পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উত্তরাঞ্চলের শীলাবতী অববাহিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হল গড়বেতা। গড়বেতার অন্তর্গত বগড়ী, হুমগড়, কান্তোড় প্রভৃতি অঞ্চলগুলি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের মধ্যেই অবস্থিত। এর সঙ্গে আছে মঙ্গলাপোতা, দেউলকুন্দ্রা, সোনাদ্বিপা, পাথরা, মালবান্দি, গড়বেড়িয়া প্রভৃতি গ্রামগুলিও। বগড়ী ও হুমগড় অঞ্চলটির ইতিহাস উল্লেখযোগ্য ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস থেকে জানা যায় কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল অচ রাজ্য। বগড়ীতেই ছিল তার রাজধানী। বিখ্যাত কৃষ্ণ রায়ের (কিষ্ট রায়) দেউল শীলাবতীর ধারে আজও আছে। মায়তা গ্রামে তার একটি অংশ আজও বিদ্যমান। এই বগড়ীর দোলমেলা বিখ্যাত একটি মেলা রূপে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিবছর দোল পূর্ণিমার সময় এই মেলা বসে। বগড়ী রাজবাড়িরই রাজ সেনাপতি অচল সিং-এর নেতৃত্বে ইংরেজদের সঙ্গে বিখ্যাত ‘নায়েক বিদ্রোহ’ বা লায়কালি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এই নায়েক বিদ্রোহের কথা বলতে গেলে গড়বেতার গনগনি খুলা বা গনগনি ডাঙার কথা এসে পড়বে। যে গনগনি খুলা বা ডাঙা আজ পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বা গুরুত্বপূর্ণ পিকনিক স্পট হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই গনগনি ডাঙার অবস্থান একেবারে শীলাবতী নদীর তীর ঘেঁষে। স্থানীয় ইতিহাস বলছে - ভয়ঙ্কর অথচ আশ্চর্য সুন্দর এই যে গনগনি ডাঙা তা একসময় শ্বাপদসঙ্কুল ও বিপজ্জনক ছিল। মানুষজন এখানে খুব একটা আসত না। নেকড়ে বা অন্যান্য হিংস্র পশুর আবাস্থল ছিল এই জায়গাটা। শোনা যায় - গড়বেতা হাসপাতালে আগে কোনো মর্গ ছিল না। মানুষ মারা গেলে এই গনগনি খুলাতে ফেলে দিয়ে যাওয়া হত। একসময় বহু নরকঙ্কাল এখানে ঝুলে থাকতে দেখা গেছে।
১৮০০-১৮২০ খ্রিস্টাব্দে গড়বেতা ও চন্দ্রকোনা এলাকায় যে নায়েক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল তাতে যত্রতত্র লায়কালি গড় বা গুপ্তঘাঁটি তৈরি হয়েছিল। এইসব গড় বা গুপ্তঘাঁটিগুলিতে নায়েক বিদ্রোহীরা থাকতো তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। কথিত গড়বেতার এই গনগনি ডাঙাতেই ছিল নায়েক বিদ্রোহীদের প্রধান ঘাঁটি। যা ইংরেজরা বোমার আঘাতে ধ্বংস করে দেয়।
গড়বেতার গনগনিডাঙার কথা বললেই চলে আসে এখানকার দেবী সর্বমঙ্গলার কথা। শীলাবতীর তীরে গড়বেতাতে দেবী সর্বমঙ্গলা এখানে দীর্ঘদিন ধরে পূজিতা হয়ে আসছেন। এখানকার দেবী খুবই জাগ্রত। এই পুজোকে ঘিরেও ছড়িয়ে আছে অজস্র লোককাহিনি যা গড়বেতার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে মহিমান্বিত করেছে। এলাকার মানুষ দেবী সর্বমঙ্গলাকে খুবই ভক্তি-শ্রদ্ধা করে থাকেন। শুধু এলাকার মানুষ নন, বহু দূর-দূরান্ত থেকেও প্রতিদিন অসংখ্য ভক্ত ও পূণ্যার্থী ছুটে আসেন এই সর্বমঙ্গলার মন্দিরে। ভক্তিভরে দেবীর চরণে পুজো দেন তারা।
মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ি।
