ভুত দেখে চমকে উঠল যেন। ভীত-সন্ত্রস্ত ফ্যাকাশে তার মুখ। রক্তশূন্য চোরের দৃষ্টি। নীলাম্বরের আকস্মিক উপস্থিতি তাকে এমনই অবাক করে দিয়েছে যে, মুখের ভিতরে তার কথা আটকে গেছে। ঠোঁটদুটো থত্থর করে কাঁপছে।
নীলাম্বরের গালে একরাশ খোঁচা খোঁচা দাড়ি। দু'দিন তিন রাত ট্রেনজার্নি করে এসেছে সে। যাত্রাপথে স্নান না, ঘুম না, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া। কিন্তু দীর্ঘ দু'বছরের পরিযায়ী শ্রম তার শরীরস্বাস্থ্যের এমন কোনো আহামরি পরিবর্তন আনেনি যে, নীলাম্বরকে দেখে তার শালাজ একেবারে চিনতেই পারবে না। আসলে, বলা নেই-কওয়া নেই, একেবারে মূর্তিমান জামাইবাবুর হঠাৎ উপস্থিতি তাকে অবাক করে দিয়েছে নিশ্চয়ই।
একটু ধাতস্থ হয়ে প্রীতি বলল, "আ...আ...আপনি... এখন...?"
নীলাম্বর বার-দুই গালের দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলল, "চলে এলাম!"
"সে এসেছেন...ভালো! কিন্তু ফোন-টোন না করে..."
ঠোঁটের ফাঁকে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে নীলাম্বর বলল, "তাহলে কী তোমাদের চমকে দিতে পারতাম?"
নীলাম্বর চারপাশে তাকিয়ে দেখল, বাড়িঘরের ছিরিছাদ বেশ পাল্টে গেছে ইতিমধ্যে। আগের সেই দারিদ্রজীর্ণ অবস্থা আর নেই। শাশুড়ি-মাতা হয়তো গোরুগুলোকে মাঠে খুঁটো সরাতে, জল খাওয়াতে গেছেন। কিন্তু তার চোখদুটো যাকে আঁকুপাঁকু খুঁজছে, তিনি কোই? কোথায় গেলেন তিনি! তাকে দু'চোখ ভরে দেখার জন্যই তো পড়িমরি করে অ্যাদ্দুর থেকে ছুটতে ছুটতে আসা!
প্রীতি হয়তো ব্যাপারটা বুঝল। সে বলল, "তাকে খুঁজছেন বুঝি?"
"হ্যাঁ, পবিত্রা কোথায়?"
"সে...সে বাড়িতে নেই!"
"কেন?... দুপুরবেলা! এ সময় বাড়িতে নেই কেন? কোথায় গেছে?"
নীলাম্বর মনঃক্ষুন্ন হল একটু। তার পবিত্রার জন্য কীভাবে যে সে বাড়ি ফিরেছে, তা কেবল সে-ই জানে! স্টেশনে ঢুকেই দেখে ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে প্লাটফর্ম। এদিকে ট্রেনটা তার ধরা চায়-ই চায়। পিঠে মস্তভারি ব্যাগ নিয়ে সে পড়িমরি দৌড় দেয়, যেন পাগলা কুকুর তাড়া করেছে তাকে। লোকজনকে ঠেলেধাক্কে গিয়ে ট্রেনের পাদানিতে যখন একটা পা রাখে, ট্রেনের শেষ কামরাটাও প্লাটফর্মের শেষ সীমা অতিক্রম করে যায়। তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে তার পা প্রায় হড়কে গেছিল! কোনক্রমে হাতলটা ধরে সে টাল সামলে নেয়। একজন যাত্রীও তাকে জামার কলার টেনে ধরে ভিতরে টেনে নেয়।
"ও ভাই, এখনই তো ট্রেনের নীচে যেতে বসেছিলেন!"
নীলাম্বর বক্তার দিকে একবার চোখ তুলে তাকায়। কিন্তু তার কথার উত্তর দেওয়ার মতো মনের অবস্থা তার ছিল না। খুব কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখে সে ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
সেই নীলাম্বর বাড়ি ফিরে পবিত্রাকে দেখতে পাবে না! দুপুর বেলায় সে নাকি কোথায় কোনবাড়ি বেড়াতে চলে গেছে! বাড়ির বউকে রান্নাবাড়ায় একটু সাহায্যও তো করতে পারত, কিন্তু তা না করে...! নীলাম্বরের মনটা ভীষণ বিরস হয়ে পড়ল।
"কোথায়... কোথায় গেছে সে! এমনিই কী পাড়াবেড়ানি হয়েছে!"
