বিবিধ

হিমোগ্লোবিন, ক্রিয়েটিনিন আর পিতৃঋণ (শেষাংশ) [মুক্তগদ্য]



অভিজিৎ রায়


।। সাত ।।

অবকাশ নেই, অবসর নেই অথচ এই উদ্দেশ্যহীন লিখে চলার বিলাসিতায় মন ভাসিয়ে মনকে শান্ত রাখার অপচেষ্টায় মগ্ন থাকি। না, ভুল বললাম মগ্ন থাকার অভিনয় করি। মন এতই চঞ্চল যে তাকে শুধু শব্দে বেঁধে রাখা প্রায় অসম্ভব। সে কখনও নীরব স্মৃতির ডানায় চেপে বসে। পাটকাঠির তীরধনুক থেকে নতুন বাড়ির প্লাস্টার জলে ভেজানোর জেদ করা ছেলেটার শান্ত হয়ে, চুপ করে হাসপাতালের বেডের পাশে বসে কথা জড়িয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধের অভিযোগ শোনার অভিযোজনে কি বিন্দুমাত্র অভিনয়-শিক্ষা হয়নি? নিজের ভেতর থেকে নিজেকে বের করে এনে নার্সিং হোমের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমি টাইমমেশিনে চড়ে আর কুড়ি বছর এগিয়ে যাই। মুহূর্তে পিছিয়ে আসি। মনে হয়, বাবাও কি হাসপাতালের বিছানা থেকে উঠে এসে আমার জায়গায় দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে মনে মনে? মাত্র এগারো বছরে বাবাকে হারানো আমার বাবা কি সত্যিই মনে মনে এরকম একটা দৃশ্যে অভিনয় করতে চাইছে এখন? প্রশ্নগুলো বাবার চোখে ঘুম হয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। ঘুম শব্দটির সঙ্গে স্বপ্ন শব্দটা অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পৃক্ত। বাবাকে ঘুমাতে দেখে স্বপ্ন নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। রাতে তো বটেই, দিনেরও বেশিরভাগ সময় বাবা ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে হাসপাতালে। এই ঘুমন্ত সময়ের স্বপ্নগুলোকে যদি শব্দে এঁকে রাখা যেত তাহলে এক অদ্ভুত অনুভূতির সাক্ষী হয়ে থাকা যেত। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাবার শরীরে ডাক্তার বা নার্সরা যা যা অত্যাচার করেছে বলে আমার কাছে অভিযোগ এলো ভিজিটিং আওয়ারসে সেগুলোই কি স্বপ্নে আসে বাবার? নাকি বাড়ির বাগান নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে বাবা হারিয়ে যায় উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জঙ্গলের রাস্তায় যেখানে সংসারের দায় মেটাতে সদ্য সাবালক বাবাকে যেতে হয়েছিল হিন্দুস্থান কন্সট্রাকশনের কর্মী হিসাবে। জয়ন্তীর ভাঙা ব্রিজের কবিতা আমি অনেক লিখেছি শুধু ঐ ব্রিজ তৈরির সময় আমার বাবাও একজন শ্রমিক ছিলেন বলে। এক শহরের গ্রাম হয়ে যাবার গল্প লুকিয়ে আছে জয়ন্তীতে। আজ সেই গল্পের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কি বাবার জীবনে? জানি না। জানতে ইচ্ছেও করছে না। শুধুমাত্র হিমোগ্লোবিন, ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা জানার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা নার্সিং হোমে বসে থাকার পর ডাক্তার এলেন আর জানালেন দিনের শেষে ম্যাচ এখনও ফিফটি ফিফটি। ইশ্বর মুচকি হেসে বললেন, 'বাপি বাড়ি যা। কাল আবার অপেক্ষার ম্যাচ খেলতে আসতে হবে তোকে।' আমি বাড়ি ফিরলাম উদ্দেশ্যহীন অবসর, অবকাশকে পাশ কাটিয়ে মনকে শান্ত রেখে।

।। আট ।।

অসংখ্য নল, তার আর যন্ত্রের ব্যবহারে ক্লান্ত বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে। ভিজিটিং আওয়ারসে কথা হল না। ঘুমন্ত মানুষকে দেখে যাওয়া কি দেখা হল বলা চলে? রক্তের স্যাম্পেল নিতে সারা গায়ে ফুটো, ব্যান্ডেড। তবে কি ধমণী খুঁজে পায়নি নার্স? ঘুমের ওষুধ দিয়ে শান্ত করে রাখা আছে? উত্তর কিছু মেলেনি।

নিরুত্তর ঠান্ডা ঘর। অল্প কিছু গোঙানির সাড়া পাওয়া গেল। গায়ে হাত দেওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে জেনে চুপ করে বেরিয়ে আসি।

