সারাদিনের ঘরকন্নায় কোনদিনই মন নেই সুমনার। নিত্যদিনের টাকাপয়সা, সঞ্চয় আর সম্পর্কের হিসেব কোনোটাই ঠিক আসে না তার। যদিও রঞ্জন কোনোদিনও তার ওপর কিছু চাপিয়ে দেয়নি, কোনো কিছুতেই বাধা দেয় না, তবুও সুমনা খুব অস্থির হয়ে থাকে। তার সর্বদাই মনে হয় ছাত্রজীবনে সে কিছু স্বপ্ন দেখত, দিন বদলের, হয়ত যৌবনের তাড়নায়। তার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল, উত্তরবঙ্গের কোনো এক ছোট্ট গ্রামে পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একটি স্কুলে স্থানীয় ছোট ছোট বাচ্চাদের সে পড়াবে, আর তাদের সঙ্গে সে ভাগ করে নেবে এক সুন্দর সহজ সরল পৃথিবীর স্বপ্ন।
কিন্তু কোথায় কী! আজ সে করপোরেট জগতের উচ্চপদস্থ অফিসারের স্ত্রী। মোটামুটি উচ্চ মধ্যবিত্ত সফল জীবনের যা কিছু মাপকাঠি, সবই তাদের করায়ত্ত। তার জগতে তথাকথিত সংস্কৃতিবান শিক্ষিত উচ্চবিত্ত মানুষের আনাগোনা। সে গান শোনে, বই পড়ে, গরীব দুঃস্থ মানুষদের যথাসম্ভব সাহায্য করে। সবার আনন্দে খুশি হয়, তবু হতাশা তার পিছু ছাড়ে না।
রোজ রাতে একা জানালার শিকে মাথা রেখে ওই এক চিলতে আকাশের দিকে তাকিয়ে পাগলের মতো কামনা করে একদিন, একদিন সে ঠিক চলে যাবে তার স্বপ্নের গ্রামে, পাহাড়ের কোলে তিস্তার পাড়ে, শিশুদের মাঝে, যেখানে সে শেষ মুহূর্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবে, তার মুক্তি হবে, ফিরে যাবে এক সুন্দর সহজ সরল পৃথিবীর স্বপ্নে।