"না, মানে..."
নীলাম্বর তাকে হাত তুলে থামিয়ে দিল। সেদিন রাতের কথা তার মনে পড়ল। একা বিছানায় শুয়ে মোবাইল ঘাঁটছিল সে। তখন কারেন্ট ছিল না। প্রচণ্ড গরমে ঘুম আসছিল না কিছুতেই। ঘামে বিছানা একেবারে কাদা কাদা। অন্যদিন পরিশ্রান্ত শরীর একটু সিলিং ফ্যানের হাওয়ার পরশে বেশ কাবু হয়ে পড়ত। আর সে তলিয়ে যেত ঘুমের গহীনে। কিন্তু সেদিনের হাঁসফাঁস গরমে তার মাথার মধ্যে তীব্র জ্বালা ধরায়। ভিড় করে দুশ্চিন্তা। ঠিক তখনই ওর মনে হল... ধুর, অনেক দিনই তো বিদেশ-বিভূঁইয়ে পড়ে থাকা হল, টাকার পেছনে ছোটা গেল... আর কেন?
আসলে নীলাম্বর ছিল খুব বিমর্ষ। তার সেই বিমর্ষতা ক্লান্তির ঘুম ছিঁড়ে ফেলে তাকে স্বপ্নচারী করে তুলেছে এই গভীর রাতে। একটু আগে সে হাতের মোবাইল ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল খাটের একপাশে। পরক্ষণে আবার সেটি হাতে তুলে নেয়। মুঠোফোনের স্ক্রিন জুড়ে শোভা পাচ্ছে তার পবিত্রার মিষ্টিমধুর ছবি। দীঘার সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের উদ্দাম মুহূর্তের ছবি এটি। সে কাজে আসার পরে পবিত্রা গিয়েছিল দীঘায় বেড়াতে। সেখানে উদ্দাম জলস্রোতের সঙ্গে খেলেছিল উদ্দাম যৌবনবতী পবিত্রা। ওর গায়ে, মুখে, ঠোঁটে লেগে থাকা সেই বিন্দু বিন্দু জল সূর্যের আলোয় মুক্তোর মতো ঝলমল করছে। এই ছবি দেখার পর থেকেই নীলাম্বর যেন বিরহ-পাগল। মাথায় জ্বালা ধরেছে তার। মনটা শুধু ছুটে ছুটে বাড়ি চলে যাচ্ছে। পবিত্রার বুকে মুখ ডুবিয়ে একটা দীর্ঘ কোজাগরী রাত কাটাতে ইচ্ছে করছে তার। বাড়ি ফিরবে বলে বেশ কয়েক বার সে টিকিটও কেটে ফেলেছিল। কিন্তু আসা হয়ে ওঠেনি। তবে এবার সে আনকনফার্মেশন টিকিট নিয়েই ট্রেনে উঠে পড়েছিল।
তার শাশুড়ি তাকে খুব ভালোবাসেন। একেবারে নিজের ছেলের মতো। একদিন থালের পাশে একবাটি মাটন-কষা নামিয়ে রেখে বলেছিলেন, "বাবা নীলু, নতুন বিয়ে করেছো তুমরা। অ্যাকটা ছানাপুনা আসার আগেই দু'জনের সংসারডা তো একটু গুছায় নিতি হবে তুমাদের।" বলে, গাঁয়ের ছেলে-ছোকরাদের সঙ্গে তিনি সুদূর কেরালাতে নির্মাণশিল্পের কাজে যাবার প্রস্তাব রেখেছিলেন।
নীলাম্বর মাথা ঝাঁকিয়েছিল নীরবে। কথাটা তার শাশুড়ি-মা মন্দ বলেন নি। বিয়ের ক'দিনের মধ্যেই তো বাড়ি ছেড়ে চলে এল তারা। আগে যা-কিছু উপার্জন করেছে, হাতখরচ বাদে সব টাকাই তুলে দিয়েছে বাবার হাতে। সেই টাকা দিয়ে নীলাম্বরের জন্য ঘর উঠেছে পুবদুয়ারি। টিনের বেড়া, টিনের চাল। সিমেন্ট-বাঁধানো পাকা মেঝে। এসেছে খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল ইত্যাদি। একটা পাড়াগেঁয়ে মেয়ের পক্ষে হাত-পা ছড়িয়ে নতুন সংসারে সুন্দর করে সংসার করতে সেখানে বাঁধে না। কিন্তু পবিত্রার সেখানে ধরল না।
নীলাম্বরের বাবা ছিলেন খুব হিসেবি মানুষ। শৈশবে তার বাবা মারা যাবার পর থেকেই তিনি কাস্তে তুলে নিয়েছিলেন হাতে। মোরগ-ডাকা ভোরে উঠে তিনি মাঠে ফসল পরিচর্যায় চলে যেতেন। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝতে পারতেন, কখন কোন ফসলে লাগবে সার বা জল, কখন তাকে কেটে ঝাড়াই বাছাই করে গোলাজাত করতে হবে। আর কখনই বা কালবৈশাখী এসে তার পাকা ধানে মই দিয়ে যেতে পারে!
