বিবিধ

রবীন্দ্র-কথা




অবজ্ঞা-অজ্ঞতা

অবজ্ঞা অজ্ঞতারই নামান্তর। জানবার শক্তির অভাব এবং ভালোবাসবার শক্তির অভাব একই সঙ্গে ঘটে। যে মানুষ মানুষের অন্তরে প্রবেশ করতে পারে সেই তো মানুষকে শ্রদ্ধা করতে পারে; আত্মার ক্ষীণতাবশতই যার সেই মহৎ অধিকার নেই, দরজা পর্যন্ত গিয়ে আর বেশি যে এগোতে পারে না, অহংকারের দ্বারা সেই তো আপনার দৈন্যকেই প্রকাশ করে। মমত্বের অভাব মাহাত্ম্যেরই অভাব।

অভিনয়

যে দর্শক তোমার অভিনয় দেখিতে আসিয়াছে তাহার কি নিজের সম্বল কানা-কড়িও নাই? সে কি শিশু? বিশ্বাস করিয়া তাহার ওপরে কি কোনো বিষয়েই নির্ভর করিবার জো নাই? যদি তাহা সত্য হয়, তবে দ্বিগুণ দাম দিলেও এমন সকল লোককে টিকিট বেচিতে নাই।

এ তো আদালতের কাছে সাক্ষ্য দেওয়া নয় যে, প্রত্যেক কথাটা হলফ করিয়া প্রমাণ করিতে হইবে। যাহারা বিশ্বাস করিবার জন্য, আনন্দ করিবার জন্য আসিয়াছে, তাহাদিগকে এতো ঠকাইবার আয়োজন কেন? তাহারা নিজের কল্পনাশক্তি বাড়িতে চাবিবন্ধ করিয়া আসে নাই। কতক তুমি বোঝাইবে, কতক তাহারা বুঝিবে, তোমার সহিত তাহাদের এইরূপ আপসের সম্বন্ধ।

অভিপ্রায়ের স্বাধীনতা

পথ নানা; অভিপ্রায়টি আমার, শক্তিটি আমার। যদি পথের বৈচিত্র রুদ্ধ করি, যদি একই বাঁধা পথ থাকে, তাহলে অভিপ্রায়ের স্বাধীনতা থাকে না - তাহলে কলের চাকার মতো চলতে হয়। সেই কলের চাকার পথটাকে চাকার স্বকীয় পথ বলে গৌরব করার মতো অদ্ভুত প্রহসন আর জগতে নেই।

অভিশপ্ত জাতি ও ধর্ম

মানুষকে কৃত্রিম পুণ্যের দোহাই দিয়ে দূরে রেখেছি, তারই অভিশাপে আজ সমস্ত জাতি অভিশপ্ত। দেশজোড়া এতো বড় মোহকে যদি আমরা ধর্মের সিংহাসনে স্থির-প্রতিষ্ঠ করে বসিয়ে রাখি তবে শত্রুকে বাইরে খোঁজবার বিড়ম্বনা কেন?

অমর শক্তি

জগতে কাহারও সাধ্য নাই, দুঃখের শক্তিকে, ত্যাগের শক্তিকে, ধর্মের শক্তিকে বলির পশুর মতো শিকল দিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারে। তাহা হারিয়া যেত, তাহা মরিয়া অমর হয়, এবং মাংশপেশি আপন জয়স্তম্ভ নির্মাণ করিতে গিয়া হঠাৎ দেখিতে পায় সে পক্ষাঘাতে অচল হইয়াছে।

অহং

অহংটাই পৃথিবীর মধ্যে সকলের চেয়ে বড়ো চোর। সে স্বয়ং ভগবানের সামগ্রীও নিজের বলিয়া দাবি করিতে কুণ্ঠিত হয় না।

সৌজন্যেঃ অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায়

চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।