স্বপ্ন থেকে নির্বাসিত, এ জীবন তো কবির জীবন নয়।

কবি তো ছিল, হয়তো আজও আছে দিগন্ত জুড়ে
প্রতিদিনের ধোঁয়া কুয়াশার মতন আলোছায়ার খেলায়।
আমি যে সমস্ত গুমোট সরিয়ে আঁকতে চেয়েছিলাম এক টুকরো রোদ্দুর
লিখতে চেয়েছিলাম শুধু প্রেমের কবিতা।

আজ দেখ সারা আকাশ জুড়ে ঝলমল করছে তোমার চিন্ময়ী রূপ
দূর থেকে ভেসে আসছে সেই পবিত্র মন্ত্র -
"ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ ।।"

আমি একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছি ভোরের আলোয়।
হে জ্যোর্তিময়ী আমাকে আলো দাও আলো
জ্ঞানের আলোয় ভরিয়ে দাও আমার অমৃত জীবন, আমার ইন্দ্রধনুর স্বপ্ন।
মাগো আমাকে নক্ষত্র জয়ের বীজমন্ত্র দাও
ফিরিয়ে দাও আমাকে স্বর্গের অধিকার...
হে মহামায়া সনাতনী তোমার বিচিত্র রূপে তুমি মহা শক্তি
তোমার আগমনে সম্প্রীতির সুর বেজে উঠুক ধরিত্রীতে
তোমার আগমনে সপ্তলোক মেতে উঠুক আনন্দ উৎসবে।

চিত্রঋণঃ 'জয় বাবা ফেলুনাথ' (১৯৭৯)। অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।