[১৯২৬ সালের জানুয়ারির ৩ তারিখে কবি সপরিবার কৃষ্ণনগর এসেছিলেন, এনেছিলেন হেমন্তকুমার সরকার। কবিকে কেন এনেছিলেন তিনি? শুধুই বন্ধু বলে? প্রতিভাবান কবি বলে? মাস ছয়-সাতেক গোলাপট্টিতে থেকে কবি গ্রেস কটেজে আসেন। ঠিক কবে আসেন তিনি? জুলাই, নাকি আগস্ট? কেনই বা এলেন এই বাড়িতে? ভীষণ দারিদ্র্যের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে নির্জন এক প্রান্তে? অনেক কিছুই আমরা জানি না, জানাও যায় না। এখান-ওখান থেকে জোগাড় করা তথ্য আর তার সাথে খানিক অনুমান মিশিয়ে টুকরো কথার কিছু দৃশ্য সাজিয়ে তোলার চেষ্টা এই কাহিনীতে।]
পর্ব - ১৩
- কী আনন্দ! দে গরুর গা ধুইয়ে!
প্রাণতোষকে দেখে উচ্ছ্বসিত নজরুল একেবারে জড়িয়ে ধরলেন। 'তা আর একটু আগে আসতে পারলি না? মঘা আর আমি ঘুরে এলাম। তুই সঙ্গে থাকলে বেশ হতো!'
- সে তো আমারই লোকসান কাজীদা। আমার হুগলিতো এই ক'দিন শুনশান হয়ে গিয়েছে।
প্রাণতোষকে সামনে পেয়ে নজরুল যেন সদ্য ছেড়ে আসা পুরো হুগলিটাকেই সামনে পেয়ে গিয়েছেন। রাস্তা থেকে বারান্দায় উঠতে উঠতে হাবুল, হামিদুল, সিরাজুল, সুবোধ, ভূপতি, গীস্পতি, মণিভূষন - কে কেমন আছে, কী করছে ইত্যাদি সব প্রশ্ন স্রোতের মতো আছড়ে পড়েছে। বেচারা প্রাণতোষ - এক নিঃশ্বাসে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো হুগলির খবর কিভাবে দেবে সে? মাত্রই তো ক'দিন হলো। এর মধ্যে অনেকের সাথে দেখাও হয়নি তার। তাছাড়া কৃষ্ণনগর আসার আগে যেচেপড়ে তাদের সাথে দেখা করে আসার বিন্দুমাত্র আগ্রহ জাগেনি। উল্টে কিছুটা অভিমানই হয়েছে। যেসব বন্ধু গুণগ্রাহীদের খবর নেবার জন্য কাজীদা ব্যাকুল, কই তিন তারিখ নৈহাটি স্টেশনে তো কাউকেই দেখা যায়নি। আক্ষরিক অর্থেই নজরুল বলতে অজ্ঞান হুগলির যে যুবদল, সাহিত্যগোষ্ঠী, সেই নজরুল সমস্ত হইচইকে নিষ্প্রভ করে দিয়ে চলে যাচ্ছেন - সৌজন্যের খাতিরেও গঙ্গার ঘাটে কিংবা নৈহাটি স্টেশনে একবার দেখা করে আসি, বিদায় জানিয়ে আসি - কই? কাজীদার এতে যেন কোনো হেলদোল নেই। ক্ষোভ অভিমান তো দূরের কথা, কারো প্রতি কোনও অনুযোগ নেই। যেন ওটা কোন ব্যাপারই নয়। বন্ধুদের প্রতি কাজীদার এই অতিরিক্ত উদারতা, মন্দ-ভালো বাছ-বিচার ছাড়াই সকলকে আপন করে ভাবা - এই বেশি বেশি দিলখোলা বিষয়টা প্রাণতোষের মোটেও পছন্দ হয় না অথচ তাকে ঘিরে হুগলির যুব জনসমাজের উন্মাদনা, ভালোলাগা, শ্রদ্ধা ও সম্মানের আন্তরিকতায় কোনও ঘাটতি ছিল না, হয়তো এখনো নেই। আর হুগলিতে বাস করতে আসা বলে তো নয়, নজরুল ইসলামের সাথে হুগলির যোগ সেই ১৯২২ সাল থেকে। 