কিন্তু পরিবারের একটি শক্ত খুঁটিকে তিনি ধরে রাখতে পারেন নি! মাঝেমধ্যেই কারণে অকারণে পশ্চিম আকাশ ঘনান্ধকারে ঢেকে যেত; থেকে থেকে দমকা বাতাসে ঘরের টিনের চাল সশব্দে ফেটে পড়ত। তারপর একদিন এমন ঝড় এল, সেই ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরের শক্ত খুঁটিখানাই নির্মূল হয়ে উড়ে গিয়ে পড়ল অনেক অনেক দূরে।
মা সেদিন খুব কেঁদেছিল। আজও হয়তো তার জন্য মা কেঁদে কেঁদে সারা হয়! একমাত্র বংশপ্রদীপ ছিল সে। তাকে নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিল তাদের।
নীলাম্বর স্বপ্নের অনেক গভীরে ডুবে যায়। মা তাকে না-খাইয়ে কোনদিন এক দানা মুখে তোলেনি। সে বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত গভীর রাত অবধি দুই থালায় মা-ছেলের খাবার সাজিয়ে বসে থাকত। সে বাড়ি ফিরলে তার একটা স্বস্তির শ্বাস পড়ত। তখন মাকে দেখে তার মনে হত, কতো বড়ো দুশ্চিন্তার পাথর যেন তার বুক থেকে নেমে গেল! কিন্তু তাই বলে মা কোনদিন তাকে বকাঝকা করেনি। শুধু বোঝাত, "এতো রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকিস নে বাপ! তুই যতক্ষণ বাড়িতে না ফিরিস, আমার বুকডা ধড়ফড় করে।"
আজ নীলাম্বরের বুকটাও ধড়ফড় করছে বড্ড। এটা তার পবিত্রার জন্য। প্রথমদিকে একটা বাধ্যতা থাকলেও, এখন মায়ের মুখটা অনেক ঝাপসা হয়ে এসেছে তার কাছে। আসলে দৃষ্টির বাইরে গেলে সবকিছুই ঝাপসা হয়ে যায়। এখন পবিত্রার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব। দু'দিন কথা বলে না সে। আরও একটা রাত ট্রেনের খটরমটর শব্দে কাটাতে হবে; কিন্তু কষ্ট হলেও কানে ফোন তুলবে না সে। একটা সারপ্রাইজ দেবে তার পবিত্রাকে!
