গল্প ও অণুগল্প

সেলাই মেশিন



অচিন্ত্য সাহা


সম্পত্তির চুলচেরা ভাগ হবার পর একটা সেলাই মেশিন নিয়ে সমস্যা হলো। মেশিনটা অনেক পুরনো। দীর্ঘদিন ঘরে পড়ে থাকায় ওটা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। পুরনো ভাঙাচোরা বাড়িটা বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া গেছে তা ভাইয়েরা সমান ভাগে ভাগ করে নিয়েছে। ঘরের আসবাবপত্র বলতে সেগুন কাঠের তৈরী পুরনো দু'খানা খাট, কিছু কাঁসার থালাবাসন ঘটিবাটি এবং একটি মরচে ধরা সেলাই মেশিন। অধিকাংশই জলের দরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো সেলাই মেশিন নিয়ে এই বাজারে কেউ পুরনো কিছু কিনতে চায় না তার উপরে সেলাই মেশিন! বিনা পয়সায় দিলেও কেউ নিতে চায় না। এখন বেশির ভাগ মানুষের বাড়িঘরে জায়গা কম। এতবড় একটা অকেজো জিনিস বাড়িতে রেখে অহেতুক জায়গা নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। দীর্ঘ আলোচনা, বাকবিতন্ডা, তর্কাতর্কি এবং বচসার পর ঠিক হলো যে, মায়ের শেষ জীবনে যে মেয়েটি সবসময় মায়ের সেবাযত্ন করেছে তাকেই দিয়ে দেওয়া হোক। চার চারজন প্রতিষ্ঠিত মরদ যখন মায়ের শেষ স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে বিপন্ন বোধ করছে, সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না, ঠিক তখনই একটা ছেলে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। মুখখানার মধ্যে খুব পরিচিত কারও মুখ ভেসে উঠছে। বেশ সম্ভ্রান্ত ঘরের সন্তান বলেই মনে হচ্ছে, বয়স বছর দশেক হবে। সবাই সমস্বরে চিৎকার করে উঠলো - কে তুমি? এখানে কী চাই?

ছেলেটি শান্তস্বরে বললো - সেলাই মেশিন। ওই সেলাই মেশিনটার জন্য আমি এখানে এসেছি। মানে আমার মা আমাকে পাঠালেন।

- কে তোমার মা? তিনি সেলাই মেশিন নিয়ে কী করবেন?

- আমি অতশত বুঝি না। মা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে তোমরা জেনে নাও তিনি এই মেশিন নিয়ে কী করবেন।

- মা'কে ভেতরে আসতে বলো।

- তিনি ভেতরে আসবেন না বলেই তো আমাকে পাঠালেন।

- ভেতরে না এলে তিনি মেশিনটা নেবেন কী করে?

- আচ্ছা মুশকিল! এত কথা আমাকে না বলে মা'কেই বলো না কেন। তোমরা বাইরে গেলেই তাঁকে দেখতে পাবে।

