বিবিধ

শিশুর মন



প্রসেনজিৎ দাস


একবার মহারাজ আকবর তাঁর সভাসদদের জিজ্ঞেস করেছিলেন - 'এ পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুতগামী জিনিস কী?' এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনেকেই হোঁচট খেয়েছিলেন সেদিন। কিন্তু বীরবল একবাক্যে জবাব দিয়েছিলেন 'মানুষের মন মহারাজ।' বীরবলের এহেন জবাব মহারাজ আকবরকেও সেদিন বিস্মিত করেছিল। আজ্ঞে হ্যাঁ, মানুষের মনই এ পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী বস্তু। তবে সেই মন যদি শিশুর হয়, তবে তো আর কথাই নেই।

কথায় বলে শিশুর মন নাকি নিষ্পাপ, সহজ ও সরল। কিন্তু এই আপাত সহজ- সরল মনেই চলে জটিল কিছু চিন্তা ভাবনা, যা শিশুর সহজাত বৈশিষ্ট্য।তারা যেমন কল্পনা করতে ভালোবাসে, তেমনি তার মনেই চলে কত চিন্তা ভাবনা। শিশুর কল্পনায় শরৎ মেঘে রবীন্দ্রনাথকেও দেখতে পাওয়া যায়, কখনো আবার রং চটা দেওয়ালে উগ্র সিংহের রুদ্রমূর্তি।এসব দেখে দিদিমণি বলতেই পারেন -

"এসব কথা আবার যেন না শুনি কখনো।"

কিন্তু শিশুমন তো নিষেধের বাধা মানে না।জনৈক কবির লেখাতে পড়েছিলাম শিশুর কল্পনাপটে ভেসে ওঠে -
"উডু উডু জামগরু
    আকাশে খেলিং,
শরতের মেঘ রোদে
    নেই কো রেলিং।"

তার কল্পনাপ্রবণতা,বিশ্লেষণধর্মী মনন,ইতিবাচক চিন্তন ভবিষ্যতে তার জীবনপথকে প্রসারিত করে।

তার মনই ভবিষ্যৎ ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রভূমি। সেই ভূমিকে ভালোভাবে কর্ষণ করতে পারলে,জল সার ও উপযুক্ত বীজ বপন বীজ বপন করতে পারলে ভবিষ্যতে তা উপযুক্ত ফল প্রদান করবে সন্দেহ নেই। একটা কথা প্রচলিত আছে যে, ''উঠন্তি মুলো পত্তনেই চেনা যায়''। তাই একটা শিশুর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তার কার্যকলাপের মধ্যে দিয়েই কিছুটা অনুভব করা যায়। সুতরাং শিশুর মনের ধারাটিকে যদি আমরা উপযুক্ত খাতে বইয়ে দিতে পারি, তবেই তার সর্বাঙ্গীন বিকাশ হবে সন্দেহ নেই।

শিশুর মন বহু বিচিত্র খাতে প্রবাহিত হয়। তার মন ও মান বুঝে তাকে চালিত করাই হচ্ছে অভিভাবক বা শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাজ। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, - ''কী শিখাইবো তাহা ভাবিবার বটে কিন্তু যাহাকে শিখাইব তাহার মনটাও পাইব কী উপায়ে সেটাও কম কথা নয়।" সে কী চায়, কী চায় না - এটাও আমাদের ভাবা দরকার।তাদের মনস্তত্ত্ব বুঝে তাকে চালিত করা, শিশুকাল থেকেই কিছু নৈতিক গুণাবলী বা Moral Education, সৌজন্য, বিবেকবোধ, সদ্ব্যবহার, শিষ্টাচার, নিয়মানুবর্তিতা,সময়ানুবর্তিতার শিক্ষা তাকে দিতে হবে যাতে তারা বুঝতে পারে কী করা উচিত,আর কী করা উচিত নয়-মনস্তত্ত্ববিদ ফ্রয়েড যার নাম দিয়েছিলেন 'সুপার ইগো' বা 'বড় আমি'। অর্থাৎ তাকে কীভাবে চলতে হবে কার সাথে কীরকম ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি যে তাকে নির্দেশ দেয় তাইই 'সুপার ইগো' বা 'বড় আমি'। তবে এর ভালো (Positive) ও খারাপ (Negative) দুটো দিকই আছে। শিশুর পরিবার, তার গুরুজন, শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকা 'Positive Super Ego' তৈরিতে বিশেষ সহায়তা করে। সে যাতে সমাজের পাঁচটা মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে পারে অর্থাৎ তার যাতে সঠিক সামাজিকীকরণ (Socialization) হয় তার দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। সুতরাং শিশুর মন নিয়েই আমাদের খেলতে হবে, তার মনস্তত্ত্ব বুঝে তাকে সুপথে চালিত করার মধ্যে দিয়েই আজকের মানুষ খুঁজে নেবে ভবিষ্যতের কান্ডারীকে।

চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।