উত্তরকাশীকে ঘিরে স্বস্তির হাওয়া ও কিছু নাছোড় প্রশ্নে উত্তাল দেশ অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। খবরে প্রকাশ ৪১ জন শ্রমিককেই সুড়ঙ্গ থেকে বাইরে আনা গেছে। শ্রমিকদের পরিবারে স্বভাবতই খুশির হাওয়া।
কিন্তু প্রযুক্তির ব্যর্থতা এবং সরকার ও প্রশাসনের যে গাফিলতি ও অদূরদর্শিতার কারণে নির্দোষ ৪১ জন মানুষকে সুড়ঙ্গের গহীন অন্ধকারে ১৭ দিন ধরে আটকে থাকতে হল, তাকে তো কোনওভাবেই ক্লিনচিট দেওয়া যায় না। অধিকাংশ শ্রমিককেই ট্রমা কেয়ারে নিয়ে যেতে হবেঃ এই আশঙ্কা গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে।
হিমালয়ের ভারসাম্য বিঘ্নিত করে 'চার ধাম প্রকল্প'-র নামে পাহাড়ের বুকে, অন্দরে যে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে তা কি এবার বন্ধ হবে?
উন্নয়নের অজুহাতে ট্যুরিজম ইন্ড্রাস্ট্রি ও অর্থপুঞ্জির নয়া কিসিমের বিনিয়োগ-মুনাফার স্বার্থে যোশীমঠ সহ সমগ্র উত্তরাখণ্ডের ঘটমান বিপর্যয় থেকে কি শিক্ষা নেবে কর্পোরেটের সেবাদাস রাষ্ট্রীয় বাহিনী?
সে গুড়ে বালি। কারণ নিরন্তর সেবাদাস থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে আর ক্ষমতায় থাকার জন্য ডান-বাম সব এক হয়ে গেছে। আসুন আওয়াজ তুলিঃ জীবন জীবিকা ও পরিবেশ বাঁচাতে হিমালয়ের উপর সমস্ত ধরনের অবৈজ্ঞানিক নির্মাণকাজ অবিলম্বে বন্ধ হোক। মানুষের সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে কোনওরকম বিঘ্ন ঘটানো চলবে না।
সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিক উদ্ধার ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ায় তার সুকুমার বৃত্তির একটা বিশেষ দিক উন্মোচিত হয়েছে। সাধারণত কাগজ খুললেই প্রিয়জন হত্যা, পরিজন ধর্ষণ, অপহরণ ও অভাবিত নৃশংসতার অপসংবাদ পাওয়া যায়। মনে হয় মানুষের মন থেকে ভালোবাসা হারিয়ে গেছে।সহানুভূতি দিগন্তে নিরুদ্দেশ।
কিন্তু শ্রমিকদের আলোয় ফেরার খবরে মানুষের মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ দেখা গিয়েছে, তাতে প্রথমে বিস্ময় ও পরে পরম সুখ অনুভব করেছি। অপরিচিত, অখ্যাত, অনাত্মীয় মানুষদের জন্য এই উদ্বেগ ও উদ্বেগমুক্তির অনুভূতির নাম সমানুভূতি। ইংরেজিতে যাকে বলে empathy। সহানুভূতি যেখানে feeling with, সমানুভূতি feeling within। এ বিপদ যেন আমারও বিপদ। এ মুক্তি যেন আমার মুক্তি।
এর ফলে বোঝা যায় সব হিংসা, নিষ্ঠুরতা, স্বার্থপরতা সত্ত্বেও "কিছু মায়া রহিয়া গিয়াছে"। চৈতন্যের গভীরে প্রজাতির জন্য মমতা এখনও খেলা করে। এখানেই মানুষ যে মানুষ তার পরিচয় রেখে যায়।
(সংগৃহীত)
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।