'বিজলী'তে 'বিদ্রোহী' কবিতা ছাপা হবার পর হামিদুল হক আর বিজয় মোদক কলকাতা গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করে আসে। আর শুধু দেখা করা তো নয়, হৈহৈ করে একদিনেই কাজীদা তাদের আপন করে ফেলল - হুগলির সাথে সেদিনই নাড়ির সংযোগ ঘটে গিয়েছিল। ধূমকেতু প্রকাশের সাথে সাথে প্রাণতোষ ঝোলা ভর্তি পত্রিকা নিয়ে হুগলি-চুঁচুড়ায় বিলি করে আসত। সে ছিল যেন এক গোপন আর নিষিদ্ধ উত্তেজনা। প্রাণতোষের ভাবতে অবাক লাগে - কাজীদা হুগলি জেলে এসেছেন, চিৎকার চেঁচামেচি করে জেলের ভেতর হৈচৈ বাঁধিয়ে দিয়েছেন, বাইরে ছেলেদের ভিতর তাঁকে নিয়ে বিপুল উত্তেজনা। হুগলি ঘাট স্টেশন থেকে পাথরে কাগজ জড়িয়ে জেলের ভিতর ছুঁড়ে ফেলা, সিরাজুল তো প্রাচীরের উপরেই উঠে গেল। বিয়ের পরে মাসুদা রহমান পরিবার সমেত কাজীদাকে নিয়ে এসে যে মোগলপুরার বাড়িতে তুললেন - সে কার ভরসায়? হুগলির এই স্বদেশী করা বাউন্ডুলে ছেলে-ছোকরাদের ভরসাতেই তো!
ভাবলে প্রাণতোষের কেমন গোল পাকিয়ে যায়। কাজীদার বাড়িতে সাহিত্য আড্ডা মানেই ভূপতি মজুমদার আর সুবোধ রায়ের উচ্চকণ্ঠ হইচই অবধারিত। গীষ্পতি ভট্টাচার্য মাঝেমধ্যে সংস্কৃত শ্লোক আওড়াতেন, কাজীদা মন দিয়ে শুনতেন, আলোচনা করতেন। সঙ্গে ছিল করাচির মিলিটারি বন্ধু মণিদার গান। জমজমাট হয়ে থাকত চকবাজারে রোজভিলার ঘর। তারকেশ্বরের ঝামেলা নিয়ে দেশবন্ধুর ঘন ঘন আনাগোনা, চাঁদনী ঘাটে গঙ্গার চরে গান্ধীজিকে নিয়ে তিন দিন সম্মেলন, সেখানেও কাজীদা মধ্যমণি। সাহিত্য রাজনীতির লোকজন তো ছিলই, মোগলপুরা চকবাজারের আশেপাশে গোঁড়া ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষগুলিও কাজীদার নিকটজন হয়ে উঠেছিল। আকস্মিক অসুস্থতা আর একের পরে এক বিপদের সময় যখন এলো, তাঁদের অনেককেই আর দেখা পাওয়া যেতো না। জ্বরের তান্ডবে প্রাণ নিয়ে টানাটানি, পুরো পরিবারটা একটা অসহায় দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে - অল্প কয়েকজন ছাড়া গুণগ্রাহী বন্ধুদের দেখা-সাক্ষাৎ মেলে না। কী করে এমন হয়? এই কৃষ্ণনগর থেকে হেমন্ত বাবু ঘন ঘন কয়েকবার গেলেন, ধার-দেনা মিটিয়ে এক প্রকার পুরো পরিবারকে নিজে কাঁধে করে উঠিয়ে নিয়ে এলেন। পার হয়ে আসা না হয় দূরের ব্যাপার - ঘাটে নৌকা ছাড়ার সময়েও তো কাউকে দেখা যায়নি। তাছাড়া নৈহাটি ভাটপাড়ায় এতো নজরুল ভক্ত, তারা কি কেউ খবর পায়নি - আজ আমাদের প্রিয় কাজীদা এলাকা ছেড়ে দূরে চলে যাচ্ছেন?
