"সবার রঙে রঙ মেলাতে হবে..." - কবিগুরুর এই বাণীটুকু নিয়ে এখন কিছু মানুষ একে তামাশায় পরিণত করেছে। সব রঙ যেন এখন ব্যক্তিগত। কারো কোনো রঙ চূড়ান্ত পছন্দ হলেও নেওয়া যায় না। সব সময় দাগিয়ে দেওয়ার ভয় থাকে।
আমাদের ভাবনায়, কল্পনায় কত রঙ থাকে। কল্পনায় রঙীন জাল বুনি। ভালোবাসায় রঙ ভরিয়ে দিতে চাই। প্রকৃতির সবটুকু রূপ-রস-গন্ধ শুষে নিতে চাই, আমাদের সুখ, আনন্দগুলো রঙে চুবিয়ে সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।
রবিঠাকুরের কথায়, "আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা..." - সে খেলাও আজ প্রতি মুহূর্তে ভুলতে বসেছি আমরা। স্বার্থপর লোভী মানুষ এখন খেলার অন্য অর্থ খোঁজে।খেলাতেও রঙ খুঁজে ফেরে।
আহা রঙ - সকালবেলায় শিশির টুপটুপ যে ঘাসপাতা সবুজের সমারোহ, তা চোখের আরাম। সবুজও তো কত রকমের। সমরেশ বসুর লেখা 'দেখি নাই ফিরে' উপন্যাসে বিকাশ ভট্টাচার্যের আঁকা ছবিতে কত রকমের সবুজের বর্ণনা পড়েছি। সবুজও নানা রকম হয় - আমরা কখনও ভেবেছি? ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজ ইঁট, কয়লা গুঁড়ো করে, নানারকম ফুল, পাতা, গাছের বাকল বেটে যে রঙ তৈরী করেছিলেন, তার খোঁজ কেউ রাখে? লালমাটির দেশে উদাসী বাউল বাতাস, গেরুয়া ধূলো, তার উদারতা, বাউলের একতারায় যে সমন্বয়ের সুরের রঙ, তার কথা কি কেউ ভাবে? নীলের যে আকাশ ছোঁয়া বিশালতা, কত আশ্রয়, লাল হৃদয়ের রঙ, গোলাপের রঙ, রক্তের রঙ তা কি কখনও আলাদাভাবে কারো ব্যক্তিগত হতে পারে? এ যে বড়ো ভাঙনের ইঙ্গিত।
একসময় এক রাজনীতিবিদ বলেছিলেন "জমি কি কারো বাপের হে, জমি হইল দাপের।" আজ যদি কেউ বলে "রঙ কি কারো বাপের হে, রঙ হইল দাপের" মেনে নেওয়া কি সম্ভব? রঙ সকলের। আমাদের রঙ আমরা আগলে রাখব আমাদের মনে, আমাদের হৃদয়ে। এ শুধু আমাদের নয়, সকল বিশ্বলোকের আনন্দের উপাচার। আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় -
"আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া,
বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া।"