ঘুম থেকে উঠতে আজ একটু দেরি হ'ল শ্রীতমার। আজ রবিবার। রান্নার বেশি ঝামেলা নেই। মাংস পেলে ছেলে, মেয়ে, কর্তা, কারোরই আর কিছু লাগেনা। হালকা মেজাজে ফ্রেশ হয়ে এসে মোবাইলটা নিতে গিয়েই ভ্রূ কুঁচকে গেল শ্রীতমার। এখানেই তো রাতে চার্জে বসিয়ে রেখেছিল, গেল কোথায়! নিশ্চয়ই বাবিন নিয়ে ঘাঁটছে। মাথাটা ঝপ করে গরম হয়ে গেল।
- "বাবিন, এই বাবিন আমার মোবাইলটা তুই আবার নিয়েছিস?..." রণচণ্ডী হয়ে ছেলের ঘরে ঢুকে মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল। ছেলে এখনো ঘুমোচ্ছে। তবে গেল কোথায়?
একরাশ অস্বস্তি নিয়ে চায়ের জল চাপাল। চা করে কর্তাকে দিয়ে বলল - "আমার মোবাইলটা দেখেছো গো?"
- "না, আমি দেখিনি।" কাগজ থেকে মুখ সরালো না তাপস। শ্রীতমা বেজার মুখে বাজারের থলিটা বরের হাতে গুঁজে দিয়ে রসুন ছাড়াতে বসলো। সকাল সন্ধ্যা বন্ধুদের সাথে একটু মোবাইলে চ্যাট না করলে দিনটা কেমন পানসে হয়ে যায় - কোথায় যেতে পারে মোবাইলটা? রান্না ঘরের তাকে, ফ্রিজে সব জায়গায় খোঁজা হয়ে গেছে। কোথাও নেই।
* * * *
বাজারের থলেটা উপুড় করে আঁতকে উঠলো শ্রী।
এতো বাজার! মাংস তো আছেই, সঙ্গে লাফানো ট্যাংরা আর এতোগুলো কুঁচো চিংড়ি, সাতাশ-আঠাশটা তো হবেই। মাথাটা জ্বলে গেল শ্রীর।
- "কি ব্যাপার এতো মাছ নিয়ে এসেছ। একটা দিনও কি জিরোতে দেবে না?"
- "তুমি ট্যাংরা মাছ ভালোবাসো তাই...।"
- "হুম, আর ঐ গুচ্ছের চিংড়ি?"
- "ওটা দিয়ে জমিয়ে পকোড়া করো। সন্ধ্যেবেলা বিমল আর সবুও আসবে। কতদিন খাইনি তোমার হাতের চিংড়ির পকোড়া।"
- "তোমার ওই তাসুড়ে বন্ধুদের জন্য এখন পকোড়া বানাতে হবে... একে আমার মন ভালো নেই...।"
- "ও সন্ধ্যেবেলা ভালো হয়ে যাবে।"
- "মানে?"
- "মানে কিছু না। এসো আমি বেছে দিচ্ছি চিংড়িগুলো।"
* * * *
অতঃপর সান্ধ্য মজলিস ভালোই জমে উঠলো পকোড়া আর কফি সহযোগে। সকলের প্রশংসায় শ্রীতমার মনটাও নরম হয়ে এলো...
সবু বললো, "বৌদি আজ কিন্তু আপনার গান না শুনে যাবোই না..."
- "গান তো গাইতে পারতাম, কিন্তু সকাল থেকে আমার মোবাইলটা খুঁজে পাচ্ছিনা, কোথায় যে রাখলাম... আজকাল তো জানেনই সব ওতেই থাকে...।"
তাপস তড়াক করে চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল, "এখুনি এনে দিচ্ছি...।"
একটু পরেই মোবাইল এনে তাপস শ্রীতমার হাতে দিল। শ্রীর মুখ দিয়ে কথা সরলো না। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
- "তুমি আমার মোবাইল লুকিয়ে রেখেছিলে?"
- "কি করবো শ্রী, তোমাকে তো আর আগের মতো করে পাই না... সারাক্ষণ তো ওই ফোনে নিয়েই ব্যস্ত থাকো। আজ সবাই মিলে একসাথে বসে গল্প করে তোমার ভালো লাগেনি, বলো?"
- "তা লেগেছে।"
- "তবে বৌদি এবার একটা গান হয়ে যাক...।"
শ্রীতমাও ফুরফুরে মনে গান ধরলো...
"মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো
দোলে মন দোলে অকারণ হরষে...।"