কত কী বলার আছে তবু চুপ করে আছে জগত সংসার। আকাশে মেঘের ঘনঘটা। শরতের আকাশ ঢলে পড়েছে বর্ষার দিকে। দিনের আলো অনেকক্ষণ হল মুখ লুকিয়েছে অন্ধকারে। এই কি সংকেত তবে? ঈশ্বর জানেন। নাস্তিক কখন, কবে আস্তিক হয়েছে? ঈশ্বর জানেন। মা এখনও কিছুই জানেন না। একা একা নিজের কল্পনা আর ভরসার জাল বিস্তার করে ভবিষ্যতের সংসার সাজাচ্ছেন হয়তো বা। অথবা নিজেকে প্রস্তুত করছেন একাকী বনবাসের জন্য! এই মুহূর্তে আমরা দিগন্ত পৃথিবীর চোখে। দূর থেকে দেখে মনে হবে আকাশ ও মাটি মিশে আছে, কিন্তু নেই। মা ও ছেলের দিগন্তরেখা বেশ স্পষ্ট মা ও ছেলের কাছে। বাবাকে কেন্দ্র করে দুজনের জগতে এখন ঘন কালো অন্ধকার মেঘ। বাইরের পৃথিবী বড় নিরুত্তাপ। যে যার চাপ সামলে নিতে নিতে নিজেদের দায় ও দায়িত্ব গুছিয়ে রাখছে। সময়ের গতি কমে এসেছে আমার আর মায়ের জীবনে। বাবার কাছে সময় স্থির। একগুঁয়ে স্থির সময়কে বুঝি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ঠেলতে চাইছে আমার বাবা। এক জাদুবাস্তবতার কবিতার দিকে এগোচ্ছে তিনটে জীবন খুবই শান্তিতে। পার্থিব জীবনকে তাচ্ছিল্য করার ফলভোগ করতে হবে জেনেও এই মুহূর্তে বাবার সাইকেলের পিছনের ক্যারিয়ারে বসে পিছনে থাকা জিপগাড়িটাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি আমি হাতের ইশারায় আর মনে মনে চেঁচিয়ে বলছি বাবাকে - আরও জোরে বাবা, আর একটু জোরে, তোমাকে জিততে হবে, হবেই।

।। নয় ।।

বহিরাগত রক্ত প্রবেশ করানোর ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়েছে। কমেছে রক্তচাপ জনিত সমস্যা। বাড়ি ছেড়ে আসার সময় যা ছিল ১০৮/৫৩, এখন তা ১২২/৭৬। ভাল লক্ষণ এও যে রক্তচাপ এখন কিছুটা স্থিতধী। তবু এত কিছু ভালোর মধ্যেও স্থায়ী ক্ষত রেখে যাবে ক্রিয়েটিনিন একথা প্রায় নিশ্চিত। অনিশ্চিত জীবনের এই নিশ্চিন্ততাটুকুই বা কম কীসে?

উনিশ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরতে হিন্দুস্থান কনস্ট্রাকশনের কাজে যোগ দেওয়া আমার বাবা প্রায় দশ বছর বাইরে বাইরে কাজ করে নিশ্চিন্ততার জন্য বেশি মাইনের বেসরকারি চাকরি ছেড়ে সরকারি দপ্তরে অনেক কম মাইনের চাকরিতে ঢুকে পড়ে কি নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন? আমাকে কোনওদিন সে কথা শেয়ার করেননি। লিপিকা স্কুলের মাঠ, এখন অবশ্য মাঠের কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই, আমাদের বাড়ি থেকে পরিস্কার দেখা যেত। সন্ধে ছটায় ছিল আমার বাড়ি ফেরার সময় আর বাবা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে পাঁচিলের এ পাশ থেকে কড়া নজর রাখতেন মাঠের উপর। বন্ধুরা ইশারা করে জানাতেই এক ছুটে বাড়ি। আবার সেই বাবার সঙ্গেই সাইকেলে করে শহর চেনার সহজপাঠ। ক্লাস ফোরে পড়াকালীন, তখনও দাদুর বাড়ি নতুন বাজারে থাকি, মিষ্টি কিনতে গিয়ে ২টাকা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এই অপরাধে মিষ্টি খাওয়ার নিষেধ ছিল এক মাস। এত কড়া শাসনে বড় হওয়ায়, এখন বাউন্ডুলে হবার বাসনা তাড়া দেয় কিনা জানি না। ক্লাস ওয়ান থেকেই যা পেয়েছি বাবার কাছ থেকে, সবই শর্তসাপেক্ষে। পরীক্ষায় ভাল রেজাল্টের শর্তে জুটতো কাঙ্ক্ষিত উপহার। ক্লাস ফোরে পেয়েছিলাম ক্যারামবোর্ড আর মাধ্যমিকে পকেট রেডিও।

ক্রিয়েটিনিনের লেভেল না কমায় বাবার খাদ্যতালিকার চূড়ান্ত পরিবর্তন হবে এবং যা মেনে নেওয়া কখনোই সম্ভব নয় বাবার পক্ষে। এখান থেকে মুক্তি পাবার পর সে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্টের জন্য কি বাবা অপেক্ষা করে আছে?

