প্রবন্ধ

জানি দুশমন (প্রথম পর্ব) [ধারাবাহিক]



সুবল দত্ত


বিষয়ে যাওয়ার আগেঃ

কোভিড ঊনিশ বিষানু মানব জীবনে আসার পর একটি প্রত্যক্ষ অনুভব হল। এমন অদৃশ্য শত্রুও হয়, যাকে অনুভবে বোঝা যায় কোথায় কোথায় সে থাকতে পারে। সে চায় সমগ্র মানবজাতির সংক্রমন, বিনাশ। অনুমানে সচেতনতায় আন্দাজে শরীরে ও মনে তার আক্রান্ত প্রতিহত করার কৌশল শিখে নিল মানুষ। মানুষ শিখল হাওয়ার সাথে পাল্লাবাজি করে বাঁচার কৌশল। সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে পদে পদে গা বাঁচিয়ে চলতে হয়। মানুষ আবার করে শিখলো জলের উপযোগিতা ও ব্যবহার। হাওয়াকে ছেঁকে পরিশ্রুত করে ফুসফুসে ভরে নিতে মাস্ক পরা অভ্যেস করল। সমাজে থেকেও সামাজিক দূরত্ব রেখে মানসিক ও মানবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে শিখলো। এই একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিজ্ঞান এতটাই উন্নতির শিখরে, এই নতুন শত্রুটির বিষয়ে নাড়ি নক্ষত্র আমরা জেনে ফেলেছি। সঙ্গে সঙ্গে এও জানতে পারছি আমাদের কার শরীরে কেমন প্রতিরোধ ক্ষমতা। এখন বেশিরভাগ মানুষকে বীজানু ও বিষানুর তফাতটা বুঝিয়ে দিতে হয় না, জেনে গেছে। গুটি বসন্ত একটি ভাইরাস। তার টিকা আবিষ্কার হয়ে গেছে এবং সেই ভাইরাসটি বলা যায় পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত। কিন্তু প্রায় চল্লিশ বছর আগে একটি মারণ বিষানু এইচ আই ভি আবিষ্কার হওয়ার পরও যেমন এখনো কোনো প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কার হয়নি, তেমনি এই ভাইরাসটিরও ভ্যাকসিন আবিষ্কার দুরস্ত। কিন্তু এডসের মত পেণ্ডেমিক অসুখ থেকে বাঁচতে মানুষ নিজে নিজেই তার সামাজিক চরিত্র শুধরে নিয়েছে। সেই সঙ্গে সামাজিক সুস্থতা এসেছে। ওই রোগটি থেকে বাঁচার নিয়ম পালনে অনেকগুলি বীজানুঘটিত যৌনরোগ প্রায় লোপ পেতে বসেছে। মানুষের উগ্র যৌনক্ষুধা অনেক কম হয়েছে। অনেক সংযত হয়েছে মানুষ। ঠিক তেমনিই এই কোভিড ভাইরাসটিও মানুষকে অনেকটাই সংযত চরিত্রের হতে সাহায্য করছে এবং করবেও। আর সত্যিই আশ্চর্য রকমভাবে দেখা যাচ্ছে অনেকরকম বীজানু ঘটিত রোগের প্রভাব ইদানিং কমে গেছে। অনেক উৎকণ্ঠা জনিত রোগ লকডাউনে থাকায় নিরাময় হয়েছে।

এ'তো গেল বিষানুর কথা। যেগুলির প্রতিষেধকের আজ দ্রুত আবিষ্কার হলো। মানুষ সত্বর এগুলো থেকে নিষ্কৃতি পাবেই। কিন্তু এই রোগগুলো এসে এসে জানান দিয়ে যাচ্ছে মানব প্রজাতিকে পৃথিবীতে থাকতে গেলে নিঃস্বার্থ সতর্ক সামাজিক হয়ে থাকতে হবে। কিন্তু ব্যবসায়িক সূত্রে মুনাফাখোরেরা রাষ্ট্রীয় স্তরে হোক বা অন্তরাষ্ট্রীয় স্তরে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য বা শক্তি প্রদর্শনের জন্যই হোক, বিষ অনু এবং বিষানু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার প্রবণতা আরো বেশি বেড়েছে। একথা অস্বীকার করা যায় না। এসব সৃষ্টির ক্রমবিকাশের উদ্দেশ্য হনন করার লোভ। মানুষের দৈহিক ও মানসিক ক্রমবিকাশ বিঘ্নিত করার মারন ইচ্ছা। উদাহরণ স্বরূপ জৈবিক অস্ত্র। উন্নতশীল দেশে অর্বুদ অর্বুদ মুদ্রা খরচ করে বিশাল পরীক্ষাগারে বিষানু তৈরি বা তাকে পোষ মানানোর উপায় খোঁজা কিসের উদ্দেশ্যে? এমন এমন মারক গ্যাস আবিষ্কার করা হয়েছে এবং অনুন্নত দেশগুলির সামূহিক মানুষের উপর প্রয়োগ হয়েছে যার নজির অতীতে আছে এবং যেগুলি মানবতা বিরুদ্ধ। ইউরেনিয়ামের খোঁজ ও তার ধ্বংসাত্মক পারমানবিক শক্তির আবিষ্কার সেই ধনতান্ত্রিক দেশেই হয়েছে ও কেবল মাত্র তার সাম্রাজ্য বিস্তারের লোভের জন্য এ খবর আমাদের সবার জ্ঞাত। এই সর্বনাশা বিষ ধাতুটি নিষ্প্রাণ। তার কোনও বোধ নেই। মানুষই তাকে বিধ্বংসের কাজে লাগিয়েছে এবং লাগানোর পরিকল্পনায় বিশ্বজুড়ে ঢাক পেটাচ্ছে। পরমাণু অস্ত্রে সেই দেশ কত শক্তিশালী। আবার পরে মানুষই তাকে সৃজনাত্মক কাজে লাগিয়েছে ও লাগাচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে মানুষ নিজেদের অসুরক্ষিত মনে করে বা নিজেদের শক্তিশালী প্রমানিত করতে অনেক রাসায়নিক বিষ অনু আবিষ্কার করেছে। যেমনটি এখন চীনদেশে কোভিডকে নিয়ে হচ্ছে বলে অনেক দেশের সন্দেহ। তানাহলে চীনদেশে ভাইরলোজির এত বিশাল ল্যাবরেটরিতে আমেরিকা অর্বুদ টাকা লাগায় কেন? মোটকথা সেই ট্রেন্ড সমানে চলছে।

(ক্রমশ)