গল্প ও অণুগল্প

কমলাকান্ত মার্জার সংবাদ (অণুগল্প)



সঞ্জীব চক্রবর্তী


কমলাকান্ত আফিমের ঘোরে অর্ধনিমীলিত লোচনে মার্জারকে বললো, "শোনো মার্জার, আমার উপার্জন বাড়লে প্রকারান্তরে তোমারই লাভ। তুমি ভাবছো, আমার অবস্থা কী তাতে ফিরবে? তুমি এই যে প্রাচীরে প্রাচীরে, দোরে দোরে ছুঁক ছুঁক করে বেড়াও, এর কোনো পরিবর্তন হবে কী? আমি তোমাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, একশ্রেণির মানুষের প্রভূত ধনবৃদ্ধি হলে তার লাভ চুয়ে চুয়ে তোমার কাছেও পৌঁছে যাবে। অতএব তুমি ও তোমাদের অসংগঠিত বেড়াল সম্প্রদায় আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন করো।"

মার্জার কমলাকান্তের কথায় অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে তাকিয়ে হাই তুলে বলল, "শোনো ভাই, দেড়শো বছর পর তোমার সাথে আবার একই পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করতে আমার বিরক্তি লাগছে। তবুও আর একবার তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিই, সামাজিক ধনবৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধনবৃদ্ধি।এই ধনবৃদ্ধির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো প্রকার লাভ আমার বা আমাদের কাছ অব্দি পৌঁছাবে না। আমি যেমন কেবল উদরপূর্তির কথাই ভাবি, শুধু সেইটুকু ভাবলে তুমি তথৈবচ হয়ে ঘুমাতে। কারণ তোমার বর্তমান প্রাপ্তি পর্যাপ্ত। কিন্তু তবু তুমি দাবি করছো।

এই দাবি মিটলে যে উদ্বৃত্ত সম্পদ তোমার হাতে আসবে তা দিয়ে তুমি পাড়ায় পাড়ায় মারোয়ারি সদাব্রতের মতো বিড়ালসেবা করে বেড়াবে, এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। তুমি ঐ উদ্বৃত্ত সম্পদ ব্যাঙ্কে রাখবে, সোনা কিনবে, স্টক মার্কেটে খাটাবে, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ক্রয় করবে, নয়তো বছরের মধ্যে একাধিকবার ভ্রমণ করবে। এই উল্লিখিত কোনো ক্ষেত্রের লাভই চুয়ে চুয়ে আমাদের কাছে আসে না।"

কমলাকান্ত যথেষ্ট ক্রুদ্ধ হয়ে বিড়ালের গুষ্টি তুলে ক'টা গাল দিয়ে বলে, "মূর্খ, বেকার বিড়াল, যোগ্যতা থাকলে তুমিও কী আর দাবি না করে ছাড়তে? তুমিও আর উচ্ছিষ্টে সন্তুষ্ট থাকতে না।"

বেশ খোঁচা খেয়ে মার্জার বললো, "শোনো কমলাকান্ত তুমি মনুষ্য, কিন্তু আমি বিড়াল, আমি আরো সাত প্রজন্ম বিড়ালই থাকবো। কেন আমি বেড়ালই হলাম, বহু চেষ্টাতেও মনুষ্য হতে পারলাম না, সে এক দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস। এর জন্য তোমায় ইতিহাস, নৃতত্ত্ব ও অর্থনৈতিক বিষয়ে কিঞ্চিৎ জ্ঞানগর্ভ চিন্তা করতে হবে। আমি ভেবেছিলাম তুমি জ্ঞানী, কিন্তু তুমি আমায় শ্রেণি তুলে কুৎসিৎ ব্যক্তি-আক্রমণ করার ফলে তোমার বিষয়ে আমার মনে সংশয় জেগে উঠলো কমলাকান্ত। তোমার দুগ্ধ আর খাব কিনা সে বিষয়ে ভাবতে হবে।"

একথা বলে মার্জার প্রস্থান করলো। কমলাকান্ত পিছু ডেকেছিল কিনা সেটা বিড়াল বা কমলাকান্ত কারো বিশেষ স্মরণে নেই। এর পর থেকে কমলাকান্তের গৃহে ইঁদুরের উৎপাত বেড়েই চলেছে।