কবিতা

নিজেকে পাল্টাও



রূপালী ঘোষ


বৃদ্ধ জীবনবাবু কফি হাউসের এক কোনে বসেছিলেন।
পাশের টেবিলে চলছিল বুদ্ধিজীবীদের উত্তেজিত আলোচনা।
আজ কফির কাপ যাকে নিয়ে উত্তাল
সেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের হিরোকে চিনতেন জীবনবাবু - খুব কাছ থেকে।
সুন্দর ফুটফুটে ছেলেটি পড়াশোনা ছাড়া কিছু বুঝত না
চোখে ছিল অনেক স্বপ্ন
আজ সে খুনি আসামী - আন্তর্জাতিক স্মাগলার।
যাদের অলিখিত আশ্রয় রাজনীতি।
কেন এমন হয় বলতে পারেন?

ছোটবেলা থেকেই সে
দেখেছিল,
মদ্যপ বাবাকে দিনের পর দিন মা'র উপর অত্যাচার করতে -
প্রতিবাদ ছিল না কোথাও।
শিশুমনে রক্তক্ষরণ হতো প্রতি মুহূর্তে -
মা'র অত্যাচার সহ্য করতে পারেনি,
একদিন আকস্মিক ছেলেটির হাতে খুন হয়ে গেল তার বাবা।
রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়ে উঠল।
নাবালক ছিল বলে তার কোনো শাস্তি হল না।
সমাজ এতদিনে নড়েচড়ে বসল...
স্কুল থেকে বিতাড়িত হল
সে চিৎকার করে বলেছিল - "আমি খুন করতে চাইনি"
তার আকুতি কেউ শুনল না।
সোশ্যাল মিডিয়া শুধু ঘটনার টিআরপি তুলল,
রাজনীতি সুযোগ খুঁজল,
রাতারাতি সে হয়ে উঠল 'হিরো মাস্তান'।
তার মা'কেও ছাড়ল না সমাজ
আত্মহত্যা করতে বাধ্য করল।

আজ সে স্বাধীন, আজ সে ভয়ঙ্কর।
হিংস্র রাজপথ তাকে কান পেতে খোঁজে।
সে আজ ছুটে চলেছে সন্ত্রাসকে সঙ্গী করে
এক দেশ থেকে অন্য দেশে।

উত্তেজিত জীবনবাবু টেবিল চাপড়ে বললেন,
বলতে পারেন কেন আমরা একটা শিশুকে দিতে পারিনা সুস্থ সমাজ?
কেন হীরকদের পথ বদলে যায়, পাল্টে যায় জীবন?
উচিত ছিল না কি তাকে ভালোবাসার আশ্রয় দেওয়া?
উচিত ছিল না কি তার কাঁধে হাত রেখে বিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়া?

কে এই প্রশ্নের উত্তর দেবে আমার জানা নেই -
মনে হলো জীবনবাবু সপাটে চাবুক মারলেন এই সমাজের ওপর।
চোখ মুছতে মুছতে তখনও বলে চলেছেন,
এ পৃথিবী হোক সুস্থ এক সমাজ,
মানচিত্র হোক মনুষ্যত্ব।
আগে তোমরা নিজেদের পাল্টাও।

ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেলেন স্বদেশী আন্দোলনের নেতা জীবনবাবু।
সবাই স্তম্ভিত...
বাতাসে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো একটাই শব্দ -
নিজেকে পাল্টাও, নিজেকে পাল্টাও।