কিন্তু বাড়ি ফিরে পবিত্রাকে না দেখে বড্ড অভিমানী হয়ে পড়ল নীলাম্বর। তার মনে পড়ল দীঘার সমুদ্রে উদ্দাম জলকেলির কথা! তার অবর্তমানে একাকিনী পবিত্রা অমন স্ফুর্তিতে মাতোয়ারা হল কীভাবে! কই, সে তো মালাবার উপকূলে বসেও উদ্দাম জলরাশির বুকে নিজেকে সঁপে দিতে পারেনি! বরং বেশি করে অনুভব করেছে তার পবিত্রার দীর্ঘ অনুপস্থিতি! রাত্রে বিছানার একপাশে পড়ে থাকা কোলবালিশের উপস্থিতি তাকে করে তুলেছে বিরহকাতর! হৃদয়কে করেছে রক্তাক্ত! তাই বার বার সে ফিরে আসতে চেয়েছে তার প্রাণপ্রিয়ার কাছে। তার ভালোবাসার কাছে। তার সুখের কাছে।
সে চলেই আসত। কতবার অ্যাডভান্স টিকিট কেটেও রেখেছে। কিন্তু পবিত্রার লোভের জন্যই আসা হয়নি এতদিন। আরও টাকা দরকার ওর, আরও টাকা। জীবনে একা থাকবে। স্বাচ্ছন্দে ও বড়মানুষী করে চলবে সে। তাই চলার পথের ভুলভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দিত বলে শ্বশুর-শাশুড়ির ঘর ওর পছন্দ হল না!
এখন বাবার বাড়ি নিজের মতো চলতে ফিরতে নিশ্চয়ই কোনো বাধা নেই! খুবই, খুবই সুখে আছে সে!
"আসুন..."
হাতে একটা টান অনুভব করে সম্বিত ফিরে পেল নীলাম্বর। বলল, "কোথায়?"
প্রীতি উঠে দাঁড়িয়েছে। দুপুরের রান্নার যোগাড়যন্ত্র সব পড়ে থাকল। মগের জলে হাত ধুয়ে কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে সে এগিয়ে গেল নিজের ঘরের দিকে। নন্দাইকে বসবার ব্যবস্থা করবে।
"আসুন, আমার ঘরে একটু লম্বা হবেন আসুন।"
"তোমার ঘরে?"
"হ্যাঁ।"
নীলাম্বর জামাই হলেও শ্বশুর বাড়িতে ছেলের মতো পালিত। বিয়ের ছ'মাসের মধ্যেই তো বউকে নিয়ে চলে আসে এখানে। তাদের থাকার জন্য একটি স্থায়ী ঘর বরাদ্দ হয়। সেখানেই নতুন একটি ঘর উঠেছে। তার বুঝতে বাকি থাকে না, তার উপার্জিত টাকাতেই সেটি গায়ের মাথার টিনের খোলস ত্যাগ করে কলেবর পরিবর্তন করে মাথায় ছাদ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নীলাম্বের প্রশ্নের মধ্যে এই গুঢ়ার্থ লুকিয়ে ছিল। প্রীতির সেটা পড়তে বাকি থাকল না। তবুও সে হাসিমুখে বলল, "আমার ঘরে একটু চলুন!" বলে হাতটা ধরল।
নীলাম্বর অস্বীকার করে বলল, "না, আমার ঘরেই যাই বরং! শরীরটা বড্ড ক্লান্ত!" বলে পাশ ফিরে চলতে শুরু করল।
শালাজ কিংকর্তব্যবিমূঢ় দাঁড়িয়ে রইল। দু'পা এগিয়েছে এমন সময় পেছন থেকে শাশুড়ি-মা নীলাম্বরকে ডাকলেন।
"বাবা নীলু!"
ফিরে দাঁড়াল নীলাম্বর। "কেমন আছেন, মা?" এগিয়ে এসে মাথা নিচু করে প্রণাম করল সে।
শাশুড়ি নীলাম্বরের মাথায় হাত রাখলেন। কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো আশীর্বচন বেরল না। তিনি কাঁপছেন। প্রবল রৌদ্রের মধ্যে মাঠ থেকে ফিরেছেন। শরীর জুড়ে ঘামের স্রোত নামবারই কথা। কিন্তু ওঁর চোখ-মুখ কেমন ফ্যাকাশে লাগছে কেন? চিন্তাগ্রস্ত নীলাম্বর প্রশ্নটা আর একবার করল।
"আপনার শরীর ভালো তো, মা?"
"আর শরীর! বয়স কী কম হলো বাছা?"
নীলাম্বর সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। সেইসঙ্গে বাড়ির সদর গেটের দিকে চেয়ে রইল। বেশ কিছুক্ষণ হল সে বাড়িতে এসেছে। এখনও পবিত্রার দেখা নেই।
বলল, "মা, পবিত্রা কোথায় গেছে জানেন?"