কি জানি, এসব কথা কাজীদা কখনো ভাবেন কিনা। যেভাবে গল্পে মেতে আছেন যেন হুগলির আড্ডাতেই ফিরে গিয়েছেন।
- 'খাবার দেওয়া হয়েছে।'
হঠাৎ করে প্রমীলা দেবীর আবির্ভাব না ঘটলে গল্পের প্রবাহ কোথায় থামতো কে জানে!
'দাদা তো চলে যাচ্ছে না। গল্পের অনেক সময় পাবে। সেই কখন এসেছে, তোমার জন্য বসে আছে।'
প্রাণতোষ আসায় মা ও মেয়ে দুজনেই খুশি। কৃষ্ণনগরে এসে হেমন্ত সরকারের কল্যাণে সংসার পেতে বসতে কোনও অসুবিধা হয়নি গিরিবালা দেবীর। প্রতিদিন ছেলেরা কেউ না কেউ এসে খবর নিয়ে যায়, বাজার কিংবা মুদিখানা টুকিটাকি দরকার পড়লে নিয়ে এসে দেয়। হুগলিতে নজরুলের বন্ধুর অভাব ছিল না। হাবুল, হামিদুল, সিরাজুল, বিজয় সবারই আনাগোনা ছিল বেশ। তবুও প্রাণতোষের মতো নিকট একজনের অভাব বোধ করেন তিনি। ওর ছোট ভাই শান্তিতো ছিল দোলনের বিশ্বস্ত সৈনিক। হৃদয় নামে তার আবার একটা দোসর ছিল।
'শান্তিকে নিয়ে আসতে পারতে দাদা। মনে হয় কতদিন ওকে দেখিনি' প্রাণতোষের পাতে মাছ তুলে দিতে দিতে প্রমীলা বলেন।
- বলতে হবে না বৌদি। দেখবে কবে হঠাৎ করে এসে জুড়ে বসেছে। আমি তো বলতে গেলে বাড়িতেই থাকি। সে তো বাবার ভয়ে বাড়িতেই ঢোকে না। একদিন এসে হয়ত বলবে - আমি এখন কৃষ্ণনগরেই থাকব!
- ওহ! তাহলে তো তোর বৌদির পোয়াবারো। সে আর কাউকে তোয়াক্কা করবে না!
নজরুলের কথায় সবাই হেসে উঠলেন। হঠাৎ প্রাণতোষের থালার দিকে তাকিয়ে বললেন - এতোক্ষণ তো খেয়ে যাচ্ছিস, বল দেখি এটা কী মাছ?
- দেখে তো বাটা মাছের মতোই মনে হচ্ছে, একটু যেন আলাদা। তবে স্বাদ কিন্তু চমৎকার।
- তুইও বলতে পারলি না তো? আমিও পারিনি। এর নাম রাগ মাছ।
- মাছের নাম রাগ?
- এইটাই তো কথা রে! এখানে আসার পরদিনই সকালে মাছওয়ালা এই নাম ধরে হাঁক দিচ্ছিল। জিগ্যেস করলাম - রাগ আছে, রাগিণী নাই?
'তোমার আবার সবার সাথেই মস্করা? প্রমীলা মন্তব্য করলেন। 'মানুষটা কী বলবে বুঝতে পারছিল না। তবে মাছের স্বাদ নিয়ে গুণগান করছিল। নামটি একটু অদ্ভুত, হয়ত স্থানীয় নাম। মা অবশ্য বলল মাছটা চেনা, খেতে ভালো।'
- মাসিমা খেয়ে দেখলেন নাকি?
