অন্তর-মহল
আমাদের ভিতরের মহলে একটা স্থায়িত্বের ধর্ম আছে- সেখানে জমা করবার জায়গা। এইজন্যে সেখানে এমন কিছু নিয়ে গিয়ে ফেলা ঠিক নয়, যা জমাবার জিনিস নয়। তা নিয়ে গেলে বিকারকে স্থায়ী করে তোলা হয়। মৃতদেহকে কেউ অন্তঃপুরের ভান্ডারে তুলে রাখে না, তাকে বাইরে মাটিতে জলে বা আগুনেই সমর্পণ করে দিতে হয়।
অন্তরতর
প্রতিদিন এসো, অন্তরে এসো। সেখানে সব কোলাহল নিরস্ত হোক, কোনো আঘাত না পৌঁছাক, কোনো মলিনতা না স্পর্শ করুক। সেখানে ক্রোধকে পালন করো না, ক্ষোভকে প্রশ্রয় দিয়ো না। বাসনাগুলিকে হাওয়া দিয়ে জ্বালিয়ে রেখো না, কেন না সেখানেই তোমার তীর্থ, তোমার দেবমন্দির। সেখানে যদি একটু নিরালা না থাকে তবে জগতে কোথাও নিরালা পাবে না, সেখানে যদি কলুষ পোষণ করো তবে জগতে তোমার সমস্ত পুণ্যস্থানের ফটক বন্ধ।
অন্তরতর শান্তি
মানুষের জগতে যে গান উঠেছে সে কি একটি তারের সংগীত। কত যুদ্ধবিগ্রহ বিরোধ সংগ্রামের কত বিচিত্র তার সেখানে ঝংকৃত হচ্ছে, তার বৈচিত্রের সীমা নেই। কিন্তু এই সমস্ত বৈচিত্রের মধ্যে, বিরোধের মধ্যে শান্তির সুর বাজছে। মানুষের চারিদিকে ষড়রিপুর হানাহানি, তান্ডবলীলা চলছে; কিন্তু এত বেসুর এসে কই এই একটি সুরকে তো লুপ্ত করতে পারলে না। সকল বিরোধী, সকল বিপ্লব, সকল যুদ্ধবিগ্রহের ভিতর দিয়ে এই সুর বেজে উঠল: শান্তং শিবং অদ্বৈতং।
অন্তরের বাধা- বাইরের বাধা
জাহাজের খোলের ভিতরটায় তখন জল বোঝাই হয়েছে তখনই জাহাজের বাইরেকার জলের মার সাংঘাতিক হয়ে ওঠে। ভিতরকার জলটা তেমন দৃশ্যমান নয়, তার চালচলন তেমন প্রচন্ড নয়, সে মারে ভারের দ্বারা, আঘাতের দ্বারা নয়, এই জন্যে বাইরের ঢেউয়ের চড়-চাপড়ের ওপরেই দোষারোপ করে তৃপ্তি লাভ করা যেতে পারে; কিন্তু হয় মরতে হবে নয় একদিন এই সুবুদ্ধি মাথায় আসবে যে, আসল মরণ ঐ ভিতরকার জলের মধ্যে, ওটাকে যত শীঘ্র পারা যায় সেঁচে ফেলতেই হবে। কাজটা যদি দুঃসাধ্য ও হয় তবু এ কথা মনে রাখা চাই যে, সমুদ্র সেঁচে ফেলা সহজ নয়, তার থেকে সহজ, খোলের জল সেঁচে ফেলা। এ কথা মনে রাখতে হবে, বাইরে বাধা বিঘ্ন বিরুদ্ধতা চিরদিনই থাকবে, থাকলে ভালো বই মন্দ নয়- কিন্তু অন্তরে বাধা থাকলেই বাইরের বাধা ভয়ংকর হয়ে ওঠে। এইজন্যে ভিক্ষার দিকে না তাকিয়ে সাধনার দিকে তাকাতে হবে, তাতে অপমানও যাবে, ফলও পাব।
সৌজন্যেঃ অনুপ বন্দোপাধ্যায়
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।