গল্প ও অণুগল্প

অমিমাংসিত চিঠি (অণুগল্প)



মনিরুজ্জামান মনির (বাংলাদেশ)


কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা, অনেক প্রশ্নের উত্তর চাওয়া, না বলা কথার কথা চিঠির আর্তনাদ। যার উত্তর আজও দেওয়া হয়নি; দেওয়া হবেওনা কোনো কাল। দরিদ্রতা যেখানে ফনা তুলে দাঁড়ায় লেখা-পড়া সেখানে বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে চাচার বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় মশিয়ার। সেখান থেকে তার লেখা-পড়া আরম্ভ হয়। তাকে ভর্তি করা হয় মহেশপুর বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সময়টা ১৯৯৬ সাল মশিয়ার তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। কিছুদিন যেতে না যেতেই সকল শিক্ষক শিক্ষিকার মন জয় করে নেয় সে। লেখাপড়া, খেলাধুলা, সব জায়গায় ছিল তার পদার্পণ। এমনি করে দিন গড়িয়ে সপ্তাহ আসে সপ্তাহ গড়িয়ে মাস। ইদানিং একটি মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়, গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। মেয়েটি মহেশপুর বালিকা বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী, নাম আছমা। তারা একই গ্রামের থেকে আসে স্কুলে। ৩রা বৈশাখ গ্রামের মধ্যে লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়। সেদিন স্কুলে যাওয়া হল না। চাচার ভয়ে বাড়িতেও আসতে সাহস হল না, দুপুরে নাওয়া-খাওয়াও হল না। সন্ধায় আছমাদের বাড়িতে গিয়ে মশিয়ার সব ঘটনা বললো আছমা'কে; ইতিমধ্যে তাদের সম্পর্ক গাঢ় রূপ ধারণ করেছে। যা ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার শুরু বলা চলে।

রাতে খাওয়ার পর একই নকশিকাঁথার নিচে দু'জন। রাতভর কারোর ঘুম হলো কিনা তা জানেনা দু'জনের কেউই। রাতভর কুঁকড়ে দু'জন দু'প্রান্তে যেন মাঝে স্রোতস্বিনী নদী। দু'পাড়ে দুজন - সবাই সবার যেন বহুকালের অচেনা। শ্রাবণ মাস সমাগত। আকাশে কালো মেঘেদের আনয়ন, যখন-তখন ঝুপঝাপ করে বৃষ্টি ঝরে। মাটির সড়কে জল ও মাটির মিলনে ছ্যাঁত ছ্যাঁতে কাদা। কাদা-মাটি-জল মাড়িয়ে দু'জন স্কুলে যায়। কখনও একই ছাতির তলে কখনও বা বইগুলো বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচিয়ে দু'জনেই ভিজে।

এমনি করে দিন গড়িয়ে সপ্তাহ আসে সপ্তাহ গড়িয়ে মাস। আচমকা একদিন সন্ধ্যায় মশিয়ারের বাবাকে দেখা গেল তার ভা'য়ের বাড়িতে, কাউকে কিছুই না জানিয়ে মশিয়ার'কে বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিছু বুঝে ওঠবার আগেই সব শেষ হয়ে যায়; এমনই হয়... হয়ত নিয়তি বা বিধির বিধান! তাকে ভর্তি করা লক্ষ্মণপুর স্কুল এন্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে। মেয়েটির কোন খবর পাওয়া গেলো না আর। মশিয়ার বর্তমানে ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত আর সেদিনের সেই মেঘবালিকা আছমা জলিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। ২০০৬ সালের শেষাংশে ডাকহরকরা একটা চিঠি বয়ে আনে মশিয়ারের নামে। যে চিঠি পড়ে জন্মের মত কেঁদেছিল মশিয়ার, কপালে কষাঘাত করে বলেছিল এটাই ভালোবাসা না পাওয়ার পূর্ণতা। বুঝতে পারেনি কখনও, সে বিস্ময়ে হতবাক এখনও...