মা নীলাম্বরের কথা যেন শুনতে পেলেন না। বললেন, "ও বউমা, নীলুকে নিয়ে গিয়ে তুমার ঘরে বসাও গে। কিচুমিচু খাতি দ্যাও, কখন খেয়েছে না-খেয়েছে!"
"চলুন... আসুন জাম্বু!"
"এই দুপুর বেলা...! অথচ সে..."
মা বেশ অস্বস্তিতে আছেন। তিনি অনেকক্ষণ বাড়িতে ছিলেন না। পবিত্রা কোথায় গেছে না-গেছে ঠিক কী! বউমার দিকে একবার তাকালেন তিনি। কিন্তু নীলাম্বরের চোখ এড়িয়ে সে কী ইঙ্গিত করল, তিনি ধরতে পারলেন না। কী ভেবে তিনি হেসে বললেন, "ঘুমায়ে আছে। জানো তো, ও কেমন কুম্ভকর্ণ!"
নীলাম্বরের অস্বস্তি কেটে গেল। বরং স্ত্রীর প্রতি নানা অসংলগ্ন ও অপ্রীতিকর ভাবনার জন্য মনে মনে সংকুচিত হল সে। ভাবল, পবিত্রা কেমন ঘুমকাতুরে ওর থেকে কে বেশি জানে? শরীরটা বিছানায় পড়তে না পড়তেই ঘুমের দেশের রাণী। ঠেললেও জাগে না।
নীলাম্বর ভাবে, কাঁচা ঘুম থেকে উঠলে ওর মাথা ধরে। মেজাজটা সারাবেলা খিঁচড়ে থাকে। কিন্তু আজ ওকে কাঁচা ঘুম থেকে তুলে অবাক করে দেবে সে। ওর জন্যই তো কদ্দূর থেকে ছুটতে ছুটতে আসা। সে পিছন ফেরে।
প্রীতি শাশুড়ির হাত টেনে ধরে। একটা ইঙ্গিত করে। আর নীলাম্বরকে বলে, "ওকে ডাকবেন না! খুব গালাগালি করবে।" তখন শাশুড়ি হাইহাই করে উঠলেন। নিষেধের ভঙ্গিতে নীলাম্বরকে বললেন, "শোনো...শোনো...। তুমি বউমার ঘরে গিয়ে বসো। আমি ডেকে দিচ্ছি।" কিন্তু নীলাম্বরের আর তর সয় না। সে সকল নিষেধ অমান্য করে এগিয়ে যায় নিজের ঘরের দিকে।
সিঁড়িতে পা রেখেই নীলাম্বর দেখে দু'পাশে সারিবদ্ধ টবে রক্তগোলাপ ফুটে আছে কতো সুন্দর। এটা নিশ্চয়ই পবিত্রার কীর্তি! সে একটি গোলাপ তুলে নিল সযত্নে। সচেতনতা সত্ত্বেও হাতে কাঁটা বিঁধে রক্ত বেরিয়ে এল। কিন্তু কিছুই মনে করল না সে। নাকের কাছে নিয়ে প্রাণভরে গোলাপের সুগন্ধ নিল। বাঃ, চমৎকার! এটি তার পবিত্রার খোপায় কিছুক্ষণ পরেই শোভা পাবে। বড়ো সুন্দর লাগবে ওকে দেখতে।
সে ঘরের বন্ধ দরজায় কড়া নাড়ল। আর গোলাপটা ধরে থাকল ঠিক বুকের কাছে। মুখে টেনে রাখল দিলখোলা প্রাণোচ্ছল এক হাসি। একটু পরে ছিটকিনি খোলার শব্দ হল। এবং অস্বস্তিকর গুমোটভরা বাতাসের সঙ্গে বেরিয়ে এল অবিন্যস্ত চুল, অগোছালো শাড়িতে পবিত্রা। "তু... তু... তুমি!" তার কণ্ঠে প্রবল বিস্ময়। মুখ রক্তশূন্য। তার গা হাতপা থত্থর করে ভয়ংকর রকম কাঁপছে।
নীলাম্বর কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু তখনই ঘরের মধ্য থেকে এক পুরুষকণ্ঠ ভেসে আসে, "কে গো?..."