গল্প ও অণুগল্প

নিমন্ত্রণ (অণুগল্প)



ইকবাল হোসেন


ছুটির দিন। রুটিন মাফিক ঘুম ভেঙেছে মোবাইলের এলার্মে। সাপ্তাহিক বাজারের বড় একটা প্যারা থাকলেও শরীরটা সায় দিচ্ছিল না বলে বিছানার এপাশ ওপাশ করছিলাম। রান্নাঘর থেকে হাতা-খুন্তির টুংটাং শব্দ আসছে কানে। সকালের নাস্তা বানাচ্ছে বউ। এমন সময় মোবাইলের চিরচেনা রিংটোনটা বেজে উঠে জানান দিল কেউ একজন মনে করেছে এই সকালেই।

ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি 'আসলাম' লেখা। আমার অফিসেই কাজ করে। আমার বেশ জুনিয়র সে। অফিস বা অন্য কোথাও আমাকে অসম্ভব ভক্তি শ্রদ্ধা করে ছেলেটা। জানিনা এর কারণ কি? হয়তো হাসি মুখে একটু কুশল বিনিময় বা টুকটাক খোঁজ নেয় পরিবারের।

কলটা রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিতেই শ্রদ্ধা মেশানো 'সালাম'। উত্তর দেবার পর আবদার মেশানো কণ্ঠে, ভাই আজ দুপুরে আমার এখানে আপনার আর ভাবির নিমন্ত্রণ। আসতেই হবে। না বলা যাবে না।

আমি তখন বললাম, না ভাই, আজ আমার একটা জরুরি কাজ আছে। কোনওভাবেই তোমার ওখানে যাওয়া সম্ভব না। অন্য একদিন হবে।

ফোনটা রাখতেই বউ এসে বললো, সকাল সকাল এমন একটা মিথ্যা বলার কি দরকার ছিল!

তোমার তো কোনও কাজ নেই আজ।

মুচকি হেসে বললাম, তাহলে তোমাকে ছোট একটা গল্প শোনাই। তোমার সাথে বিয়ের আগে একবার আসলামের বাড়ীতে দাওয়াত খেতে গিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। দাওয়াতে মানুষ আমি একজন কিন্তু আয়োজন অন্তত দশজনের। বোঝো ব্যাপারটা।

আজ আবার দুজনকেই যেতে বলেছে। আমি তো আসলামকে চিনি। এলাহি কান্ড করবে নিশ্চয়। ছেলেটার বেতনই বা কত! হয়তো অর্ধেক খরচ করে ফেলবে আমাদের জন্য।

পুরো মাসটা বেচারার ভীষন অর্থকষ্টে কাটবে। ধার দেনা করবে শেষে।

তারচেয়ে সেই ভালো, ছোট একটু মিথ্যা দিয়ে বর্তমান দুর্মূল্যের এই বাজারে নিমন্ত্রণ রক্ষা না করে বড় ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দিলাম একটা পরিবারকে।