ইনিভালাপ্পিল মানি। এটা শুনে কেউ চিনলেন? উত্তরটা না, না এবং না, সামান্য এক দু'জন ব্যতিক্রম। এবারে তৃতীয় শব্দটা শুনে ফেলুন - বিজয়ন।
মুহূর্তে স্মৃতির টোকায় ফুটবলের ক্যারমবোর্ডে ভালবাসার স্ট্রাইকার দিয়ে বিশাল প্রাপ্তির গুটি মনের পকেটে নিখুঁতভাবে ফেলে দেবেন আপনি। আপনার চোখের সামনে ১৯৮৭ থেকে ২০০৬ - ফুটবলশিল্পর বিশাল একটা আঁকার ক্যানভাস, যেখানে অভ্রান্ত তুলিতে ছোট ছোট যাদু এঁকে যেতেন এক উদাসীন, উপাসক ফুটবল শিল্পী ইনিভালাপ্পিল মানি বিজয়ন। যার ফুটবলে মুগ্ধ আমরা চেটেপুটে খেয়ে নিতাম সেই ঘোরলাগানো ফুটবলের মাদকযাদু, যা হয়ে উঠেছিল তার পরিচিতি - আই. এম. বিজয়ন। আমরা পড়তাম "আই অ্যাম বিজয়ন"।
শুকনো পরিসংখ্যানগুলো তো ইতিহাস আর গুগলই ভাল দেয়। যা বলে ২৫ এপ্রিল ১৯৬৯-এ ত্রিচুরে জন্মানো বিজয়ন একটা অলৌকিক জাদুকরী পার্টনারশিপে ছিলেন বাইচুংএর সঙ্গে, জাতীয় দলে। ১৯৯৩, ১৯৯৭ আর ১৯৯৯-এ হন 'Indian Player of the Year' প্রথম একাধিকবার এই খেতাব জেতার মালিক হয়ে। ২০০৩য়ে এসে গিয়েছিল 'অর্জুন'। ২০ বছরের কেরিয়ারে ৫টি ক্লাবে খেলা, ৩৮-এ অবসর ২০০৬-এ এসে। ঐ ৫ ক্লাবের মধ্যে মোহন (৩ বছর) আর ইস্ট (৩ বছর) ছিল বলে কৃতজ্ঞ কলকাতা আজও চোখ বুজে দেখে সেই কালো হরিণ চোখ আর পা দুটোকে, যা দিয়ে লেখা ইতিহাস আজও সযত্নে গচ্ছিত আছে ৯০ দশক আর নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকের ময়দান-যুবভারতীর ঘাসে আর গ্যালারীতে। অবসরের পরে ঘরের শহরে ফুটবল একাডেমী করা তাকেই মানাত, যিনি মালয়েশিয়া আর থাইল্যান্ডের একাধিক ক্লাব থেকে ডাক পেয়েও ভারতের ক্লাবেই খেলে গেছেন পুরো কেরিয়ারটাই।
গরিবিতে ঘেরা পরিবার সামলাতে ত্রিচুরে মিউনিসিপাল মাঠে সোডা বিক্রি করে জীবন শুরু যার (বোতলে ১০ পয়সা লাভে), তার কেরালা পুলিস দলে জায়গা পাওয়া, ঘরোয়া ফুটবলে বড় নাম হয়ে যাওয়া, তারপর একসময় সর্বাধিক উপার্জনকারী নিয়মিত ভারতীয় ফুটবলার হওয়া, প্রায় এক অলৌকিক গল্প। ১২ সেকেন্ডে ভুটানকে তার দেওয়া গোল (SAF/১৯৯৯) আজও তৃতীয় দ্রুততম আন্তর্জাতিক গোল, এ বিশ্বে। ৭৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৪০ গোল ছিল তার, ভারতের হয়ে।
গুগলের পরিসংখ্যানীয় কচকচিতে এভাবেই ধরা আছে 'কালো হরিণ'-এর বিদ্যুতময়, বর্ণময় ক্লাব কেরিয়ার -
"He had a passion for the game of football, and somehow caught the eye of the then DGP of Kerala, M. K. Joseph who got him selected for the Kerala Police football Club at the age of 17 years. Vijayan delivered brilliant performance for Kerala Police at Quilon Nationals 1987, and was able to impress the national football fraternity very soon with his impeccable skills and highly aggressive style of playing.
He continued to play for Kerala Police until the year 1991, when he switched to Mohun Bagan Club. He came back to Kerala Police in 1992 and the next year switched back to Mohun Bagan. The very next year in 1994 he joined JCT Mills Fagwara and stayed with them for 3 years till 1997, when he left JCT to join FC Kochin. After spending one year tenure with the club, he again moved to Mohun Bagan in 1998 and came back to FC Kochin in 1999.
Vijayan left FC Cochin in 2001 and joined East Bengal Club, which he left in 2002 to join JCT Mills Phagwara once again. After finishing a two-year stint with the club, he left JCT in 2004 and joined Churchill Brothers S.C. He left the club after one year and moved to East Bengal Club in 2005, which was his last professional football club as an active football player. He left East Bengal in the year 2006."
এসবের অনেক দূরে, নষ্টালজিয়া আক্রান্ত আমার চোখদুটো খ্যাপার মত আজও খুঁজে ফেরে এক পরশপাথর, যেখানে একটা 'কালো হরিণ' আজও তার অক্লান্ত জাদুকরী দৌড়, স্কিল, ড্রিবলিং আর স্ট্রাইকিং এবিলিটিতে জিতে নিচ্ছেন এক ভিনরাজ্যের সাধারণ ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়।
আজও যেখানে কান পাতলে শোনা যায় এক ফুটবলের মাতৃভাষার সগৌরব আত্মপরিচয়ের - "আই অ্যাম বিজয়ন"।
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।