কথাসাহিত্যিক অনিল ঘড়াই অবিভক্ত বিহারের (এখন ঝাড়খন্ড) চক্রধরপুরে গিয়েছিলেন ১৯৮৭ সালে। দীর্ঘ ১০ বছর চক্রধরপুরে থেকে, তিনি ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের উচ্চপদে প্রমোশন নিয়ে খড়গপুরে আসেন। দীর্ঘ ১৫ বছর খড়গপুরেই কাটিয়েছেন তিনি। সেই সময় খড়গপুরের রেল শহরকে নিয়ে অনেক গল্প, উপন্যাস রচনা করেছিলেন। রেল কোয়ার্টার, আউট হাউস, রেল বস্তি, স্টেশন, মেদিনীপুরের লালমাটির পথ, পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ডের ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার গল্পের সম্পদ। গায়ে লেগে থাকে মাটির গন্ধ। মাটি হলো মা।
তাঁর গল্পের চরিত্ররা বলে, "মাটিকে কখনও দুঃখ দিবি না... মা কাঁদলে ছেলেও কাঁদবে।" 'বারুদভূমি' গল্পগ্রন্থ খড়গপুরের পটভূমিকায় লেখা। 'পরগাছা' গল্পে প্রধান চরিত্র পদ্মা খড়গপুরে ফিরে আসতে চায় তার স্বামীর কাছে। তার স্বামী অনেক বছর আগে চলে এসেছিল চাঁদমারি হাসপাতালের সাফাইকর্মী হিসেবে। সে আবার বিয়ে করেছে, তাও পদ্মা দেখা করার জন্য খড়গপুরের কৌশল্যা মোড়ে নেমে ভাবে চাঁদমারি হসপিটাল যাবে কিন্তু তার স্বামী কি তাকে মেনে নেবে? 'গ্যাংম্যান' গল্পে খড়গপুরের রেল ইয়ার্ড, বস্তির বর্ণনা আছে। গ্যাংম্যান যখন রেল ইয়ার্ডে লাইনের ধারে পাহারা দিচ্ছে, তখন তার নিজের ছেলেই লাইনের ধারে এসেছে চুরি করতে, মশার কামড়ে ঘুম ভাঙতে দেখছে তারই ছেলে, ট্রাক নিয়ে রেলের লোহালক্কর চুরি করছে। আর 'আকাশ মাটির খেলা' গল্পে লেখক লেখেন সারারাত খড়গপুরের প্ল্যাটফর্মে বিশ্রাম নিল জনা পঞ্চাশেক খেটে খাওয়া মানুষ।
এভাবেই দীর্ঘ ১৫ বছর খড়গপুরের রেল শহর, অলিগলি, রাস্তার মোড়ের দীর্ঘ ইতিহাস উঠে এসেছে তাঁর লেখনীতে। 'গ্যাংম্যান' গল্পের ঈশ্বরের অসহায়তা শেষ পর্যন্ত এমন অন্তহীন যন্ত্রণা ঢুকিয়ে দেয় বুকের ভেতর, গল্প পড়ে কার্তিককে শাস্তি দিতে না পারার জন্য হাত কামড়াতে হয়। মাত্র ১০টা রেল স্লিপারে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ঈশ্বর। লেখকের রচনাশৈলী আমাদের কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।
খড়গপুরে আসার দু'বছর পরেও আবার চাকরির স্থান বদল হল অন্য অফিসে। এখানে ২৪ ঘন্টা ডিউটি। শরীরে ডায়াবেটিস, প্রেশার, কিডনির সমস্যা সবকিছু নিয়ে লেখার সময় সংকীর্ণ হয়ে গেল। সে সময় গল্প কিংবা বড় আকারের উপন্যাস লেখার সময় তাঁর হল না। তখন কাগজের উপর কবিতার আকারে যেসব লেখা বেরিয়ে এসেছিল, তার থেকে একটা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হল।
'বাতাসের স্বরলিপি' প্রকাশ করল কলকাতার 'ভাষা ও সাহিত্য' পাবলিকেশন। খড়গপুরে থাকার সময় হিন্দি ভাষাতেও বেরিয়েছে, চারটে গল্প সংকলন 'টিকলি', 'ডঙ্ক', 'ফুলপরী', 'চৌকিদার'।