ভাইদের কৌতূহল বেড়ে যায়। এমন কে হতে পারে এই পুরনো একটা লজ্ ঝড়ে মেশিনকে নিয়ে যাঁর আগ্রহ থাকতে পারে? আটটি চোখ অতীতের দিকে তাকিয়ে সেই কৌতূহলী মানুষটিকে অনুসন্ধান করতে শুরু করলো। এদের মনের মধ্যে একটা শঙ্কা ঘুরপাক খেতে লাগলো - বড়দি নয় তো? প্রায় বছর ত্রিশ আগে যখন 'ট্যাপস অ্যান্ড ডাইস' কারখানা লক আউট হয়ে বাবার কাজ চলে যায় তখন সংসার চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটি বাবদ যে টাকা পাওয়ার কথা ছিল কোম্পানি সেই টাকা দিতে অস্বীকার করে। ফলে প্রায় কপর্দকহীন অবস্থায় সাংঘাতিক দুশ্চিন্তায় বাবা মারাত্মক অসুখে পড়েন। পাঁচ পাঁচটি সন্তানকে নিয়ে মায়ের তখন অসহায় অবস্থা। কীভাবে স্বামীকে সুস্থ করে তুলবেন, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া এবং সংসারের যাবতীয় খরচ কীভাবে চালাবেন তা নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। আত্মীয় স্বজনরা কেউই সেই দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়াননি। সেবার দিদি মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে শংসাপত্র এবং পাঁচ হাজার টাকা নগদ পুরস্কার লাভ করে। কিছু টাকা বাবার চিকিৎসার জন্য ব্যয় করে, বাকি টাকা থেকে একটা সিঙ্গার সেলাই মেশিন এবং সংসারের টুকিটাকি জিনিস কেনা হয়। মা ইতিপূর্বে উমাশশী শিক্ষা নিকেতন থেকে সেলাই-এ ডিপ্লোমা করেছিলেন। তিনিই দিদিকে মেশিনের কথা বলেছিলেন। সেলাই মেশিন নিয়ে শক্তিনগর অঞ্চলে তখন মা-ই প্রথম পুরনো কাপড় কেটে প্যান্ট তৈরী করা শুরু করেন। মায়ের উপার্জিত অর্থে সংসারের হাল ফেরে। দিদি সুপর্ণা তখন বাবার চোখের মণি। মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দিদির সহযোগিতায় একে একে চার চারটি ভাই স্নাতক স্তর অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠিত হয়। সবাই যখন প্রতিষ্ঠিত তখন দিদি তাঁর হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে সযত্নে লালিত সুনীতদার কথা মায়ের কাছে বলেন। সুনীতদা বৌ-বাজারে থাকতেন। কলেজে পড়ার সময় থেকেই দিদির সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তাঁরও তিন কুলে কেউ নেই। তিনি রাইটার্স ভবনে আপার ডিভিশন ক্লার্কের চাকরি করতেন। বৌবাজারের বাড়ি ছেড়ে তিনি আগরপাড়ায় খুব অল্প দামে একটা বাড়ি কিনে সেটাকে ঠিকঠাক করে সেখানেই বসবাস করতে শুরু করেন। প্রতি রবিবার এবং ছুটির দিনে তিনি মূলত দিদির জন্যই কৃষ্ণনগর আসতেন। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক এই মানুষটি দিদির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে ছিলেন।

দিদির কাছে সুনীতদার কথা শুনে মা প্রথমেই না করে দিলেন। কারণ একটাই, সুনীতদা খৃষ্টান। মা-বাবা উভয়েই দিদি এবং সুনীতদার মিলনের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালেন। দিদি যতই বোঝানোর চেষ্টা করেন মা-বাবা ততই বেঁকে বসেন। দিদির দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, মা-বাবা তাঁর ভালোবাসাকে মর্যাদা দেবেন। কিন্তু তাঁরাই যখন প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন তখন দিদি মনে বড়ো আঘাত পেলেন। তিনি কেমন যেন মনমরা হয়ে গেলেন। কারোর সাথে খুব একটা কথা বলতেন না, কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে ঠিকঠাক উত্তর দিতেন না, খাবার দাবারের প্রতি কেমন একটা বিতৃষ্ণার ভাব। কেবল ঘরে জানালার পাশে রাখা সেলাই মেশিনে বসে ঘণ্টার পর ঘন্টা সেলাই করে যেতেন। এভাবেই বেশ কিছু দিন কেটে গেল।

বড়দিনের সময় একদিন দুপুর বেলা সবাই যখন খেতে বসেছে, এমন সময় সুনীতদা এসে দিদিকে বললেন - সু আমি এসেছি। হ্যাঁ, আজই তোমাকে নিয়ে যাবো। তৈরী হয়ে নাও।

বাবা বললেন - সুনীত কাজটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।

- কেন, কী কারণে ঠিক হচ্ছে না, বলুন কাকাবাবু?

- দেখ সমাজ ধর্ম বলে তো একটা কথা আছে?

- হ্যাঁ, তা আছে। আমরা তো কোনো কিছু অস্বীকার করছি না। আমরা দু'জন দু'জনকে ভালোবাসি। এর মধ্যে জাত ধর্মের প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে? তাছাড়া আমি কিংবা সুপর্ণা এই জাত ধর্মের মোড়ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। আমরা জানাতে চাই সমস্ত জাত ধর্মের ঊর্ধ্বে হলো মানুষ।

বাবা কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু দিদির বেরিয়ে আসা দেখে তিনি চুপ করে গেলেন। মা-বাবাকে প্রণাম করতে গেলে ওঁরা মুখ ফিরিয়ে নিলেন। দিদি বললেন - আসছি। তোমরা ভালো থেকো।

বাবা বললেন - সোনা, এই যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছো, তোমার যদি সামান্য জ্ঞানটুকু হয়ে থাকে তাহলে জীবদ্দশায় এ বাড়ির চৌকাঠ মাড়িও না।