।। দশ ।।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর ভিজিটিং আওয়ারসের গণ্ডগোল সামলে কোনোক্রমে এইচ.ডি.ইউ-এর সামনে পৌঁছালাম পাঁচমিনিট আগে। বেডের সামনে গিয়ে হতাশ হতে হল আবারও। মুখ হাঁ করে এক্কেবারে ঘুমে আচ্ছন্ন বাবা। ডাকাডাকি করে লাভ হল না। কোনও সাড়া পেলাম না। দায়িত্ব প্রাপ্ত নার্সের কাছে খবর নিয়ে জানলাম গতরাতে খুবই তনছট করায় হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে। নল, চ্যানেল সব নাকি খুলে ফেলছিলেন বাবা! ভয় জিনিসটা বাবার বরাবরই কম। হার্টের অসুখ ধরা পড়ার পর কিছুটা মৃত্যুভয় নজরে পড়েছে। একসময়ের চেইন স্মোকার স্মোকিং বন্ধ করেছেন ডাক্তারের এক কথায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। করোনা জনিত লকডাউন ঘোষণার পাঁচদিন আগে কলকাতা গিয়েছিলাম হার্টের ডাক্তার গৌতম সরকারকে দেখাতে। উনি দেখে বলেছিলেন, শুধু হার্ট নয় বাবা, আপনার লান্সের অবস্থাও খুব খারাপ। সিগারেট বন্ধ না করলে আমি কিন্তু ওষুধ দেব না। কলকাতা থেকে বাড়ি ফিরে টেবিলঘড়ির মাথায় রাখা সিগারেটের প্যাকেট বাড়ির বাইরে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। আর, খাননি বলেই জানি। সিগারেট প্রসঙ্গে আমার সঙ্গে বাবার একটা খুব মধুর স্মৃতি আছে। প্রথম স্টেজ নাটকে আমার একটা সিগারেট খাবার দৃশ্য ছিল। আমার বইয়ের তাকে লুকানো ছিল পানামা সিগারেটের প্যাকেট। কলেজের পকেটমানির পয়সায় ওটুকুই কেনার সামর্থ্য ছিল। বাবা একদিন বাড়ি ফেরার পর জিজ্ঞেস করল, এটা এখানে কেন? আমি খুব স্মার্ট উত্তর দিয়েছিলাম, নাটকের রিহার্সালে লাগছে। বাবা কিছু বলেননি। নাটকের দিন নাটক দেখতে গিয়েছিলেন বাবা, মা। ফিরে এসেছিলেন আমার আগেই। স্বভাবতই মেকাপ তুলে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছিল আমার। ফিরে এসেই চোখে পড়ল বাবার চারমিনারের উপর আমার পানামার প্যাকেট। আমি অবাক হয়ে বোকার মতো জিজ্ঞেস করলাম, তুমি ওটা আমার ওখান থেকে নিলে নাকি কিনলে? বাবা উত্তর দিয়েছিলেন, মঞ্চে তো দেখলাম ওস্তাদের মতো টান দিচ্ছিস, আর নিশ্চয় রিহার্সালের জন্য সিগারেট লাগবে না?

তারপর কত নাটক, কত রিহার্সাল পার করে দিলাম সিগারেট ছাড়া, হিসাব রাখিনি। এখন বাবার রিহার্সাল চলছে কিডনির উপযুক্ত ডায়েটের। বাড়ি ফিরে নিশ্চয় নতুন করে রিহার্সাল দিতে হবে না! যদিও বাড়ি ফেরার তারিখ বা সময় হাতে পাইনি এখনও।

।। এগারো ।।

সম্পর্কের রসায়ন - শব্দবন্ধের সাথে আমরা পরিচিত হলেও পাঠ্যসূচিতে সম্পর্কের ইতিহাস ও ভূগোল যোগ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। কারোর সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সেই ইতিহাস জানলে ভূগোল সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। ভূগোল মানে শরীর। পৃথিবীর শরীর নয়, এখানে আলোচ্য সম্পর্কের শরীর। রসায়ন কাজে লাগে সম্পর্কের মন জানতে আর ভূগোল প্রয়োজন সম্পর্কের শরীর জানতে।