২০০৩-এ দে'জ পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হলো 'Stories of the down trodden', 'বনবাসী' উপন্যাসের মানুষগুলো সংস্কারের হাত ধরে পথ হাঁটে, বাঁচে-মরে, পাথুরে মাটির আদি সন্তানেরা হাঁড়িয়া খায়, দারু পান করে, মুরগার লড়াই-এ জীবন কাটায়।
'মুকুলের গন্ধ' উপন্যাসে মুকুলের গন্ধের মতো সংস্কারের গন্ধ রয়েছে। নিচু জাতের মানুষ উঁচু জাতের ঘরে জল খায় না। নেশাচ্ছন্ন মানুষগুলো জীবনের যন্ত্রণার বীজ বপন, উথালপাথাল অস্থিরতা, অনুতিক্রম পাগল নেশা, তাদের সার্বিক চেতনাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। নারী অবমাননা যেন ভারতের চিরন্তন, হীন সংস্কার সংগীত। 'বিপরীত যুদ্ধের মহড়া' উপন্যাসের পটভূমি পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলা হলেও এখানেও সংস্কার ছায়া ফেলে, মন্ত্র, গুনিন, মাদুলি, তাবিজ, জলপড়া, তেলপড়া প্রভৃতির মায়া কাটাতে পারে না মানুষ।
অনিল ঘড়াইয়ের ছোটগল্পের দু'একটি ধারা ও গতিপ্রকৃতি আলোচনা করলে, এই সত্যতা সহজেই আমাদের হৃদয় ও বুদ্ধিবৃত্তিকে স্পষ্ট আভাসিত করে।
অনিল ঘড়াই কলকাতার নগরকেন্দ্রিক কথাসাহিত্যের কারিগরদের মতো ইনিয়েবিনিয়ে, ফ্ল্যাটবাড়ির কেচ্ছাকাহিনী, বারবণিতাদের পল্লীলীলা, এলিটদের বর্ণময় জীবনপ্রণালী, তাদের দুঃখ নিয়ে গল্প লেখেন নি।
গ্রাম বাংলার বা শহরতলির খেটে খাওয়া মানুষ, ভূমিপুত্রদের সহজ সরল অকপট দারিদ্র্য-জর্জর অশ্রুসিক্ত জীবনের ছোট ছোট বাস্তব কাহিনী তাঁর রচনায় দেখা যায়। তাদের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম, বেদনা ও হতাশার গল্প লড়াই ও প্রতিবাদ, প্রেম ও বিরহ চিত্র, সমস্ত সমাজ বাস্তবতার নিদর্শন হয়ে তার গল্পকে প্রকৃত গ্রামীণ জীবনের প্রতিনিধি স্থানীয় গল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অনিলের গল্পের আরেক সৌন্দর্য ও উপাদান তাঁর গল্পের উপমা।
যেমন 'মরা জ্যোৎস্না সজনে ফুল আলো'। বয়স হলে চামড়া যেমন শিরা দেখায়, তেমনি আইবুড়ো মেয়ের পেটও গর্ভের সময় চাপা থাকে না। কাজুবাদাম রঙের চাঁদ, ভাবনা হল আলোক-লতার মূল ডুমুরের ফুল, এমন আরও বহু উপমা তার গল্পে উঠে এসেছে।
বাংলা সাহিত্যের এক নতুন দিগন্তের নাম অনিল ঘড়াই। তাঁর প্রথম গল্প সংকলন ‘কাক’ প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নুনবাড়ি’, প্রকাশকাল ১৯৮৯। তারপর ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়েছে গল্প-সংকলন, উপন্যাস, কিশোরগ্রন্থ, কাব্যগ্রন্থ, অনুবাদ গ্রন্থ। এ যাবৎ তাঁর বইয়ের সংখ্যা ৭৮। প্রখর বাস্তববাদী লেখক ছিলেন অনিল। তাঁর প্রতিটি লেখায় ভারতবর্ষের দলিত-অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষের জঠর যুদ্ধের যাপনচিত্র প্রাধান্য পেয়েছে। অনিলের কথায় ‘‘মানুষ স্মৃতি নিয়ে বাঁচে, স্মৃতিই তার সম্বল, অনেকটা মূল্যবান গয়নার মতো। সাহিত্যচর্চার বিষয়টি এদেশে এখনও শেয়ালকাঁটা কিম্বা বিছুটি গাছের মতো সমাজের অনেকাংশে অচ্ছুত রয়ে গেল। অনেক ফুলই দেবতার পায়ে পৌঁছোয় না, তবু ফুল ফোটে। সাহিত্যে হেরে যাওয়া বলে কোন শব্দ নেই। উৎসাহ প্রতিটি হৃদয়ের ঘুমন্ত নদী, যে জেগে উঠলে বসন্ত সমাগম হয়। দূর্বা ঘাসের সংসারও মাটি কামড়ে পড়ে থাকে।’’ - এই মূল্যবান কথা অনিল ঘড়াইয়ের লেখনীতেই প্রকাশ পায়।
