প্রাচীন গ্রিসে ভবঘুরে চিত্তবিনোদনকারীরা শহর থেকে শহরে ঘুরে ঘুরে হাত সাফাইয়ের খেলা, বাজীকরের খেলা, পুতুল নাচের খেলা ইত্যাদি খোলা আকাশে নীচে দেখিয়ে বেড়াত। আমরা জানি এইসব ভবঘুরে চিত্তবিনোদনকারীদের মধ্যে কেউ কেউ বেশ নামী ব্যক্তি ছিলেন। যেমন Doug Hennings এবং Mark Wilson এঁরা সমসাময়িক। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন Euclides যাঁর সম্মানের জন্য Athens-এর Bucchus Temple-এ তাঁর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। তাছাড়াও ছিল বিখ্যাত বিয়োগান্ত নাট্যকার Aeschylus-এর স্মৃতিসৌধ। Athens-এর Theatre of the Istiaians-এও এরূপ আর একজন চিত্তবিনোদনকারী Theodosius-এর মূর্তি স্থাপিত আছে। একটা ছোট বল বিধৃত অবস্থায় তার মূর্তিটি স্থাপিত।
আমরা এইসব নির্বাহকদের এবং তাঁদের মূর্তিগুলি সম্বন্ধে জানতে পারি 'Banquet of Sages' নামক বই থেকে। এই বইটির লেখক ছিলেন গ্রীক বৈয়াকরনিক Atheinaeus. তিনিও একজন তৃতীয় জাদুকরের নাম বলেন, Diophites of Locris, যিনি মদ ও দুধে পরিপূর্ণ ব্লাডার ব্যবহার করতেন। দর্শকদের ইচ্ছানুসারে যিনি মুখ দিয়ে মদ কিংবা দুধ বার করবার ভান করতেন ব্লাডারগুলি কায়দা সহকারে সংকোচন করে। Diophites সম্ভবত প্রচুর কৌশল দেখাতে পারতেন যেহেতু তিনি তাঁর সময়ে তিনি অতি বিখ্যাত ছিলেন। এমনকি এথেন্স-এর অধিবাসীরা এরকম একটি উদাহরণ হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করতেন যে তাঁর মতো নিম্নমানের রুচিসম্পন্ন এথেন্সবাসী, যিনি গাণিতিক উদ্ভাবনী ভালোবাসেন দর্শকদের জ্ঞান অপেক্ষা।
উদ্ভাবন আবিষ্কারগুলি যাদের মধ্যে কতগুলি আধুনিক ভ্রমের স্মারক এবং স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রস্বরূপ, এগুলি গ্রীস ও Levantine-এর অন্যান্য দেশগুলির পুরোহিতগণ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন পূজারীদের মনে গভীর রেখাপাত করার জন্য ব্যবহার করতেন। Alexandria-র দার্শনিক হিরোর লেখায় এই জাদু করার অনেকগুলি উপায় উল্লিখিত আছে। Hero-র এই বিবৃতিতে এইসব জাদুর উপমাগুলি কি উপায়ে সঠিকভাবে উপস্থাপিত করা যায় তার উল্লেখ আছে। সংলগ্ন কাটিংগুলিতে Hero-র অঙ্কিত রেখাচিত্রে দেখানো আছে প্রাচীন মেকানিক্যাল আশ্চর্যগুলির কতকগুলি কিভাবে প্রদর্শিত করা যায়। সুদৃশ্য স্তম্ভের উপর Bacchus-এর মূর্তি তার নিজস্ব শক্তিতে মন্দিরবেদীর সম্মুখভাগে অগ্রসর হয় যখন এর কলকব্জা চালিত থাকে।
আবার ঠিক অবস্থায় নৃত্যরূপী মূর্তিগুলির বৃত্তটি প্রধান মূর্তিকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে। কেন্দ্রীয় মূর্তি Bacchus ও উপরিভাগে অবস্থিত Victory-র মূর্তি এমনভাবে আবর্তিত হতে থাকে যে তাঁদের মুখমণ্ডল সর্বদাই দর্শকদের সম্মুখে থাকে। দেবীর উদ্দেশ্যে মদ ও দুধের বর্ষিত ধারা বেদীর উপর স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঝরতে থাকে এবং বেদীর স্তম্ভমূলের উপর কীলকে সজ্জিত নির্মাল্য। এই নব অলৌকিক কৌশলের অগ্রগতির চক্র তার ভিত্তির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। উদ্দীষ্ট শক্তি আচ্ছাদিত হয়েছে পতনশীল বালুকণায় স্তম্ভের মধ্যে। ডুবন্ত বালুকণা আরো নিচে নেমে তাদের গুরুভারে ঘূর্ণায়মান বেদীর মূলে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। অপর ঘূর্ণায়মান অংশগুলি অপেক্ষাকৃত অঙ্গভারে ভারাক্রান্ত, কোথাও বা তরল পদার্থ মন্দিরের কৌণিক ছাদের উপর জমা জলের তলার ফাটল দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে।
