বেন্টিংক স্ট্রীটের এই চশমার দোকান থেকেই বরাবর চশমা বানানো! সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ। চোখের পাওয়ারও তাই অহরহ বাড়তেই থাকে। মাঝেমধ্যেই তাই আসতে হয় পাওয়ার বদলাতে!
সেই ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে আসা। চশমা বানিয়ে নিয়ে লালবাজারের উল্টো দিকের দোকান থেকে এগরোল খেয়ে বাড়ি ফেরা।
এই জায়গাটা যেন স্মৃতির সাথে জড়িয়ে গেছে।
সেবার মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষে সিমলা যাবো। বহুদিন বাদে ঘুরতে যাওয়ার তোড়জোড়ই আলাদা তার ওপর আবার সদ্য বোর্ডের পরীক্ষার পরিসমাপ্তি। বাবা মা আমি আর ভাই মিলে চলে এলাম চশমা কাকুর দোকানে। সবার আদ্যিকালের চশমার ফ্রেম বদলে একটু নতুনত্ব ফ্রেমে চশমা বানানো। ভাইয়ের অবশ্য তখনও চোখে চশমা হয়নি। চশমার পর্ব শেষ হলে আমি আর ভাই ঠিক করলাম একটা সানগ্লাস কিনব, ঘুরতে যাচ্ছি বলে কথা!
আমাদের পছন্দ অনুযায়ী কিনেছিলাম খুবই সামান্য দামের একটা 'ব্লু সানগ্লাস'। এতেই আমাদের দুজনের উত্তেজনা ছিল প্রবল -- ওখানে গিয়ে সানগ্লাস পরে ছবি তুলতে হবে!
বাবা বলেছিল, মাধ্যমিকে স্টার মার্কস পেয়ে যদি পাস করি তবে 'রে ব্যান' এর সানগ্লাস কিনে দেবে।
সিমলাতে কদিন খুব আনন্দ করে ঘুরলাম। নানা জায়গায় ঘোরা, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ আর নানান পোজে ছবি সানগ্লাস পরে! একবার ও পরে তো একবার আমি!
দিনগুলো হুহু করে কেটে গেল।
আর দুদিন বাদেই ফিরে আসার পালা।
সেদিন ডিনার করে হোটেলে ফিরেছি, বাবার খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সাথে বুকে ব্যথাও। সেদিনের রাতটা ছিল আমাদের জীবনের চরম দুর্যোগময় রাত। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাবার বুকের ব্যথাটাও বাড়তে লাগলো। সাথে থাকা ওষুধপত্র দিয়েও কিছুই হল না। বিদেশবিভুঁই, কি অসহায়ের মত রাতটা কাটল!
রাত শেষ হয়ে ভোর হল। কিন্তু সেই নতুন দিনের সূর্যোদয় বাবার আর দেখা হলো না!
খবর পেয়ে ছোটমামা ফ্লাইটে চলে গিয়েছিল সিমলা।
আমাদের জীবনের সমস্ত খুশি চলে গেছিল বাবার সাথে। মাও কেমন একটা হয়ে গেল।
ঠাকুমা শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেছিল নাতি নাতনিটার মুখ চেয়ে। তাই আমাদের সংসারটা টিকে গেছিল।
বাবার কাছ থেকে 'রে ব্যান'-এর চশমা আর নেওয়া হলো না! কাকুর দোকানে আসলেই শোকেসে সাজিয়ে রাখা কোনও ব্লু সানগ্লাসের দিকে চোখ আটকে যায় প্রতিবারই...!