লেখালেখির পাশাপাশি রেলের উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। চাকরিসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় তাঁর বিচরণ ছিল। সিংভূমের চক্রধরপুরে বিগত দশ বছর কাটিয়ে খড়গপুরের মাটি-মানুষ-জনজীবনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। চক্রধরপুরে থাকাকালীন বেশ কিছু উপন্যাস, গল্প লিখেছিলেন। সেখানকার আদিবাসী জনজীবন ও তাদের অভাব, অভিযোগ, সংগ্রাম তুলে ধরেছিলেন। 'বনবাসী', 'আকাশ মাটির খেলা', 'নুনা শামাডের গল্প' প্রভৃতি আরও অন্যান্য গল্প উপন্যাসের মধ্যে।
১৯৯৮ সালে খড়গপুর রেলশহরে পদার্পণ তাঁর। প্রথমে রেল-কোয়ার্টার না পাওয়ায় সমস্ত জিনিসপত্র বারবেটিয়ার একটা ঘরে রেখে, তারপর ঘর ভাড়া নিলেন কৌশল্যা মোড়ে রেলের গার্ড এস. আর. পাল-এর বাড়িতে। ওঁনারা প্রথমে এক ভাড়াটিয়ার মতোই সম্মান দিয়েছেন। পরে যখন জানতে পারলেন উনি একজন 'রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত' লেখক, তাঁর সম্মান দশ গুণ বেড়ে যায়। মৌমাছি যেমন মধুর সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়, তেমনি খড়গপুরের সাহিত্য-সংস্কৃতি মনস্ক মানুষেরা এই কথাসাহিত্যিকের টানে কৌশল্যার ওই দোতলা বাড়িতে আসতে থাকলেন। ভিড় জমতে জমতে ধীরে ধীরে ওই বাড়িও বিখ্যাত হয়ে যায়। দিদি বন্দনা পাল খুব আন্তরিকতার সঙ্গে সব কবি সাহিত্যিকদের অত্যাচার সহ্য করেছেন। পরে দাদা খুব অসন্তুষ্ট হতেন এত মানুষের কলিং-বেলের আওয়াজে। আসলে রাগেরও কারণ ছিল। মানুষ ভুল করে ওনাদের কলিং-বেল বাজিয়ে দিতেন। তাই পরে কলিং-বেলের ওপর ‘অনিল ঘড়াই’ নামটা লেখা হয়েছিল। পরে তিনখানা কোয়ার্টার বদল হয়েছিল। এস/১১/৪ সাউথ সাইড; ৪৮৪/২ ও ২১৩, সেকেন্ড এভিনিউ। ধীরে ধীরে দশ বছর কেটে যায়। এই দশ বছরে খড়গপুরে সাহিত্যচর্চা একশো গুণ বেড়ে যায় অনিল ঘড়াইয়ের সান্নিধ্যে। মানস চিনি, সমীরণ মজুমদার, প্রভাত মিশ্র, মেদিনীপুরের আরও অনেক লেখক, তারও অনেক পরে সুনীল মাজি, ভবেশ বসু, নন্দদুলাল রায় চৌধুরী, গোবিন্দ সামন্ত, নিখিলরঞ্জন মাইতি - সবাইকে নিয়ে প্রতি মাসে এক সাহিত্যের আড্ডা শুরু হয় ওই রেল-কোয়ার্টারে। ধীরে ধীরে কবি সাহিত্যিকদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তখন স্কুল, কলেজ, ক্লাব বা কারুর বড় বাড়িতে এই সাহিত্যিকদের আড্ডা ক্রমশ চলতে থাকে ও বাড়তে থাকে। অনিল ঘড়াই তখন লেখক কবি তৈরি করার কারিগর, তাঁর সান্নিধ্যে যারা যারা এসেছেন কেউ আর তাঁকে ছেড়ে যেতে পারেননি। হরিনামের মতো এক জাদু, তরঙ্গের স্রোত, ঢেউ ও জোয়ার নিয়ে আছড়ে পড়েছিল খড়গপুরের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। এই