মধ্য এবং নবজাগরণের যুগ। রোম সাম্রাজ্যের পতনের পর সারা ইউরোপ অবমূল্যায়নে প্রবেশ করল, যাকে মধ্যযুগ বলা হয়। এই সময়ে গির্জাই ছিল সংস্কৃতির পরিচালক। যাদেরকে ডাইনি স্বভাবের জন্য এবং শয়তানের ব্যাপারী বলে মানুষ সন্দেহ করত, তাদেরকে নির্দয়ভাবে অনুসন্ধান করে বার করা হতো, তাদের বিচার হতো এবং সাধারণত শেষ পরিণতি হিসেবে ফাঁসি হতো। একই সময়ে জাদুবিদ্যার অগ্রগতি ছিল বহুজন মনোরঞ্জনের জন্য। King Arthur ও তাঁর পরিষদবর্গের মনোরঞ্জনকারী জাদুকরগণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন মার্লিন (Merlin)। মার্লিন-এর বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি বিরাট প্রস্তরখণ্ড রাতারাতি বহু দূরবর্তীস্থান থেকে এনে খাড়া করে দাঁড় করাতে পারতেন। প্রাচীন ফরাসি সাহিত্যে, মহকাব্যে এবং জার্মানি ও স্ক্যানডিনেভিয়ার লোককাহিনীতে দেখা গেছে দৈত্যগন, বামনগণ, ডাইনরা ইতস্তত ঘুরে বেড়াত। ইংল্যান্ডে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বিখ্যাত Roger Bacon-এর মত অপরসায়নবিদ ধূমায়িত কাঁসার পাত্র ও বুদবুদপূর্ন flasks নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এক অবিস্মরণীয় দার্শনিক প্রস্তরের অনুসন্ধানে, যা অল্পমূল্যের ধাতুকে স্বর্ণখণ্ডে পরিণত করবে।
ভবঘুরে জাদুকরগন তাদের কৌশল প্রদর্শন করতেন খোলা রাস্তায় ও মেলায়। যদিও তারা ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের নগর আধিকারিকগন ও যাজকগণ উভয়ের কাছে নিম্নজাতীয় জীব বলে প্রতিভাত হতো এবং তারা কোনো সহানুভূতি পেত না। এমনকি যারা সাধারণ হাতসাফাই-এর খেলা দেখাতো তাদের বিপদ হল এই যে সরকারী অনুসন্ধানকারী দল তাদেরকে ধরে নিয়ে যেত এবং জাদুবিদ্যার অনুশীলনের দোষে দোষারোপ করত। এইসব মনোরঞ্জনকারীকে নির্দোষ হিসেবে প্রতিপন্ন করে Rozer Bacon তাদের এবং তাদের কৌশলগুলি ভাষায় এমনভাবে বর্ণনা করেছিলেন যে তারা আধুনিক জাদুকর ও স্বরক্ষেপকদের মতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
ধর্মযুদ্ধকালে ঝাড়ফুঁক, ওঝা, মোহমুগ্ধকারীদের গল্পসহ Charlemagne-এর প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনী, তার বিখ্যাত মল্লবীর ও ভ্রমণকারীদের কাহিনী বহন করে এনেছিল, অলৌকিক পূর্বদেশের বিস্ময়কর উপকথা। এইসব অভিনব কাহিনী অবশেষে অ্যারিস্টো (Aristo) এবং অপর জাদুকররা নবজাগরণের মহাকাব্যে তাদের স্থান করে নিয়েছিল এবং এদের মধ্যে দিয়ে সাধারণের পুতুলনাচের বিবৃতিও প্রকাশ পেয়েছিল।
ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে ইংরাজিতে জাদুবিদ্যার কৌশল-সম্বলিত প্রথম পুস্তক প্রকাশিত হয়েছিল। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম Reginald Scott-এর 'The Discovery of Witch-craft' প্রকাশিত হয় ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে। Scott-এর পুস্তকে বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে জাদুকরদের জাদুবিদ্যার পদ্ধতি ও হাতসাফাইকারীদের পদ্ধতির ব্যাখ্যা ছিল। এই পুস্তকে আরও দেখা যায় যে সেই সময়ে তুলনামূলকভাবে ব্যবহার করা কার্যকরী তথ্যভাণ্ডারের ইতিবৃত্ত জাদুকরদের জানা ছিল। এই পুস্তকে আরও দেখা গেছে যে দর্শনীয় দৃশ্যের প্রতিবেদনে, যাহা Mailbourne Christopher নির্দিষ্ট করে দেখিয়েছেন। ষোড়শ শতাব্দীর দুজন বিখ্যাত অপেশাদার জাদুকরের একজন ইতালীর Boccal এবং অপরজন স্পেনদেশীয় Dalmatius.
সেকালের সব জাদুকরগণই দরিদ্র ছিলেন না বা ভবঘুরে হিসেবে পথে জাদু প্রদর্শনকারীও ছিলেন না। তখনও, এখনকার মতো বিত্তশালী ব্যক্তিগণ জাদু দেখতে ভালবাসতেন। Hieronymus Scotto একজন ইতালীয়, সম্ভবত ষোড়শ শতাব্দীর প্রখ্যাত জাদুবিদ্যা প্রদর্শনকারী ছিলেন। তিনি তাঁর প্রদর্শনীর জন্য সামান্য অর্থই গ্রহণ করতেন। যা তিনি ইংলন্ডেশ্বরী Queen Elizabeth I এবং অন্যান্যদের দিয়ে দিতেন এবং পরিবর্তে তাঁকে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক দৌত্যের ভার দেওয়া হতো।
চিত্রঃ লেখকের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে প্রাপ্ত।