গড়বেতা থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে শীলাবতী নদীর তীরেই অবস্থান করছে মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ি। ঐতিহ্যের দিক দিয়ে এটিও একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় এই মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ি আসলে ছিল রাজাদের আমোদ-প্রমোদের বাগানবাড়ি। যা বগড়ীর রাজা ছত্রসিংহ নির্মাণ করেছিলেন। প্রচলন করেছিলেন দুর্গাপুজোর। যা মঙ্গলাপোতার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো নামে পরিচিত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এখানে যে ঘটটি আছে তা আসলে গড়বেতার সর্বমঙ্গলার আসল ঘট। যেটি রাজা ছত্রসিংহ নিয়ে চলে এসেছিলেন জোরপূর্বক। সেই দেবীর ঘট আর ফেরত যায়নি। সেই ঘট এখানে পুঁতে রাজবাহাদুর ছত্রসিংহ এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। দেবী সর্বমঙ্গলার ঘট এখানে পোঁতা হয়েছিল বলেই এখানকার নাম হয়েছে মঙ্গলাপোতা।
দেবী সর্বমঙ্গলার ঘট।
ইতিহাস অবশ্য অন্য কথাও বলে। মঙ্গলাপোতার এই রাজবংশের প্রথম রাজা ছিলেন রাজা গজপতি সিংহ। যাঁর রাজত্বকাল ছিল ১৩৯১-১৪২০ খ্রিস্টাব্দ। এই বংশের নবম রাজা যিনি ছিলেন তাঁর নামও রাজা ছত্রসিংহ। এই ছত্রসিংহের রাজত্বকাল ছিল ইং-১৬২২-১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দ। ইনিও মঙ্গলাপোতাতে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করতে পারেন। তা যাই হোক শীলাবতী অববাহিকায় অবস্থিত এই মঙ্গলাপোতাতে সুপ্রাচীন কাল থেকেই রাজবাড়িতে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রাজবাড়ির সে বনেদিয়ানা আজ আর নেই, নেই সে আভিজাত্যও। কালের গর্ভে রাজবাড়ি প্রায় ধ্বংসের মুখে। কিন্তু ঐতিহ্য হিসাবে রয়ে গেছে এখানকার পুজো। মঙ্গলাপোতার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো খুবই বিখ্যাত। বহুদূরদূরান্তের মানুষ একসময় এই পুজো দেখতে ভিড় করতেন। এই পুজোকে ঘিরে মানুষের উত্সাহ ও উদ্দীপনা আর আনন্দের শেষ ছিল না। এখানে ঘটস্থাপন করার ফলে দুর্গাপুজোর সময় যা কিছু হয় তা প্রথমে মঙ্গলাপোতার রাজবাড়ির দুর্গাপুজোতে হয়- তারপর এখানকার তোপধ্বনি শুনে গড়বেতাতে দেবী সর্বমঙ্গলার পুজো হয়, গড়বেতার সর্বমঙ্গলার পুজোর তোপধ্বনি শুনে গোয়ালতোড়ে দেবী সনকা মায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় চারশো তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্গাপুজোর এই নিয়মবিধি চলে আসছে এখানে। যা ঐতিহ্যের পরম্পরাকে রক্ষা করছে। মঙ্গলাপোতা রাজবাড়িতে দেবী সর্বমঙ্গলার আসল ঘট থাকা ছাড়াও এখানে আছে রাজবাড়ির নানান ইতিহাস। যা পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ। আছে রাজবাড়ির ভগ্ন দেউল, লায়কলি আমলের তৈরি সুড়ঙ্গ অর্থাত্ লায়কালি গড়। আছে সেই তরবারি যে তরবারি দিয়ে রাজা সামসের জং বাহাদুর খয়ের মল্লকে পরাজিত করে রাজবাড়ি পুনরুদ্ধার করেন। আছে দেবী সর্বমঙ্গলার ঐতিহাসিক ঘট, কালীবুড়ি এবং রাধাকান্ত জিউ। ১৯৮০ সালে এই রাজবাড়ির অদূরেই জঙ্গল থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল যশোবন্ত সিংহের নাম খোদাই করা তিনটি কামান। দু’টি ব্রোঞ্জের, এবং একটি লোহার। পরে তা কলকাতার প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহশালায় সংরক্ষণের জন্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সামসের জং-এর তরবারি।
