কলকাতার অদুরে অবস্থিত দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়ি মন্দির মায়ের পুজোর জন্য বিখ্যাত সেটা আমরা সবাই জানি। তবে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে তিনটে কালীপুজো খুব বড় করে পালন করা হয়।
তার মধ্যে একটা হল ফলহারিনি কালীপুজো আরেকটা হল কার্তিক মাসের দীপান্বিতা কালীপুজো আর তৃতীয়টি হলো মাঘ চতুর্দশীতে রটন্তী কালীপুজো।
রটন্তী কালীপুজোয় গঙ্গা আরতি, ভক্তিগীতি ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানে মধ্য দিয়ে প্রতিবারের মতন এবারও সেজে উঠেছিল দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী মন্দির।
২০ জানুয়ারি, ২০২৩ শুক্রবার ছিল রটন্তী কালীপুজো। তবে শুক্রবার না শনিবার সেটি নিয়ে দেখা দিয়েছিল মতভেদ।
প্রথাগতভাবে সব কালীপুজো অমাবস্যা তিথিতে হলেও, রটন্তী কালীপুজো কিন্তু চতুর্দশী তিথিতে হয়। এ’বছর এই পুজোর তিথি শুক্রবার সকাল ৯টা ৫৯ মিনিট থেকে শুরু হয়ে ২১ জানুয়ারি ভোর ৬টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত ছিল।
রটন্তী কথাটির অর্থ হচ্ছে রটে যাওয়া। মায়ের মহিমার কথা চারিদিকে রটেছিল আর সেই থেকে এই পুজোর উত্পত্তি বলে এর নাম হয়েছে। দিনটি শাক্ত এবং বৈষ্ণব উভয় ধর্মের লোকেদের কাছেই খুব বিশেষ দিন। এই দিনেই দক্ষিণেশ্বরে একইসঙ্গে কৃষ্ণ ও কালীর পুজো করা হয়।
রটন্তী কালীপুজোর এই দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে চতুর্দশী তিথি। যে তিথিতে ভগবান শিবের পুজো করা হয় তাই শুধু বৈষ্ণব বা শাক্ত নয়, শৈব উপাসনায় রত যারা, তাঁদের কাছেও এই দিনটির বিশেষ মহিমা রয়েছে। দক্ষিণেশ্বরে রটন্তী কালীপুজো বিশেষভাবে পালন করা হয়ে থাকে।
বিশ্বাস অনুযায়ী যাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি রয়েছে, যারা কোনও কারণে দাম্পত্য সুখ থেকে বঞ্চিত, তাঁরা রটন্তী কালীপুজোর দিন মায়ের আরাধনা করে বিশেষভাবে সফলতা পেতে পারেন।
এই দিনে দক্ষিণেশ্বরে বহু মানুষের সমাগম হয়। বহু মানুষ দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় পূণ্যস্নান করতে আসেন। শুধু দক্ষিণেশ্বর নয় কালীঘাট ও অন্যান্য জায়গাতেও বিভিন্ন মন্দিরের প্রতিমা এদিন সেজে ওঠে বিশেষ সাজে।
অপরদিকে, শুক্রবার, রটন্তী কালীপুজোর দিন, মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গাপাড়ে মহাসমারোহে গঙ্গা আরতির আয়োজন করা হয়েছিল। গোধূলিবেলায় অনুষ্ঠিত এই আরতির নাম মাতৃবন্দনা। পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ১৩ থেকে ১৪ জনের একটি দল নির্দিষ্ট পোশাকে, মন্ত্রোচ্চারণ করেন। ‘উন্মেষা’ নামে এই দলের মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই চলে আরতি-মাতৃবন্দনা। এর পাশাপাশি সন্ধেবেলায়, মন্দির প্রাঙ্গণেই ভক্তিগীতি ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অছি-পরিষদের সভাপতি কুশল চৌধুরী বলেন, ‘‘মন্দিরে গঙ্গারতি দীর্ঘদিন ধরে হয়ে থাকে। গোধূলিলগ্নে হয়। আমরা এই আরতিকেই বর্ধিত আকারে মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে সুসম্পন্ন করার ব্যবস্থা নিয়েছি। ১৬০ বছরের সুদীর্ঘ যাত্রাপথে তিনটে কালীপুজো হয়। দীপান্বিতা, ফলহারিনী আর রটন্তী। আমরা মাতৃবন্দনা করব। করোনা পরিস্থিতির আগে এই ধরনের অনুষ্ঠান হয়েছিল, আবার এখন থেকে চালু হচ্ছে। গঙ্গার বান চলে যাওয়ার পরপরই পুজো শুরু হবে।’’
শুক্রবার গোধূলিবেলায় গঙ্গা আরতির পর, সন্ধে সাড়ে ৭টা থেকে, মন্দির প্রাঙ্গণেই ভক্তিগীতি ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এরপর রাত সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয় রটন্তী কালীপুজো। তবে, ভক্তদের জন্য রাত ১১টা অবধি মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বার খোলা ছিল। আমি এ’বছর এই পুজোতে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে খুব পুণ্যবান বলে মনে করছি।
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।