বোতাম খুলেছি। পোশাক খুলিনি এখনও। দূর থেকে তুমি কিছু বুঝবে, কিছুটা বুঝবে না। রাতের নক্ষত্র চুপিসারে দিনের আলোয় খোঁজ নেয় অন্ধকার কত প্রিয় ছিল আমাদের। অদ্ভুত কৃত্রিম শীতলতা গায়ে মেখে আমাদের উষ্ণতার বিনিময়পর্ব।
পকেট ফাঁকা তাই বিনিময়ে ভরসা রেখেছি। আদরে, ভালবাসায় ক্রমশ নিজেকে নিঃস্ব করে মেপেছি রাজা আর ফকিরের সামাজিক দূরত্ব। নিরাপত্তার জালে আটকে পড়া মৌমাছির ভিড়ে তোমার ছবি দেখে বুঝতে পারি না আনন্দ করব নাকি শোকজ্ঞাপন!
কত দূর থেকে কত কাছে আসা যায় তুমিই শেখালে। অক্ষর, বর্ণমালার নাভিতে উষ্ণশ্বাসের ব্যবহারে ক্রমশ গলে গলে পড়ছে অভিমান। রাতের আলোর কাছে হেরে যেতে ইচ্ছে হয় আমার, তোমারও। অথচ, জিতে যাবার শখ ষোলো আনা। বোতাম খোলার শেষ পর্বে তাই অপেক্ষা করেছি। পোশাক খোলার শুরু থেকে শেষ তাই অপেক্ষমান ভালবাসা।
এ অপেক্ষা জিতে যাবার নাকি হেরে যাবার ইচ্ছের ঘড়িতে নিজেকে বেঁধে রাখে! আমি জানি না। তুমিও জানো না, আমি জানি। তাই, কথায় কথায় এত হয়রানি, এত মল্লযুদ্ধ। অভিমান নগ্ন হয়ে সামনে দাঁড়ালে আদরের ইচ্ছে চলে যায়। মনে হয়, অভিমানী হয়ে তাকে কষ্ট দিই। সমস্ত চঞ্চলতার, সমস্ত উত্তেজনার ভুল পাঠ করে আমরা দু'জন দু'দিকে মুখ ফিরিয়ে নিই। পাশ ফিরে শুই।
শীৎকারের সুরে জেগে ওঠা দুপুরের রোদ প্রতিবার বিস্মিত হয় শীততাপ যন্ত্রের মায়ায়। শরীর নিজেকে নিঃস্ব করে দেয় সুখের সন্ধানে। কোন সুখ? প্রকৃতি জানে না। পুরুষ নিজেকে সুখী মনে করতে চায়। পারে না। বিন্দু বিন্দু করে জমা অভিযোগের সিন্ধু নদীর জল তার খোলা বুক ছুঁয়ে বয়ে যায় অনন্তের দিকে। মুহূর্তের সাধনায় যে সঙ্গীত সৃষ্টি হল তার স্মৃতি প্রকৃতির লতায় পাতায় আর পুরুষের শিকড়ে। ঘরে ঘরে অবসরে এই অভিনয়-শিল্প জীবনকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে। তোমার বাঁধা পড়ে থাকা আর আমার বাঁধা পড়ার সুর ভিন্ন, তাল নয়।
এইসব সঞ্চয় কার জন্য রেখে যাব? কার জন্য রেখে যাবে তুমি মরশুমি ফুলের বীজ? মাটির অন্ধকারে আর কতকাল আলো খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত উষ্ণতার গান ভুলে যাবে আগামী? ফুরিয়ে যাবার আগে আর কতবার বোতাম খুলব অথবা পোশাক না খুলে অভিমানী হব দু'জনে? প্রতিটি প্রশ্নের ভিতরে একরাশ প্রশ্নের আড়াল গোপন করছি আর একটু একটু শূন্যতা ভরছি হৃদয়ে। শুধু ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি অথবা চিৎকার করে উঠছি হতাশায়। মুখরিত উৎসবের ছবিতে নিজের শোকের ইমোজি বিলি করতে করতে ফুরিয়ে ফেলছি নিজেকেই আর তুমিও নিজেকে মুখর মুখোশের আড়ালে নিয়ে গিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছ বারবার। মুখর নীরবতার শোকের ছবিতে আমরা দু'জনে একা একা যৌথ জীবনের প্রস্তুতি নিচ্ছি বোতাম খুলে। অথচ শরীর থেকে পোশাক নামেনি এখনও। পোশাকের মুখোশে, অভিমানের মুদ্রাদোষে ভালবাসা পথ হারিয়ে দিশাহারা। নিভে যেতে থাকা আগুনের সামনে সাত পাকে বাঁধা পড়ার অঙ্গীকারনামা লিখছে অতৃপ্তির বর্ণমালা। জীবনের মুখোমুখি দহন জ্বালার ইতিহাস নিজেকে চেনার চেষ্টায় পোশাক খুলে দাঁড়াবে একে অপরের সামনে আর অভূতপূর্ব শীতলতার শিকার করবে উষ্ণতার বিনির্মাণ পর্বে।
(ক্রমশ)