ঢেউয়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে খড়গপুর শহরে শুরু হল বইমেলা। এই বইমেলা শুরু হওয়ার আগে প্রথম মিটিংটা হয়েছিল কথাসাহিত্যিকের বাংলোয়। গৌতম চৌবে, দেবাশিষ চৌধুরী, অপূর্ব ও আরও অনেক সমাজসেবক উপস্থিত ছিলেন। তবে গৌতমদার কথা এখনও খুব ভালোভাবে মনে আছে। উনি বলেছিলেন যে অনিলদা খড়গপুর শহর অত্যন্ত করাপ্টেড হয়ে যাচ্ছে। মানুষ নিজস্বতা ভুলে যাচ্ছে, সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছে, দিন দিন হিংস্র হয়ে উঠছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে এই শহর একদিন শ্মশানে পরিণত হবে। পরবর্তী জেনারেশন কি শিখবে কি নিয়ে বাঁচবে? আপনি কিছু একটা ভাবুন। অনিল ঘড়াইয়ের প্রস্তাব ছিল যে, গৌতমদা একটা বইমেলা শুরু করলে হয় না।
সেদিন যারা যারা উপস্থিত ছিলেন সবাই একবাক্যে সমর্থন করেছেন। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে শুরু হল বইমেলা। 'নারায়ণ মানস চৌবে মেমোরিয়াল ট্রাস্ট' ও কলকাতার নামীদামী পাবলিশার্স তাদের বইয়ের সম্ভার নিয়ে এগিয়ে এলো। অনিলের পরামর্শ মতো বইমেলা এগিয়ে চলল টানটান উত্তেজনায়। শুরু হলো অনিলের পত্রিকা 'তূর্য'। ধীরে ধীরে মেদিনীপুরের কবি সাহিত্যিকদের বইও 'তূর্য পাবলিকেশন' থেকে বেরোতে শুরু করল। অনিল সবার কাছে যেন এক বলিষ্ঠ শেকড়, মহীরূহ। বিশাল আকাশ কিংবা ভরসার, আন্তরিকতার ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতীকস্বরূপ। অনিলের ডাকে সাড়া দেয়নি এমন কোনও লোক নেই। আবার অনিলকে সম্মান সম্বর্ধনা দেওয়ার জন্য যারা যারা ডেকেছেন তাদের ডাক উপেক্ষা না করে ছুটেছেন সব জায়গায়। অফিস, সাহিত্যসভা, অনুষ্ঠান, লেখক কবিদের দল নিয়ে খড়গপুরের, মেদিনীপুরের সব জায়গায় সাহিত্য বিস্তার করেছেন রাজ্যজয়ের মতো। সদা হাস্যময় অনিলের দিব্যকান্তি মুখ যেন সর্বদা মানুষের সমস্যা সমাধানের জাদুকাঠি। শরীরে সুগার, প্রেসার, কিডনি খারাপ নিয়েও সমাজকে নতুন শিক্ষা ও প্রগতির পথ দেখানোর জন্য লড়াই করে গেছেন। নিজেও সারাদিন অফিস করে রাত জেগে ১০-১২ ঘন্টা লিখে গেছেন। খড়গপুরের প্রতিটি রাস্তাঘাট, চৌরাস্তার মোড়, গাছপালা, ফুল, লতাপাতা, রেল কোয়াটার সবাই অনিলের অবাধ বিচরণের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে তাঁর অপেক্ষায়। ইতিহাস সাক্ষী আছে। তার মধ্যে অনিলকে কেউ কেউ বলতো তুমি অনেক বেশি লিখে ফেলেছ। আড়ালে বলতো অনিল তো শুধু উত্তরীয় ও ফুলের তোড়া পাওয়ার জন্য সব জায়গায় যেত। আসলে তাদেরকে কেউ গুরুত্ব দিত না। অনিলের ভাগ্যে জুটতো যত সম্মান।
