বিবিধ

যাঁদের কণ্ঠস্বর আজও ভোলা যায়নি



দেবাশিস সেনগুপ্ত


বেতারবাহিত তিনটি অমর কণ্ঠ, হারিয়ে গিয়েও যা হারায়নি, যাঁদের উত্থান ফিনিক্স পাখির মতোই।


কিশোর ভিমানী

১৫ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে ছবির ১ম জনের নশ্বর দেহ বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে। আমার মতো অনেকের কানে আজও বেজে ওঠার জন্য ভাবনায় রয়ে গেছে তাঁর অমর ব্যারিটোন কণ্ঠ। 'দি স্টেটসম্যান' পত্রিকায় ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে খেলা নিয়ে লিখতেন, 'The Accidental Godman'। এছাড়াও আরও অনেক বই লিখেছেন, কিন্তু ৭০, ৮০, ৯০-এর দশক জানে ৮০ বছর বেঁচে থাকা কিশোর ভিমানীর অমর ব্যারিটোনের কথা। ওটাই ছিল তাঁর সেরা পরিচয়। এখনও শিউরে উঠি যখন মনে পড়ে, তাঁর ব্যারিটোনে শোনা "India is smelling victory. West Indies is also very much in the race. Nothing is impossible." এই "Nothing is impossible" বলাটাই ছিল তাঁর একচ্ছত্র জাদু, যাতে মোহিত হয়ে রেডিওতে স্থানু হয়ে যেতেন ক্রিকেট শ্রোতারা।


সুরেশ সারাইয়া


স্যার ডন ব্রাডম্যান-এর সাথে সুরেশ সারাইয়া।

৭৬ বছর বেঁচে থাকার পরে ১১ জুলাই, ২০১২ তারিখে চলে গেছেন ছবির ২য় জন, সুরেশ সারাইয়া। তাঁর মতো অত মোলায়েম গলা বেতার ধারাভাষ্যে খুব কমই এসেছে। ৬০, ৭০ এমনকি ৮০-এর দশকেও তাঁর কণ্ঠস্বরে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকতেন শ্রোতারা। ৬০-এর দশকের পুরোটা আর ৭০-এর দশকের প্রথমার্ধে দূরদর্শনবিহীন ক্রিকেটপ্রেমীরা তাঁর কণ্ঠ দিয়েই 'খেলা দেখতেন'। এখনও কানে ভাসে তাঁর গলায় "...and here is Andy Roberts coming in to bowl to Anshuman Gaikwad and he pushes it gently to the offside where short point would have been." তাঁর গলায় "would have been" শুনে পরিষ্কার একটা 'শর্ট পয়েন্ট' পজিশন দেখে ফেলতেন শ্রোতারা।


অনন্ত শীতলবাদ


অনন্ত শীতলবাদ

ছবির ৩য় জন হারিয়ে গেছেন ৮০ বছর বয়সে, ৩ আগস্ট, ২০১৯ তারিখে। নিজের গলার স্বরক্ষেপে বেতারবাহিত সংগ্রহযোগ্য ছবি আঁকতেন অনন্ত শীতলবাদ। ইংরেজীকে 'দেশী ভাষা' মনে হতো তাঁর গলায়। ৭০, ৮০-এর দশকজুড়ে ওই কম্যান্ড, ইংরেজীর উপর, আর হবে কি কখনও? হঠাৎ করে চমক লাগে আজও, যখন আনমনে আজও কানে ভেসে আসে "Gavaskar plays it with mid bat straight to the fielder posted at mid on and there is no possibility of a run." এই 'possibility' শব্দটার উচ্চারণেই আলো হয়ে যেত চারপাশ, যে আলোয় ছবিটা দেখে ফেলতেন তাঁর শ্রোতারা।

ভালো থাকুন, আমার কৈশোর যৌবনের রেডিওতে 'রিলে শোনা'র তিন আলোকবর্তিকা - কিশোর ভিমানী, সুরেশ সারাইয়া এবং অনন্ত শীতলবাদ।

চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।