মঙ্গলাপোতার এই সব মহান ইতিহাস জানতে হলে এখানে আসতে হবে। বছরের যে কোনও সময়েই আসা যায়। তবে মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ি ভ্রমণের মোক্ষম সময় হল শীতকাল। এই সময় এখানকার মাঠময় শুধু সবুজ আর সবুজ। কপি-আলু-বেগুন-সরষে-গাজর-সিম প্রভৃতি ফসলের রমরমা চাষ এখানে। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে। সবচেয়ে বেশি চাষ আলুর। বিঘার পর বিঘা জমি শুধুই আলুর চাষ। গড়বেতার অর্থনৈতিক ভিতটাই গড়ে উঠেছে আলু চাষের উপরে। যার ফলে এখানে যত্রতত্র নির্মিত হয়েছে আলু রাখার কোল্ড স্টোরেজ বা হিমঘর। মকরসংক্রান্তির সময় এলে আরো উত্তম। এ সময় মঙ্গলপোতা এবং তার আশপাশ জুড়ে বসে নানান উত্সয়ব ও পরব-মেলা। যা একান্তভাবেই গ্রামীণ মানুষের মেলা। মঙ্গলাপোতার অনতিদূরে দোমহনিতে একটি মেলা বসে মকরসংক্রান্তির সকালে খোদ শীলাবতীর চরে। শীলাবতী নদীটি যেখানে দু’ভাগে ভাগ হয়েছে সেখানে বিরাট এক বালুচর আছে সেই চরে মেলাটি হয়। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ মকর স্নান করতে আসে। সেই উপলক্ষে মেলাটি বসে। বেলা বারোটার মধ্যেই মেলা শেষ। স্নান সেরে সবাই বাড়ি ফিরে যায়, মেলাও শেষ হয়ে যায়। তবে সেই মেলার আর ঐতিহ্য নেই বললেই চলে। পরেরদিন অর্থাত্ ১ মাঘ দোমহনির থেকে সামান্য দূরে পাথরাতে বসে পাথরাসিনির মেলা।
পাথরাসিনির এই সেই গাড়ির চাকার ন্যায় দুই পাথর।
শীলাবতীর তীরেই তবে ডাঙাতে এই মেলাটি বসে। একসময় এখানে গভীর জঙ্গল ছিল। নেকড়ে ইত্যাদি ঘোরাঘুরি করত। সামনে লোকালয় ছিল না। দূর থেকে লোকজন এসে পাথরাসিনির পুজো দিত। এখন এই বনদেবীর সামনে জঙ্গল নেই, লোকালয় গড়ে উঠেছে। ১৯৭৮ সালের বন্যায় ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় শিমুলিয়া ও আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষজন উঠে গিয়ে পাথরাতে বসবাস করছে। পাথরাসিনিকে নিয়েও এখানে লোকশ্রুতি আছে। অনেক পাথরের সঙ্গে এখানে গরুর গাড়ির চাকার মতো দুটি বিশাল আকারের পাথর আছে। একে অন্যের উপর জড়িয়ে। জনশ্রুতি আছে, পাথরের চাকা দুটি একে অন্যকে ছুঁয়ে গড়াগড়ি খেতে খেতে শীলাবতীর জলে নামতে যাচ্ছিল। সামনেই কয়েকজন রাখাল বালক গরু চরাচ্ছিল। তাদের মধ্যে একজন দেখতে পায় ওই পাথরের চাকা দুটি গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যাচ্ছে নদীর জলের দিকে। সাহসী সেই রাখাল বালক ছুটে এসে সেই পাথরদুটির উপর দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক কার্য করে ফেলে। আর কী আশ্চর্য! প্রাকৃতিক কার্য করার সঙ্গে সঙ্গেই গড়িয়ে যাওয়া পাথরদুটি নিশ্চল হয়ে পড়ে। যে অবস্থায় যাচ্ছিল সেই অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে যায়। সেই পাথর দুটি আজও বিদ্যমান। তখন থেকেই পাথরাসিনির পুজোর চল হয়েছে বলে ধারণা।
মঙ্গলাপোতার দুর্গামণ্ডপ।
এর পরের দিন ২ মাঘ মঙ্গলাপোতা থেকে সাত এবং পাথরা থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে ১২ নম্বর খড়কুশমা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন মালবান্দি গ্রামে বিখ্যাত এক মেলা তা হোল ‘ভৈরবী মেলা’। এই গ্রামের বুকেই মণ্ডলপাড়া এবং নায়েকপাড়ার মাঝখানে বিরাজ করছেন দেবী ভৈরবী। এই অধিষ্ঠাত্রী দেবী ভৈরবী একজন বনদেবী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এখানে পূজিতা হয়ে আসছেন। দেবী খুব জাগ্রত। বহুদূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছে দেবীর মাহাত্ম্য। প্রতিদিনই এর নিত্যসেবা হয়ে থাকে। তবে পূজা সাধারণত কোনও কুলীন ব্রাহ্মণ বা ভট্টাচার্য করেন না। পূজা করেন এখানকার লায়েক বা নায়েক সম্প্রদায়ের মানুষ। স্থানীয ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রায় দু’শো বছরেরও আগে এই এলাকায় সংঘটিত হয়েছিল ‘নায়েক’ বা ‘লায়কালি বিদ্রোহ’। অনুমান করা হচ্ছে এই নায়েক সম্প্রদায়ের মানুষ ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এই বনদেবী ভৈরবীর আবাহন করেছিলেন। আর তখন থেকেই এই দেবীর আরাধনা ও পূজা হয়ে আসছে।
