কবিতা

তিলোত্তমাশ্রয়ে



সঞ্জীব চক্রবর্তী


আমি যার নিখাদ তরজমা
তাকে দেখতে কলিকাতা যাই
অবোধ শিশুর মতো
অশ্রুসিক্ত হয় তাঁর চোখ
আমি দেখি
পুনশ্চ কখন
শিয়ালদাগামিনী বাসে
উঠে পড়ি
কলকাতা আমার কাছে
পথপ্রান্তে বিথি
সেমিকোলনের
দ্বিধাগ্রস্ত বিরতি-বিশেষ।

সুদূর লালগোলা থেকে
সোয়াবিন-ভাত এনেছিল ওরা
রুগি দেখানোর শেষে
এখন ফুটপাতে খাচ্ছে
কলকাতা ওদের কাছে
তিলোত্তমা হয়ে ওঠো তুমি
তোমার শিরায় যত
উন্নাসিক নিষ্ঠুরতা
তার হোক
নিশ্চিত বিলয়।

তিলোত্তমা
তোমার শরীরে আমি
পুতুলনগরী থেকে গিয়ে
আবিষ্কার করি
ভোগচিহ্ন
শরীরি কামনা ছাড়া
সেই কৈশোরের প্রেম
মনে পড়ছে
তিলোত্তমা
তোমাকে তেমন করে যদি ভালোবাসি
সাড়া দেবে
ধীরে ধীরে
প্রকৃত প্রেমের স্পর্শ
ভোগচিহ্নগুলো ধুয়ে দেবে,
মুছে দেবে দেখো।

দমদম ভূগর্ভ পথে
জন্মান্ধের গান
গান নয়, দহন-প্রস্তুতি
নগরের নাভিমূল থেকে
বারে বারে আশাহত আমি
বুক বাঁধি আবার আশায়
ঐ সুর অতলের দাবি
সুমহান অহমিকা
রসাতলে ফেলার হুংকার।

কলকাতা তোমার চেয়েও
অসামান্য রূপসীর সাথে
দেখা হলে আমি মনে মনে
আরও মৌন আর একটি নারী হয়ে
কুন্ঠিত লজ্জায় তাকে ছুঁতে চাইছি
মনে মনে... অনুমানে
আমার এ বিপন্নতা
সে বোধহয় বুঝতেও পারবে না
হয়তো ভাবলো দিব্যোন্মাদ
অথবা লম্পট...

আকাশ স্পর্শক ক্রেনে
পিপীলিকাসম দুটি বিন্দু
কলিকাতা হচ্ছে অলঙ্কৃত
দৃষ্টিপথ থেকে দূরে
বহুতলে
এই দৃশ্যে কোথাও প্রতীতি আছে:
পথে, লোকারণ্যে
ঠাঁই নেই তবু
মানুষের জন্য মুখ বুঁজে ঠাঁই গড়ছে
কটি বিন্দু... ঝুলন্ত মানুষ।

জনপ্রিয় হিন্দি গানে
গলা মেলাচ্ছিল 
অভাবী কিশোর
সুর নেই
ছিল এক
মেলানোর তীব্র আকুলতা
সিটের উপরে বসা সুশ্রী বউটি
নাকমুখ ঢেকে
পরিত্রাহী মুখভঙ্গি তার
ও জানে না এ কলকাতা
প্রকৃত কলকাতা
বেসুরো গলায় গলা মেলানোর
কষ্টচেষ্টা শহরের
আদিম প্রকৃতি।