গিরিবালা দেবী বারান্দার শেষে উনুনের পাশে সব্জি কাটছিলেন। প্রাণতোষের কথায় হাসতে হাসতে মুখ বাড়িয়ে বললেন - আমি মাছের দেশের মানুষ বাপু, চোখে দেখলেই ভালোমন্দ বুঝতে পারি।
'মাসিমার আজ কি স্পেশাল কিছু হচ্ছে নাকি? এখনো উনুনের কাছে?' প্রাণতোষ জানে যে মাসিমা নিরামিষ খান, মাঝেমধ্যে নিজের জন্য আলাদা তরকারি রান্না করেন।
'না বাপু, স্পেশাল আবার কী? তবে আজ চারিদিকে আঁশের ছড়াছড়ি। কৃষ্ণের দেশে এসেছি, আঁশের ভিতরে বেশি না থেকে ভাতে ডাল আর কলা সেদ্ধ দিয়েছি। ওতেই হয়ে যাবে।'
গোলাপট্টির বাড়িটিতে সকাল যেমন সুন্দর হয়ে আসে, সারাটা দুপুর রোদ খেলা করে, বিকেল হলেই ঝুপ করে যেন সন্ধ্যা নেমে আসে। নজরুল প্রাণতোষকে নিয়ে তার আগেই বেরিয়ে পড়েছেন। সামনে অনেক কাজ। লাঙলের জন্য লেখা বাকি। সকালে একদফা হেমন্তদার সাথে আলোচনা হয়েছে। কৃষ্ণনগরে প্রজা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে নানান ব্যস্ততা চলছে। বিভিন্ন জেলায় নেতাদের কাছে চিঠি পাঠানো, ডেলিগেটের সংখ্যা নির্ধারণ ইত্যাদি কাজ কলকাতার টিমকে নিয়ে হেমন্তদা চালিয়ে যাচ্ছেন। মিটিংয়ে আলোচনার খসড়া লেখারও দায়িত্বও নজরুলের। ভিতরে লেখার তাগিদ এলে শরীর কখনো বাধা হয় নি। হুগলিতে ঘোর লাগা জ্বরের ভিতরেও 'ঝড়'এর মতো দীর্ঘ কবিতা লিখেছেন।কিন্তু এই ক'দিন এমনিতেই একটা আলসেমি চলে এসেছিল। আজ সারাদিন ঘোরাঘুরি করে, তারপর প্রাণতোষকে পেয়ে বেশ একটা উদ্দীপনা এসেছে।
কী মনে হলো, বললেন - চল সাধনা লাইব্রেরি ঘুরে আসি। অনন্তহরি বেশ যত্ন নিয়ে লাইব্রেরিটা দাঁড় করিয়েছিল।
কৃষ্ণনগরে আসার আগে অনন্তহরি বেশ কিছুদিন হুগলির বিদ্যামন্দিরে প্রাণতোষদের আশ্রয়ে কাটিয়েছে। ওর দামাল মনোভাবের সাথে সে ভালোই পরিচিত। কিন্তু ডাকাতির মামলায় ধরা পড়ে এখন আলিপুর জেলে বন্দী। ফলে শহরের বিপ্লবী যুবকদের আড্ডাখানা সাধনা লাইব্রেরি এখন অনেকটা ফাঁকা, বিশেষ হৈচৈ নেই। তাছাড়া ওর গ্রেপ্তারির পরে পুলিশের টিকটিকিদের আনাগোনা বেশ বেড়েছে। রাখঢাক না করে সোজাসুজি এসে ঢুকে যায়, আলাপ জমায়। আর নজরুল তো প্রশাসনের খাতায় মার্কামারা বিপ্লবী। তাঁর জন্য বাড়তি নজরদারি নিশ্চয় বেড়েছে। ঘরের ভিতরে তারকদাস, প্রমোদরঞ্জন এবং আরো তিন-চারজন বসে আছে। নজরুল ঢুকেই বলে উঠলেন, 'এই তো ধরে ফেলেছি! সেই থেকে তারকদাসের আর দেখা পাওয়া যায়না। ভাবলাম, সাধনায় গেলে অসাধ্য সাধন হবেই হবে! দ্যাখো, কাকে নিয়ে এসেছি।'
