বিবিধ

একটি আলোচনাঃ লেখিকা ডাফনে দ্যু মারিয়ের গল্প - নো মোটিভ



স্বপ্না সেন


গল্পটা ভারি সুন্দর। কবে যেন পড়েছিলাম ছোট গল্প শেষ হয়েও শেষ হয় না। রেশ থেকে যায়। সেই রেশ ধরে অভিভূত পড়ুয়া কত কল্পনার গ্রন্থি বুনতে পারে। হয়তো সারাদিন ঘুরতে ফিরতে আকাশের দিকে একপলক চেয়ে আনমনে গাছের পাতার মৃদু দোলন দেখতে দেখতে, পরিষ্কার দিনের রোদ্দুর গায়ে মেখে নিয়ে, গল্পের বিন্যাস ভেবে চলে। এমনই গল্প 'নো মোটিভ' (No Motive). লেখিকা অবশ্যই আমার প্রিয় ডাফনে দ্যু মারিয়ের (Daphne du Maurier). যিনি নিজের লেখা সম্পর্কে সব সময় বলেন, Read for yourself and see.

লেডি মারি ফেরেন (Lady Marry Farren) হঠাৎ এক সকালে স্বামীর বন্দুক ঘরে গিয়ে রিভলবারের গুলিতে নিজেকে হত্যা করেন আর ছোট্টো চিরকুটে লিখে যান তিনটে শব্দ 'Forgive me darling...'. এই ছোট্টো নিভৃত ঘটনাটি ধীরে ধীরে উদ্ভাসিত করে এক নিষ্পাপ গভীর বেদনাকে।

চৌত্রিশ বছরের মহিলা যার তিন বছরের দাম্পত্য জীবন বিশ্বাস আনন্দ ও মাধুর্যে ভরা, সন্তান সম্ভাবনায় যিনি পরিতৃপ্ত, তাঁর এই আকস্মিক চলে যাওয়ায় সকলেই ব্যাথিত ও বিমূঢ়। ডাক্তার এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হলেন যে সন্তান সম্ভাবনার ফলে কোনও এক সময়ে মানসিক বৈকল্যের কারণেই হয়তো লেডি ফেরেন আত্মহত্যা করেছেন। ফেরেন দম্পতির জীবনযাত্রায়, চারিত্রিক সততা এবং বিশ্বস্ততায়, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসায় কোনও ছিদ্র ছিল না যার রন্ধ্রপথে এই বিপর্যয় হতে পারে। লেডি ফেরেন-এর মধুর ব্যবহার সকলকে মুগ্ধ করে রেখেছিল।

আত্মহত্যার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বাটলার অর্থাৎ গৃহসেবকের কথায় লেডি ফেরেন ছিলেন স্বাভাবিক এবং হাসিখুশি। অপেক্ষা করছিলেন তিনি স্বামীর জন্য।

স্বামী স্যার জন ফেরেন (Sir John Farren) কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না স্ত্রীর এই পরিণতি। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ডিটেকটিভ ব্লেক (Blake)-কে অনুরোধ করেন মূল সত্য জানার জন্য।


ডাফনে দ্যু মারিয়ের (১৩ মে, ১৯০৭ - ১৯ এপ্রিল, ১৯৮৯)

ঘটনার চমক, বেদনা এইখানে। পরতে পরতে সত্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে এক নিষ্পাপ বালিকার জীবনের মূল কষ্টটা জানতে পারেন ব্লেক। যে ঘটনার পরিণতি তার জীবনের প্রথম পনেরটা বছর মুছে দিয়েছিল স্মৃতি থেকে, ঊনিশ বছর পরে বাটলারের সহাস্য এক উক্তিতে তা মনে পড়ে যায়। সেই দীনতার আঘাত, ব্যর্থতার বেদনা তার জীবনের পরিতৃপ্তি ছিনিয়ে নেয়।

ব্লেক কিন্তু স্যার জন ফেরেন-কে জানায় মারি ফেরেন-এর মৃত্যু সম্পর্কে ডাক্তারের ধারণাই ঠিক। এই অপাপবিদ্ধ মেয়েকে নিয়ে তিনি আর কিছুই বলতে চাইলেন না। বালিকা বয়সের নির্মম নিপীড়নের বেদনাকে তিনিও সত্যের আলোকে টেনে আনলেন না।

চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।