হৃদয়ের কোলাহল হঠাৎ শান্ত হয়ে আসে। কোনকিছুই যেনো আর স্পর্শ করে না। মনের মধ্যে দূর থেকে ভেসে আসা প্রবল ঢেউ যেনো নিঃশব্দে বয়ে যায়। নিজেকে কেবল নিরব দর্শক মনে হয়। চোখের সামনে কোন দুর্ঘটনা কিংবা পূর্ণিমার চাঁদ কোন প্রভাব ফেলে না হৃদয়ে। ঘন্টার পর ঘণ্টা দিনের পর দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে চেনা রাস্তাটাকেও বড় অচেনা মনে হয়। কারণ রাস্তায় যার আসার কথা ছিল সে তো আর আসে না। তবুও দাঁড়িয়ে থাকে নীল।
রৌদ্রে নাকি বিষে পুরে ছারখার হতে থাকে শরীর নাকি হৃদয়...! তার জীবনের সব থেকে দামি পোশাক বৃষ্টিতে ভিজে ধুলোয় একাকার হয়ে যায়। সুন্দর মুখশ্রী, সুন্দর হাসি কীভাবে কোথায় যেনো মিলিয়ে যায়। একদিন এই পথিক হয়ে যায় পথ। আর সেই পথে আসে অঞ্জনা।
অঞ্জনা ঠিক চিনতে পারে তার নীলকে। কিন্তু কিছুই বলতে পারে না। কারণ অঞ্জনার পরনে আজ বাহারি রঙের পোশাক। কত কত সমৃদ্ধ এক জীবন নিয়ে হেঁটে চলেছে অঞ্জনা। এভাবে ভালোবাসার আবেদন নিয়ে এই সমাজে নীলের কাছে যেতে নেই। কারণ এই পরিস্থিতিতে এই সমাজে অঞ্জনা শুধু করুণা করে ভিক্ষা দিতে পারে। ভালোবাসা নয়।
গভীর ক্লান্তি আর অবসাদে মিলিয়ে আসে নীলের দুই চোখ। অঞ্জনা চলে যায়। এর মাঝে পৃথিবীতে ঘটে এক বিশাল পরিবর্তন। মানুষ এখন মানুষকে মানুষ ভেবে গণ্য করে। ধনী দরিদ্র এই শব্দ গুলো শুধুই শব্দ হয়ে যায়। এর কোন মূল্য নেই। মানুষ অন্যের জন্য বাঁচতে শেখে। ধনী দরিদ্রের মেল বন্ধন হয় ভালোবাসায়।
গভীর অন্ধকার ভেদ করে সূর্য উঠে। নতুন সকালে সূর্যের কাছে থেকে প্ররণা নিয়ে জ্বলে উঠে নীল। ধ্বংস করতে থাকে সামাজিক সকল জড়তা। সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণ মানুষের মিছিলের নেতৃত্ব দেয় নীল। মিছিলের অপরদিক থেকে কালো শাড়ি পরে এক রমণী হেঁটে আসে। কাঁধে ঝোলানো ভ্যানিটি ব্যাগ। বেনি করা চুল। মিছিলের কাছাকাছি হতেই রমনীর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে এক উজ্জ্বল হাঁসি। যেনো বৃষ্টি শেষে বাগানের শাদা ফুলের পাপড়ি ধরে রেখেছে এক ফোঁটা বৃষ্টির জল। আজ মুখোমুখি নীল আর অঞ্জনা।