আসলে অনিল ছিল যোগ্য লোক, আর যোগ্য লোকের সম্মানটাই সে পেয়ে এসেছে। 'রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত' লেখক তখন হাতেগোনা ক'জনই বা ছিলেন। তারপর বহু পুরস্কার এনে দিয়েছিল তাঁর এই সাহিত্যচর্চা। সোপান সাহিত্য পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার, সর্বভারতীয় সংস্কৃতি পুরস্কার, ভারত এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড, বঙ্কিম পুরস্কার - এমন আরও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন অনিল। এসবই খড়গপুরের মানুষ উপলব্ধি করেছে। এতো মানুষের ভালোবাসাই অনিলকে আরও এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
আজ তাঁর লেখা নিয়ে ১৫ জন গবেষণা করছেন। মেদিনীপুর কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বই পড়ানো হচ্ছে। পাঁচটা ভাষায় তাঁর বই অনূদিত হয়েছে। কেরালা ইউনিভার্সিটিতে তাঁর বই পড়ানো হচ্ছে। এ অত্যন্ত গর্বের বিষয়। ইংরেজিতেও তাঁর অনেক বই অনূদিত হয়েছে। অনুবাদ করেছেন আমাদের খড়গপুরের গর্ব অনুরাধা সেন এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির হেড অফ দ্যা ডিপার্টমেন্ট প্রফেসর ডঃ ইন্দ্রনীল আচার্য। তাছাড়া যারা যারা তাঁর ছায়াসঙ্গী, নিত্যদিনের সঙ্গী ছিলেন তাঁদের মধ্যে কবি সুনীল মাজির সাহচর্য অস্বীকার করা যায় না। তাছাড়া নন্দদুলাল রায়চৌধুরী, সমীরণ মজুমদার, প্রফেসর উদয় সরকার, সুভাষ বসু, বিদ্যুৎ পাল, মোনালিসা ভৌমিক, জয়শ্রী সরকার, অম্বরকান্তি কুমার সহ আরও অনেক গুণীজন তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন এবং লেখক অনিলও সমৃদ্ধ হয়েছেন তাঁদের সৌজন্যে। খড়গপুরে থাকাকালীন খড়গপুরে রেলের এসটিটিসির প্রিন্সিপাল ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তাছাড়া প্রতিবছর খড়গপুরের দুর্গাপুজোর নির্বাচকমন্ডলীর সভাপতির পদও অলংকৃত করেছেন তিনি। এত অসুস্থতা, কিডনি প্রতিস্থাপন সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ টেগোর হাসপাতালের বেডে শুয়ে 'অনন্ত দ্রাঘিমা'র মতো উপন্যাস লিখেছেন যা তাঁকে 'বঙ্কিম পুরস্কার' এনে দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে শরীর তাঁকে কাজ করতে দিল না। অনেকবার ভেবেছেন গার্ডেনরিচ-এ ট্রান্সফার নেবেন, কিন্তু খড়গপুরের মাটির গন্ধ, মানুষের ভালবাসা আবদ্ধ করে রেখেছে তাঁকে বারবার। শেকড় আলগা হতে দেয়নি। তাই শেষ দিন পর্যন্ত লড়াইটা ওই ২১৩-র বাংলোয়, যা রাজসাক্ষী হয়ে আজও বিদ্যমান। খড়গপুরবাসী দেখল ২০০০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এক সাহিত্য সংগ্রামী মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই। সাহিত্য অনুরাগী মানুষদের নিয়ে একনিষ্ঠভাবে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। খড়গপুর, মেদিনীপুরের মানুষ, সুনীল মাঝি ও ভবেশ বসুর উদ্যোগে অনিলকে নিয়ে তাঁর সাহিত্য নিয়ে রচিত হয়েছে, 'এক জীবন অনন্ত জীবন' ও 'অনিল ঘড়াই পরিক্রমা'। এ এক অনবদ্য প্রয়াস অনিলকে বাঁচিয়ে রাখার। আমার শহর খড়গপুর ও খড়গপুর ও মেদিনীপুরবাসী এখনও এক পরিবারের মতো আমাদের পাশে আছে, থাকবে আজীবন। এ এক মায়ার বন্ধন, সুস্থ সাহিত্যের মেলবন্ধন।