আজ সেই দিন যা কিনা আমার কাছে আনন্দের নয়, আতঙ্কের। জন্মের সাথে সাথেই যখন মৃত্যু নির্দিষ্ট হয়ে যায় তখন ভয় লাগে বৈকি! তবে সে ভয় মৃত্যুর নয়। জীবনের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য শেষ না করেই মৃত্যুর আলিঙ্গনাবদ্ধ হবার ভয়।
এখনও অনেক অনেক কাজ বাকি, বাকি অনেক অনেক দায় ও দায়িত্ব পূরণের - এ কথা মনে আসলেই জন্মদিনটা আর আনন্দের থাকে না, আতঙ্কের হয়ে যায়।
কে যে কখন এই জীবনের শেষ মুহূর্ত কাটিয়ে মৃত্যুর ফাঁদে পা দেবে তা না জানতে পারায় আতঙ্ক বাড়ে, কমে না।
জীবন কি শুধু দায় আর দায়িত্বের? উপভোগ আর আনন্দ বলে কিছু নেই?
আনন্দ কি সাফল্যের হাত ধরেই আসে? শোকের অথবা যন্ত্রণার কি একান্ত নিজস্ব কোনও আনন্দ নেই? আছে। অবশ্যই আছে। কিন্তু সে সুখের কোনও বাহ্যিক উজ্জ্বলতা নেই, অথচ একান্ত গভীরে এক আশ্চর্য সুন্দর শান্তি আছে। এই বিশেষ দিনে আমি সেই আশ্চর্য সুন্দর শান্তির খোঁজ করব অবসরে। স্মৃতির পাতা উলটে খুঁজে নেব সুখ, শান্তি আর আনন্দ উপভোগের সহজ ও আশ্চর্যজনক পথগুলো। এখন যে পথের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় জাগে মনে। বিশ্বাস হতে চায় না কিছুতেই। অবিশ্বাসের গণ্ডিতে বাঁধা পড়ে জীবন কাটিয়ে যাবার কৌশল রপ্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। কিন্তু কিছু কৌশল সবাই রপ্ত করতে পারে না।
এই না পারাগুলো বড় হয়ে দাঁড়ায় আজকের এই বিশেষ দিনে। এই বিশেষ দিনটা শুধু আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমার ব্যর্থতা। আমার অসফলতার ঘ্রাণ বেয়ে আমার চারপাশে অসংখ্য পোকামাকড় আর পিঁপড়ের সারি। কেক কাটা টেবিলের গায়ে লেগে থাকা ক্রিমে পা পিছলে যাচ্ছে পিঁপড়ের দলের আর আমি চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছি দায় থেকে, দায়িত্ব থেকে, প্রেম থেকে, স্নেহ থেকে, ভালবাসা থেকে, ঘৃণা থেকে, লাভ থেকে আর লোভ থেকে। আর বুঝতে চেষ্টা করছি এই চোখ ফেরানোর মাধ্যমে কতটা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব মৃত্যুকে অথবা মৃত্যুর এই অ্যালার্মকে। আমি সৃষ্টিশীল মানুষ তাই অ্যালার্মের টোন বদলে নিয়েছি জীবন - Zee নেটওয়ার্কে। আজ সারাদিন স্নুজ মোডে পাঁচ মিনিট অন্তর যে বলতে থাকবে "হ্যাপি বার্থডে টু ইউ" আর সাদাকালো স্বপ্ন শেষ করার তাগিদে আমি স্নুজ টিপে পিছিয়ে দিতে চাইছি মৃত্যুর দিনক্ষণ অথচ অ্যালার্ম আমাকে সর্বক্ষণ মনে করিয়ে দেয় জন্মকালীন বাধ্যতামূলক মৃত্যুর অঙ্গীকার। আমি ভয় পাই অসম্পূর্ণতাকে তাই এই জন্মদিনে আমি সম্পূর্ণ হবার অঙ্গীকার নিয়ে ঘুমোতে যাচ্ছি। শুভেচ্ছাবার্তা আর মৃত্যুর অ্যালার্ম বুঝি মধ্যরাতের পর একাকার হয়ে যাবে! হয়ে যাক। একাকার হয়ে যাক প্রেম, ভালবাসা, স্নেহ, ঘৃণা, জন্মদিন আর মৃত্যুদিনের আনন্দ ও আতঙ্ক।
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।