দেবীর মাহাত্ম্য এতটাই বিখ্যাত যে স্থানীয় মানুষ তো বটেই আশ-পাশের বহু গ্রামের মানুষ দেবীকে খুবই ভক্তি-শ্রদ্ধা ও মান্য করে থাকেন। স্বামী-সংসার-সন্তানদের মঙ্গল কামনায় এলাকার মানুষ এখানে পূজা দিতে আসেন নৈবেদ্য সাজিয়ে। ছেলেমেয়েরা যাতে পরীক্ষায় ভালোভাবে পাশ করে, ভালো ফল করে, গর্ভবতী মেয়ে-বৌমারা যাতে ভালোভাবে সন্তান প্রসব করতে পারে - তারই আশীর্বাদ প্রার্থনা করে পুজো দিয়ে যান পুণ্যার্থীরা। আবার কারও জিনিস চুরি বা খোয়া গেলেও তা ফিরে পাবার প্রত্যাশাতেও অনেকে পুজো দিয়ে যান। আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় - আশেপাশের যত গ্রাম আছে - গাইগরুর বাছুর হলে একুশদিন বা একমাস পর এক ঘটি দুধ দেবীর নামে উত্সবর্গ করে যান প্রায় প্রতিটি পরিবারই। যার ফলে পরিবারের বয়স্ক বা বয়স্কাদের কেউ না কেউ এই দেবী ভৈরবীকে দুধ না খাওয়ানো পর্যন্ত নিজেও ততদিন খান না সেই গরুর দুধ।
এখানে এই মালবান্দি গ্রামে দেবীর পূজা প্রতিদিনও হলেও বছরের যে দিনটিতে খুবই সাড়ম্বরে এবং জাঁকজমকভাবে পূজা দেওয়া হয় তা হোল ২ রা মাঘ। মকর সংক্রান্তির পর এই ২ রা মাঘ এলাকায় একটি বিশেষ দিন। কারণ এই দিনই দেবী ভৈরবীর পূজাকে কেন্দ্র করে বিরাট একটি মেলা বসে। যে মেলার নাম ‘ভৈরবী মেলা’। এই মেলার খ্যাতি বহু দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। মালবান্দি গ্রামের যে একটি বিশেষ পরিচিতি ঘটেছে তা এই ভৈরবী মেলাকে কেন্দ্র করেই।
ভৈরবী মেলা ছাড়াও শীলাবতী অববাহিকায় অবস্থিত মালবান্দি গ্রামটি আরও যে কারণে বিখ্যাত তা হল তার নীলকুঠি। ইংরেজরা যে সত্যিই একদিন এদেশে তাদের শক্ত শিকড় প্রোথিত করেছিল, একেবারে প্রত্যন্ত এলাকাতেও বিস্তার করেছিল তাদের সাম্রাজ্যের জাল - মালবান্দি গ্রামে এলেই তা বোঝা যায়। তাদের তৈরি নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ আজও তার সাক্ষ্য, প্রমাণ দেয়। আজ যেখানে তৈরি হয়েছে মালবান্দি আশুতোষ বিদ্যামন্দির অর্থাত্ মালবান্দি হাইস্কুল তা এককালে ছিল ইংরেজদের নীলকুঠি। নীলকুঠিরই একাংশের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে তার ভিতের উপরই গড়ে তোলা হয়েছে এই হাইস্কুল।
ভাবছেন তো কীভাবে আসা যাবে এখানে। এখানে আসা খুবই সহজ। হাওড়া ও কলকাতা থেকে প্রচুর বাস আসে গড়বেতায়। ট্রেনে যারা আসতে চান তাদের জন্য আছে আরণ্যক এক্সপ্রেস, রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস, পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, রানি শিরোমণি ট্রেন। ট্রেনে এলে গড়বেতার স্টেশনে নামতে হবে। স্টেশন থেকেই অটো ধরে নেওয়া যেতে পারে, কিংবা মারুতি ভাড়া পাওয়া যায়। খুব অল্প খরচেই ঘোরা যাবে মঙ্গলাপোতা সহ এখানকার স্থানগুলি। রাত্রে থাকার জন্য আছে গড়বেতার ‘শ্যামভবন’, ‘আপ্যায়ন’ লজ। কিংবা গড়বেতা থেকে দক্ষিণে ১৪ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রকোণা রোডের ‘গীতাঞ্জলি লজে’ও থাকতে পারেন। তাই দু-একদিনের ভ্রমণ করার যদি কারুর ইচ্ছে থাকে তারা অনায়াসে মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ি ভ্রমণ করেই যেতে পারেন।
আলোকচিত্রঃ লেখক।