চোখের জল ফেলতে ফেলতে সেদিন বড়দি সুনীতদার হাত ধরে এ বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তারপর অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। দিদি চলে যাওয়ার পর বছর খানেকের মধ্যে বাবা চলে গেলেন, মা তাঁর কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললেন। অসহায় পঙ্গু মায়ের দায়িত্ব নিতে সবাই অস্বীকার করে। বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে মা'কে দেখাশোনার জন্য ওরা একটা মেয়েকে রেখে যায়। চার ভাই পালা করে মায়ের ব্যয়ভার মেটানোর দায়িত্ব নেয়। কিন্তু অল্প কয়েক দিনের মাথায় মা মারা যান। মেয়েটি এতদিন এই বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতো। এর মাঝে কেউ কারও খবর রাখেনি। পরে ওরা চার ভাই ভেবেছ - এভাবে বাড়িটা ফেলে না রেখে বিক্রি করে দিলেই ভালো হয়।

বড়দি কী তাহলে আবার ফিরে এলেন? আটটি কৌতূহলী চোখ বাইরে বেরিয়ে যা দেখতে পেল তাতে তারা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো - এ যে আমাদের সেই বড়দি! এত বছর পরেও বড়দি সেই আগের মতোই আটপৌরে এবং সুন্দরী! চেহারায় একটুও পরিবর্তন আসেনি? পাশে দাঁড়িয়ে আছেন সুনীতদা। দিদির হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে ছিপছিপে গড়নের একটি মিষ্টি মেয়ে। সম্ভবত দিদির মেয়েই হবে। এই ছেলেটি তাহলে আমাদের ভাগনে?

ওরা চারজন এক দৌড়ে দিদির পায়ের কাছে এসে বসে পড়লো - দিদি, আমরা তোমার অকৃতজ্ঞ ভাই। আমাদের ক্ষমা করো।

সুপর্ণা তখন কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। যাদেরকে আঁকড়ে ধরে তিনি বাঁচতে চেয়েছিলেন তারা কেউ তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। আজ পর্যন্ত কেউ তাঁর খবরও নেয়নি। এ বাড়িতে বেশ কয়েকবার তিনি এসে জানতে চেয়েছেন তাঁর ভাইয়েরা কোথায় আছে, কেমন আছে। কিন্তু এরা সবাইকে জানিয়ে রেখেছে - সুপর্ণা নামে কাউকেই তারা চেনে না। এই নামে কেউ তাদের খোঁজে এলে তাঁকে যেন ওদের ঠিকানা না দেওয়া হয়। এমনকি কাজের মেয়েটির কাছ থেকেও কোনো কথা জানা যায়নি। এই বাড়িটা যিনি কিনেছেন তাঁর কাছে সব জানতে পেরে তিনি আজই সুনীত এবং ছেলে মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছেন। এসে যা দেখলেন তাতে এদেরকে ভাই বলে পরিচয় দিতে তাঁর বাধছে।

সুনীত এসে ওদেরকে তুলে ধরে বলেন, তোমরা বৃথাই চেষ্টা করছো। এতদিনেও তোমরা তোমাদের দিদিকে চিনতে পারোনি? ওঠো, ওঠো, যেটা নিয়ে তোমরা বিপদে পড়েছ সেটা নিয়ে এসে আমাদের গাড়িতে তুলে দাও। যে মেশিনটা তোমাদের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছে, তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছে, তাকেই তোমরা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করার পরিকল্পনা করছো? ভালো কথা। ওটা রাখার জন্য তোমাদের কারও ঘরে জায়গা না থাকলেও আমাদের বাড়িতে অনেক জায়গা আছে।

সুপর্ণার মেয়ে মৌ এবং ছেলে তানিশ এসে বড়মামার হাত ধরে। তানিশ বলে, জানো বড়মামা সেই কোন ছোটবেলায় রথের মেলা থেকে ফেরার পথে তোমরা সবাই মিলে একটা ছবি তুলেছিলে সেটা মায়ের কাছে সবসময়ই থাকে।

মৌ বলে ওঠে - জানো মামা, এই ছবিতে কে কে আছেন জিজ্ঞেস করলে মা বলেন - এরা আমার ছোটো চার ভাই। শুধু ভাই নয়, এরা আমার হৃৎপিণ্ড, আমার সন্তান। হৃৎপিণ্ডে যে চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে সেখানে এক একজন বসে আছে।

