গল্প ও অণুগল্প

শুভ নারীদিবস



অন্তরা রায়


(১)

বাড়ির দিকে দ্রুত পা চালায় দীপ্তি। বাবা বলেছে, আজও ঘরে ঢুকতে দেরি হলে পা ভেঙে দেবে। অথচ দাদা দিব্বি রোজ মাঝরাতে গিলে ফিরছে।

হ্যাঁ, এটা ঠিক, সোনার দোকানের আয় ওর এখন খারাপ নয়। দোকান থেকে সোনা মেরে গতমাসে মায়ের গলার একটা চেনও বানিয়ে দিয়েছিল। দাদার মোটা টাকা আর গয়নায় ওর দোষগুলো অনেক আগেই চাপা পড়ে গেছে।

মাধ্যমিক কোনোমতে পেরোলেও উচ্চ মাধ্যমিকে দু'বছর পরপর ব্যাক পেয়ে এসেছে। অথচ দীপ্তি পড়াশোনা করেনি তেমন নয়। সংসারে মায়ের সাথে খেটে, টিউশন পড়িয়ে ভোররাত অবধি নিজের পড়া করে গিয়েছিলো।

নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করা ছাড়া আর কিই বা করার ছিল!

বুদ্ধিটা দেয় কাছের বন্ধু সিঞ্চিনী।

শুধু চোরের মতো এভাবে নার্সের ট্রেনিং নেওয়াটা খুব চাপ। সিঞ্চিনী বলেছিল, এটাই শেষ নয় রে, নিজের মাটি নিজেকে শক্ত করতে হবে। কিন্তু ভয় হয়। প্রতিদিন বাবার হাত থেকে বাঁচলে তো বাকি ভবিষ্যৎ।


(২)

শ্বশুরের ওষুধ কিনতে প্রমিলার সাথে নীতার দেখা।

‘কি রে, কেমন আছিস? ইশ-শ, তোকে তো চেনাই যায়না। চুলটার কি হাল করেছিস?’

সেই স্কুলে শেষ দেখা।

পুরোনো হাসির সাথে অমিল মুখটা নীতাকে জড়িয়ে ধরে মাঝরাস্তায়। প্রমিলা একপিঠ চুল কেটে কবেই ছোট করে ফেলেছে। ভাস্করের বড্ড রাগ। রোজ তিলকে তাল করবেই। তার জের পরে প্রমিলার একপিঠ চুলে।

‘বাবান হওয়ার পর চুলগুলো খুব উঠে যাচ্ছিলো রে, তাই’।


(৩)

‘বৌদি, ঠোঁটের পাশে রক্ত কেন?’

‘মালাদি, কালকে বাসনে এঁটো ছিলো। দেখে বাসন ধুয়ে রেখো।’

পিন্টু এলিফ্যান্ট ঠিক রাখতে গিয়েও ভুল হয়ে যায় রোজ কিছু না কিছু। কাল প্রভাসের থালাতেই সাবানের দাগটা রয়ে গিয়েছিলো।

মা-বাবার আদুরে মেয়ের তাই রোজ শিক্ষা দেওয়ার ট্রেনিং চলে।


(৪)

‘অনেক পড়াশোনা হয়েছে, আর এসব আমি টানতে পারবো না। কার কি চাহিদা সে পূরণ করার দায় আমার নাকি? গোটা একটা মানুষ পুষবো, সেটাও শেষ নয়। তার আবার ইচ্ছে অনিচ্ছাও দেখতে হবে?’

বিয়ের আগে বাবা হাত জোড় করে বারবার বলেছিলো,

মেয়েটাকে শুধু কটা বছর পড়িও বাবা। ওর আর কিছু চাওয়ার নেই।


(৫)

মাসের এই ক'টাদিন পেটের ব্যাথাটা খুব বেশি হয়।

কই ক'মাস আগেও তো এমন ছিলনা। কোমর, পা যেন অবশ হয়ে আসে।

‘এসব ছেনালপনা ছাড়। শালি প্রতিমাসে এক ন্যাকামি।’

ভীষণ ঘেন্না লাগে মেঘনয়নার। নিজের শরীরের ওপর, নিজের ওপর। শাওয়ার খুলে দাঁড়িয়ে থাকে অনেক অনেক সময়।


(৬)

‘কোমর দুলিয়ে তো পরপুরুষের মনোরঞ্জন করিস। নাচের স্যারের সাথে যে চক্কর ছিলো কই তোর মা-বাবা তো বলেনি?’

দু'কান চেপে ধরে অহনা।

গুরুজী যে মা, বাবার পরের স্থান। সে জ্ঞানটুকু থাকতে গেলে যে ন্যুনতম শিক্ষা লাগে।


(৭)

এই গরমে হাইনেক পড়েছো, গরম লাগছে না?

না রে, অফিস যাতায়াতে পিঠটা যেন বেশি রোদে পুড়ে যাচ্ছে। ট্যান উঠতে চায়না।

কাল শরীরটা হঠাৎ খারাপ লাগায় জোর করে আদিত্য বাড়ি অবধি এগিয়ে দিলো। এর থেকে মাথা ঘুরে মাঝ রাস্তায় পড়ে থাকলে ছেলের চোখে অন্তত পারমিতার সম্মানটুকু বাঁচতো।

কোনো মানুষ এভাবে বেল্ট দিয়ে ঘরের বউকে মারতে পারে?