বহু গ্রীক ও রোমান মন্দিরগুলি চোরাকুঠুরিতে সজ্জিত ছিল যেগুলির সাহায্যে পুরোহিতরা তাদের কথা বলার চোঙার মধ্য দিয়ে এক অলৌকিক শব্দের অবতারণা করতেন। তারা সেইসব উপায়গুলিও গোপন রাখতেন যার দ্বারা ঈশ্বরের জাঁকজমকপূর্ণ আবির্ভাবের ভাব করা যায়। এই অলৌকিক ঘটনাগুলি এমন সুচারুরূপে পরিকল্পিত হতো যাতে জনসাধারনের মধ্যে ভয়, ভক্তি ও অত্যাশ্চর্য ভাবের আবির্ভাব ঘটতো সেই যুগে, যে যুগে যন্ত্রচালনার চাতুরি জনসাধারণের কাছে ছিল সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। উদাহরণস্বরূপ এই ঘটনাটি উল্লেখ করা যায় পুরোহিত মন্দিরে প্রবেশ করে একটি পূজা বাতিদান প্রজ্বলিত করলেন বেদীর ডানদিকে যখন বাতিদানটি জ্বলতে থাকল, দেখা গেল মন্দিরের সকল দ্বারগুলি অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় মানুষের স্পর্শ ব্যতীত ধীরে ধীরে খুলে গেল। এতে ভয়-ভক্তিপূর্ণ অনির্বচনীয় ভাবের প্রকাশ হল।
যে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই ঘটনাটি সংঘটিত হল তা হল এই - যখন আগুন প্রজ্বলিত হল তখন বৃদ্ধির শূন্যস্থানের বাতাস আগুনের তাপে প্রসারিত হয়ে নিচে অবস্থিত গোলকের মধ্যস্থিত তরল পদার্থকে চাপ দিতে থাকল একটি বক্র বলের মধ্য দিয়ে একটি receptacle-এর উপর যেটি উত্তরোত্তর ভারপ্রাপ্ত হয়ে একটি শক্ত দড়িকে যা দুটি রডের সঙ্গে উল্টোভাবে জড়ানো, টানতে লাগল। মেঝের উপর অবস্থিত দরজার সঙ্গে ঐ দুই রডের উপরিভাগ যুক্ত রডগুলি যখনই বিপরীত দিকে ঘুরতে লাগল, দরজাগুলি আসতে আসতে খুলে গেল। এই উদ্ভাবনী আবিষ্কারের মধ্যে আরও কিছু অবশ্যই আছে। বেদীতে যখন আলো ক্রমশ নিভে এলো সেখানকার বাতাস আবার ঠান্ডা হয়ে এলো এবং তরল পদার্থটি টবের মত জলাধার থেকে বেরিয়ে গেল বক্র নলের মাধ্যমে যেটি এখন siphon-এর কাজ করতে থাকল, ফলে দড়িটির উপর এখন বিপরীত দিকে টান পড়ল এবং receptacle-এর উপর ভার ক্রমশ কমে এল এবং মন্দিরের দরজাগুলি অদ্ভুতভাবে আসতে আসতে বন্ধ হয়ে গেল।
তামাশাপ্রিয় রোম সাম্রাজ্যে ভবঘুরে হাতসাফাই-এর দল ভালোভাবেই তাদের কাজ চালাত, যেমন তারা গ্রিসেও এ কাজ করত। তারা সবসময় প্রচুর দর্শক সমাগম দেখত যারা ছিল অলস এবং যারা বিনা পয়সায় রুটি ও সার্কাস ভোগ করত। আর এদের খরচ আসত জাতীয় খাজাঞ্চিখানা থেকে, যা পরিপূর্ণ থাকত সাম্রাজ্যের খাজানায়। কাপ ও বলের জন্য রোমান জাদুকররা প্রায় গোলাকার পাথর ব্যবহার করতেন তাদের কাপগুলিকে বলা হত acetabulae (অর্থাৎ ভিনিগারের কাপ); সেইজন্য এই নির্বাহকগন 'Acetabulari' নামে পরিচিত। এই কাপ ও বলগুলি মূলত ভারতবর্ষ থেকে এসেছে এরূপ বিশ্বাস করা হয়। হিন্দু বাজিকরদের তথ্যভান্ডারে এখনও এটি একটি নির্ধারিত বিধি হিসেবে প্রচলিত।
(ক্রমশ)
চিত্রঃ লেখকের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে প্রাপ্ত।