মৌ-এর কথা শেষ হবার সাথে সাথে সুপর্ণা দিদি ডুকরে কেঁদে ওঠেন - চুপ কর মা, চুপ কর। ওরা কেউ বোঝে না মা কী জিনিস। কেননা ওরা তো কেউ বাবা হতে পারেনি। অপত্য স্নেহ কী সেটাই তো ওরা বোঝে না।

তানিশ ছুটে এসে মায়ের পার্স থেকে ছবিখানা বের করে ওদের সামনে তুলে ধরে। সেই ছোটবেলার ছবি। মাঝখানে দিদির কোলে ছোট, দিদির ডানদিকে দুই ভাই, বাঁদিকে এক ভাই দাঁড়িয়ে। কী মিষ্টি লাগছে ছোটকে, ও-তো দিদির কোলেপিঠেই বড়ো হয়ে গেল।

- বড়দি এবার ঘরে চলো।

- তোরা জানিস না ওই ঘরে ঢোকার অধিকার আমার নেই? থাকলেও আমি ঢুকতাম না।

- এখন তো আর ঘর আমাদের নেই। ওটা অন্য কারও হয়ে গেছে। তাই ওখানে ঢুকতে তোমার বাধা নেই।

- না থাকলেও ওটা আমার কাছে একটা অভিশপ্ত বাড়ি। ওটাতে বাবার অভিশাপ লেগে আছে। ওই বাড়ির কোনো কিছুতেই আমার অধিকার নেই।

- তাহলে সেলাই মেশিন?

- ওটা মায়ের হলেও আমার মনে ও একটা পৃথক জায়গা দখল করে আছে। ও আমাদের জীবন রক্ষা করেছে, আমাদের মুখে ক্ষুধায় অন্ন তুলে দিয়েছে। তাই ওটা আমার কাছে কেবল একটা মেশিন নয়, আমার মা, একটা মূল্যবান সম্পদ। আমি জানি আজকের দিনে অনেকেই ওটাকে বাড়িতে জায়গা দেবে না। লোহালক্কড়ের দোকানে কেজি দরে বেচে দেবে। নাহলে নিরুপায় হয়ে কাউকে দান করে দেবে। তোরা ওটা নিয়ে আয়। আমাদের আবার বাড়ি ফিরতে হবে।

সুপর্ণা দিদির চার ভাই যখন সেলাই মেশিনটাকে ঘর থেকে বের করে আনছিল তখন মনে হলো, মায়ের প্রাণহীন হিমশীতল দেহখানিকে কাঁধে তুলে নিয়ে চার ভাই মায়ের শেষযাত্রায় সামিল হয়েছে। যেটা সত্যি সত্যি ওরা করেনি। পাড়ার বাসিন্দাদের কয়েকজনের সহযোগিতায় মায়ের শবদেহ সৎকার করা হয়েছিল। আজ সত্যি সত্যি মায়ের প্রাণহীন দেহটার সৎকার হলো।

সুপর্ণাদির দু-চোখ ভরে জল এসে গেল। মেশিনের গায়ে হাত দিয়ে তিনি চমকে উঠলেন - এ কী! এ যে সত্যি সত্যি শবদেহের স্পর্শানুভূতি! মনে হলো মায়ের মৃতদেহ এখনো মেশিনের মধ্যে রয়ে গেছে। পাঁচ ভাই-বোনের হাতের ছোঁয়ায় সত্যি সত্যি তিনি প্রাণ ফিরে পেয়েছেন।

- মা, তুমি সত্যি সত্যি এসেছো? মা, মাগো। একবার কথা বলো মা।

মেশিনটাকে জড়িয়ে ধরে সুপর্ণাদি হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন। তাঁর মনের গভীরে জমে থাকা মেঘ অশ্রু হয়ে নেমে এলো।

অনেকবার অনুরোধ করেও দিদিকে টলানো গেল না। সেলাই মেশিনটাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ওরা যখন জাতীয় সড়কে উঠলো তখন পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে। তার লালচে আভা মেশিনের ওপর পড়ে মেশিনটাকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। সুপর্ণাদির মনে হলো মা-কে গাড়িতে চাপিয়ে ওঁর নিজের ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন। বেঁচে থাকতে মায়ের গাড়ি চড়ার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু সেটা পূর্ণ হয়নি। আজ মায়ের আশা পূরণ করে সুপর্ণাদির মনটা এক অদৃষ্টপূর্ব আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। মাকে খুশি খুশি দেখে মৌ এবং তানিশ দু'দিক থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে আদরে আদরে ভরিয়ে দিল।