শরীর ব্যাপারটা ঘৃণার নাকি ভালবাসার তা বয়সমাফিক পরিবর্তনশীল। নিজের শরীরকে ভালবাসার ব্যাপারটা বয়স বাড়ার সাথে সাথে খুবই বেড়ে যায়। এখন সম্পর্কের মন সবসময়ই এমন ভাব দেখায় যে, সম্পর্কের শরীর ব্যাপারটা একেবারেই তাচ্ছিল্যের। আর, এখান থেকেই সম্পর্কের এক মেরুর শীতলতা অন্য মেরুর উষ্ণতাকে গ্রাস করে।

সম্পর্কের উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরুর এই ভূগোল আবার সম্পর্কের ইতিহাসকে অস্বীকার করে এগোতে পারে না। সম্পর্কের শরীরকে তাচ্ছিল্য করে বয়স বাড়লে সম্পর্কের মন মরে যায়। আবার, উল্টোটাও যে হয় তার প্রমাণ আমাদের সকলেরই চোখের সামনে আছে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, চোখ থাকলেই হবে না, দেখার চোখ থাকতে হবে। যে চোখ অভিজ্ঞতা আর বোধের জলে ধুয়ে প্রস্তুত রাখতে হয় প্রতিদিন।

কে কাকে কতটা ভালবাসে এর চেয়েও জীবনে মূল্যবান কে কার সাথে তার সম্পর্কের শরীর ও মনকে তাচ্ছিল্য না করে জীবনকে বয়ে নিয়ে এসেছে এতদিন।

নার্সিং হোমের করিডোরে বসে এসব লেখার কোনও উদ্দেশ্য আছে কিনা তা আমি জানি না। কিন্তু বাড়ি থেকে নার্সিংহোম আর নার্সিংহোম থেকে বাড়ির পথ যে আলাদা তা আজ সম্পর্কের রসায়ন, ভূগোল, ইতিহাস সবকিছুতেই লিপিবদ্ধ হয়ে থাকছে।

।। বারো ।।

জীবনযুদ্ধ অর্থাৎ কিনা জীবনের দায় থেকে উদ্ধার পাবার লড়াই কী অদ্ভুতভাবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সমগ্র জীবনটাকেই দায়ের ঘেরাটোপে বন্দী করে ফেলে! আর সম্পর্কের জালে জড়িয়ে আরও কিছু জীবন কি শুধুমাত্র দায়িত্বের ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে পড়ে না?

প্রশ্নগুলো ছুঁড়ে দিয়ে উত্তর খোঁজার কাজ থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাইছি এমন নয় বরং নিজের খুঁজে পাওয়া উত্তরটাকে মিলিয় নিতে চাইছি বাকিদের সাথে। ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলোকে নৈর্ব্যক্তিক পরিসরে যাচাই করে বেঁচে থাকার মধ্যেও তো এক সম্পর্কের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়! যে পুনরাবৃত্তি কালের ভিতর সম্পর্কের ভাষা, পরিভাষা, সংকেত এক নতুন রসায়ন তৈরি করে। যার সমীকরণে কৃষ্ণগহবরের সৃষ্টি রহস্য গোপন করে রাখার দায়িত্ব গুহালিপির মতন লেখা থাকে অভিমানের কালিতে।

এইসব সমীকরণ লিখিত হবার মুহূর্তে সম্পর্কের দায় ও দায়িত্ব প্রশ্ন ও উত্তরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে জীবনের এক অদ্ভুত নাট্যরূপ তৈরি করে। আর আমরা দর্শকের, নাট্যকারের, অভিনেতা, অভিনেত্রীর সম্পর্কের রসায়নে হাবুডুবু খাচ্ছি। জীবনযুদ্ধ শুধুমাত্র জীবিকাযুদ্ধে পরিণত করে সম্পর্কের দায় ও দায়িত্বকে গুলিয়ে ফেলছি বা ফেলতে বাধ্য হচ্ছি। জীবন উপভোগ করতে গিয়ে সম্পর্ক উপভোগ করতে ভুলে যাওয়া বেঁচে থাকাগুলো ভুলভুলাইয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

আইসিইউ থেকে এইচডিইউ আর এইচডিইউ থেকে জেনারেল বেডের পরিচয়পত্র হাতে সেকেন্ড ফ্লোর থেকে ফোর্থ ফ্লোরের মধ্যে ঘুরপাক খেতে খেতে আমি দায় আর দায়িত্বগুলোকে গুছিয়ে রাখছি। অগোছালো হয়ে যাওয়া সম্পর্ক আর গোছানো সম্ভব নয় বুঝে, সম্পর্কের বেঁচে থাকাগুলোকে গুছিয়ে নিচ্ছি পিতৃঋণ মেটানোর তাগিদে।

(সমাপ্ত)

চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।