যা হবার - হৈহৈ করে আসর জমে গেল। দেখা না হলেও কাজীদার বাড়ির খবর হাঁড়ির খবর সবই তারকদাসের কাছে থাকে তারও প্রমাণ হলো। সাথে দেখাসাক্ষাৎ আগে না থাকলেও অনন্তদার হুগলির গল্পকথায় প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায় আর নিবারণ ঘটকের নাম অনেকবার শোনা। অনন্তহরি মিত্র এখন এই শহরে সর্বাধিক আলোচনার বিষয়। হঠাৎ করে তাকে পুলিশে আটক করে ফেলায় কৃষ্ণনগরের বিপ্লবী যুবমহলে একটা অগোছালো বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, ভীতিরও সঞ্চার হয়েছে। সাধনা লাইব্রেরিকে সামনে রেখে যুবদলকে সংগঠিত করে একদিকে সমাজসেবা অপরদিকে সশস্ত্র বিপ্লবের পথে উদবুদ্ধ করার এক অদ্ভুত পারদর্শিতা দেখিয়েছেন অনন্তহরি মিত্র। তাঁর অনুপস্থিতিতে সব যাতে এলোমেলো না হয়ে যায়, তারকদাস সেজন্য দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। অল্পসময়ের মধ্যেই প্রাণতোষকে তাঁরা কাছের মানুষ করে নিয়েছেন। নজরুলকে নিয়ে হুগলির টুকরো টুকরো কিছু মজার কথা শোনাচ্ছে প্রাণতোষ, অন্যরা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে - এরকম একটা সময়ে এক দীর্ঘদেহী সুপুরুষ ঘরে প্রবেশ করলেন। তারকদাস লাফিয়ে উঠেছে - আরে বিজয়দা! এসো এসো! প্রায় টেনে বসিয়ে দিল তাঁকে।
সাধনায় বিজয়লালের খুব একটা যাতায়াত নেই। অনন্তহরিকে বিজয়লালই একপ্রকার প্রথম ধরে নিয়ে আসেন কৃষ্ণনগরে। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর গুপ্ত কার্যক্রম বৃদ্ধির সাথে সাথে বিজয়লালের সঙ্গেও একটা দূরত্ব বাড়তে থাকে। গান্ধীজির অহিংস পন্থার প্রতি বিজয়লালের অগাধ আস্থা, সাধারণ মানুষের সম্মিলিত শক্তিই দেশের প্রকৃত শক্তি - এই বিশ্বাস থেকে বিজয়লাল বিচ্যুত হয়নি। কিন্তু বিশ্বাস ও পন্থায় ভিন্নতা থাকলেও সেটা নিজেদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার কোনো প্রাচীর তোলেনি, সবার সঙ্গে সবার সদ্ভাব এবং সশ্রদ্ধ সংযোগ বজায় আছে - কৃষ্ণনগরের এই পরিবেশ নজরুলের চোখ এড়ায় নি। ভালো লেগেছে। কিছু বলার আগেই বিজয়লালের উচ্চকণ্ঠ ঘোষণা - হেমবাবু খবর পাঠিয়েছেন। সন্ধ্যাবেলা গুপ্তনিবাসে সাহিত্য আড্ডা। কাজীদাকে ধরে নিয়ে যেতে হবে। হুগলি থেকে বন্ধু এসেছে সে খবরও আছে - তাঁকেও সঙ্গে নিতে হবে।
বিজয়লালের নাটকীয় বলার ভঙ্গিমায় নজরুল সশব্দে হেসে উঠলেন।
- বিজয়, তোমার হাতে বন্দী হবার আনন্দ আছে। তার উপর হেমবাবুর আহ্বান - চলো, আমরা প্রস্তুত।
(ক্রমশ)