গল্প ও অণুগল্প

রমেনদা, মাস্ক এবং একটা বেঁচে ওঠার গল্প (রম্যরচনা)



মিন্টু দাস


বললাম রমেনদা, তুমি তো খুব শক্তপোক্ত লোক, সহজে অসুস্থ হ‌ও না (একটু পেটপাতলা এই যা, মানে বায়ু এবং পিত্ত দোষ আছে এবং মাঝে মাঝে লুজ় মোশন হয়ে যায় আর কি!)। তা কি এমন হল, যে এভাবে অসুস্থ হয়ে গেলে! দু'দিন তো তোমার কোনও জ্ঞানও ছিল না! বৌদি এখনও খুব কান্নাকাটি করছে জানো?

রমেনদা বলল - আর বলিস না ভাই, মাস্ক!

মাস্ক? মানে? ব্যাপারটা তো ঠিক বুঝলাম না। একটু বুঝিয়ে বলো না গুরু।

আরে ভাই মাস্কের জন্যই, আজ আমার এই অবস্থা!

ও, এই ব্যাপার! তুমি মাস্ক না পরে কোথাও গেছিলে, আর তারপর...

আরে ধুর ধুর, কে বলেছে আমি মাস্ক পরিনি? তুই তো জানিস আমি মাস্ক ছাড়া কোথাও যাই না, আর যেতেও পারি না।

তবে?

তবে আর কি! গেল সোমবার একটু বাজারে গেছিলাম। দেখি আলু বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা কেজি দরে! কিন্তু ওই এক কন্ডিশন, মাস্ক পরে থাকতে হবে! এই দুর্মূল্যের বাজারে না কিনে কি থাকতে পারি বল?

একদম। তুমি একদম ঠিক কাজ করেছো রমেনদা! তা ক'কেজি নিলে গুরু? দশ-বারো কেজি হবে বস্? তা আমাকে ২ কিলো দেবে গো? তোমার বৌমা আলু খেতে বড্ড ভালোবাসে... এত দাম, তাই কিনতে পারছিনা গো! তা দেবে তো? নিশ্চয়ই দেবে, আমি না তোমার চ্যালা মানে শিষ্য; তাইনা বলো? দেবে না আমাকে আলু? আমাকে আলু দেবে না? কি গো রেগে যাচ্ছো যে বড়ো। আচ্ছা ঠিক আছে বাবা, ঠিক আছে, ওসব কথা এখন বাদ! তা আলু কিনতে গিয়ে অসুস্থ হলে কিভাবে? ও বুঝেছি দাদা, বুঝেছি। তুমি তো আবার ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাও! তা ওই ১২ কেজি আলু বয়ে নিয়ে এসে, আলুর ভারেই অসুস্থ হয়ে পড়েছো, তাই না রমেনদা?

না রে পাগলা, টানা ২ ঘন্টা লাইন দিয়ে, যখন প্রায় আলু পাব পাব করছি, তার আগেই ভিড়ের গুঁতোগুঁতিতে মাস্কটা গেল খুলে!

তা আবার মাস্কটা পরে নিলেই তো পারতে, তাড়াহুড়ো করার কি দরকার ছিল বলো দিকিনি?

আরে খুলে গেল বলিনি... খুলে গেল বলতে ছিঁড়ে গেল!

ও বুঝেছি। তোমার মাস্কটা ছিঁড়ে গেল, আর ওরা তোমাকে আলু না দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিল, তাইতো? আর সেই শোকে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে! ঠিক বলেছি তো রমেনদা?

না, ভাইটু আমার! আমার সাথেই আলু নেবার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল শ্যামলদা! দাদার মুখে ছিল একটা মাস্ক আর পকেটে একটা। তো দাদাকে বললাম, দাদা নতুন মাস্ক বুঝি? এখনও ব্যবহার করা হয়নি?

শ্যামলদা বললেন, না মানে এই আর কি।

আমি বললাম বুঝে গেছি দাদা, এই মাস্কটা আমি নিলাম; নইলে আলু পাবো না। বুঝলেন কিনা।

উনি কিছু বললেন না, এমনি এমনি দিয়ে দিলেন? ওই কিপ্টে মানুষটার কাছ থেকে একটা মাস্ক বাগালে কি করে দাদা?

আরে আগে জানলে কি আর বাগাতুম, না মানে নিতুম!

বুঝেছি, বুঝেছি, দাদা বুঝেছি। শ্যামলদার অভিশাপেই আজ তোমার এই অবস্থা।

আরে না রে, অভিশাপে নয় রে, অভিশাপে নয়। ওর মাস্কের জন্যই আজ আমার এই অবস্থা!

মানে? বলছো কি‌? ওই মাস্কটা!

হ্যাঁ, ওই মাস্কটা শুধু ব্যবহার করাই হয়নি, ওই মাস্ক পরে উনি নয়বার হেঁচেছেন, দশবার কেশেছেন, তিনবার ঢেঁকুর তুলেছেন, আর ও হ্যাঁ হ্যাঁ, একবার নাকি খানিকটা সর্দি লেগে গেছিল মাস্কটাতে!

ওয়াক, ওয়াক, থু... থু... থু... তুমি এখনও বেঁচে আছো কি করে রমেনদা?

বেঁচে কি আর ছিলাম ভাই, মরেই তো গেছিলাম! বমি করতে করতে হার্ট ফেল করে মরেই গেছিলাম! তারপর তোর বৌদির কান্নাকাটিতে আবার জীবন ফিরে পেলাম!

উপর থেকে তোমাকে ছাড়লো?

ছাড়ছিল না রে ভাই, ছাড়ছিল না! শুধুমাত্র তোর বৌদির জন্য‌ই এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম রে! বউটা আমার সাক্ষাৎ লক্ষী! ও আমার লক্ষিন্দর সম জীবনে সাক্ষাৎ বেহুলা রে! হলফ করে বলতে পারি আমি সত্যবান না হলেও তোর বৌদি কিন্তু আমার জীবনে সাবিত্রী! আমি তো ধর মরে গেছিলাম, দেখি তোর বৌদির কি কান্নাকাটি! যম স্যারকে বললাম - স্যার আমি মরে গেছি ক্ষতি নেই, কিন্তু কাঁদতে কাঁদতে এবার বউটা তো আমার মরে যাবে! আর বউ মরে গেলে আমি মরে গিয়েও বাঁচবো না স্যার! যম স্যারের আবার খুব নরম মন, মেয়েদের কান্না আবার তিনি একেবারে সহ্য করতে পারেন না! বুঝলি কিনা?

বুঝলুম।

কি বুঝলি?

এবার সুস্থ হওয়ার পর আরও বেশি মিথ্যে কথা বলতে শিখেছ!

জানতাম তুই বিশ্বাস করবি না, এই জন্যই বলছিলাম না।

যম স্যারও আমাকে প‌ইপ‌ই করে নিষেধ করেছিলেন, কাউকে বলতে। আর কাউকে বলবো না, তোর বউদিকেও বলব না সত্যিটা... দূর ভালো লাগেনা। যা, এখন বাড়ি যা। ব‌উটাকে একটু ভিডিও কল করবো।

গ্রাফিক্সঃ সমন্বয় আর্কাইভ।