বিবিধ

প্রেমঃ শরীর ও মনের ছবি আঁকার প্রস্তুতিপর্ব (দ্বিতীয় পর্ব)



অভিজিৎ রায়


ভালবাসার শরীরে কল্পনার অবাধ বিচরণ। স্পর্শের অচেনা রেখা শুধু ছবি নয়, বরাভয় আঁকে; আঁকতে চায়। মুখ ফুটে অস্ফুট অসম্মতি কী ভীষণ আকুতির উত্তেজনায় সব বাধা সরিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে - আজ সব স্বপ্ন মনে হয়। নিজের ভিতরে নিজে উঁকি মেরে যাকে দেখি সে ভীষণ অচেনা আমার। আমার ভিতরে এক কল্পনা - শরীরে ভালবাসা বাসা বেঁধে ছিল বহুদিন। সে আদরে অন্তরিন প্রেমের অক্ষর জুড়ে শুধু ক্ষোভ, অভিমান গাঢ় হতে হতে আজ যে কঠিন। পাথুরে শরীরে আজ স্পর্শের অপ্রয়োজনীয় শিল্পচর্চা।

দূর থেকে যাকে শিল্পী মনে হয় সে আসলে নিখুঁত দর্শক। যার ঝোঁক তাকে শিল্পের শরীরে হৃদয়ের সন্ধান দেয়। আহাম্মক বুঝে নেয় হৃদয়ের কোন ভাঁজে শরীরের ঘাম শিল্পের সঞ্চয়। আড়ালে, গোপনে যত ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা, উদাসীন অবহেলা অথবা শেষ দিনে পৌষ মেলার মিলন সঙ্গম সব একাকার হয়ে যায় স্মৃতির জঙ্গলে। নোনাজলে দু একটা মেঘ ভেসে যায় অসহায় নিয়তির শাসনে। মনে মনে ভালবাসা গাঢ় দাগ হয়ে লেগে থাকে জামায়, অন্তর্বাসে। এমন সন্ত্রাসে কত ছবি আঁকা হয়, লেখা হয় অজস্র কবিতা, গান তার হিসাব গোপন অভিমান রাখে। কিশোরবেলার ডাকে কেঁদে ওঠে অসুখী শরীর।

এত সুখ, এত সুখী ভিড় তবে বেঁচে থাকে কোন বাস্তবে? উজ্জ্বল পোশাকের আড়ালে কোন অন্ধকার সম্পর্কের ভার বয়ে চলে নিরাপদ আশ্রয়? কোন জয় পরাজয়ের গ্লানিকে আড়ালে রাখতে শেখায় দুর্দান্ত মেক-আপে? এইসব রহস্য ঘিরে জীবন আবর্তিত হয় প্রেমের বিষুবরেখায়।

শরীরের ভাঁজে কত কাল্পনিক চুম্বনের দাগ থেকে যায় কখনও সে কথা জানে না প্রেম। কত শত চুম্বনের অপ্রাপ্তিতে লেখা হয় কত কত প্রেমের কাহিনি তারও হিসাব রাখে না কেউ। অথচ শরীরের ঘ্রাণে প্রেমের হৃদয় ভিজে যায়। একবার নয়, বারবার। রবি ঠাকুরের গানে, রবিশংকরের সেতারে, বিসমিল্লার সানাইয়ে যে ছবি আঁকা হয় তা কি ভালবাসার শরীরে উল্কি? নাকি ভালবাসার মনে মনে গুনগুন করে গাওয়া গানের স্বরলিপি?

এই যে সুর আর এই যে সুখ কাকে তুমি ভালবাসার শরীর বলবে আর কাকে তুমি বলবে ভালবাসার মন? যতক্ষণ প্রেম ঘনীভূত বাতাসের বুকে জলীয় বাষ্পকণা ততক্ষণ নিজেকে আনমনা করে রেখে উত্তেজনা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার নাম কেউ কেউ ভালবাসা দিলে কল্পনা থমকে দাঁড়ায় উত্তেজনাপ্রবণ বাঁকে। যেখান থেকে নিচের দিকে তাকালে গভীর খাদ আর সামনে, উপরের দিকে তাকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভোরের আলোয় সে যখন লাস্যময়ী, তখন তাকে ছুঁতে চাই। হাত বাড়াই। অথচ কুয়াশা আর মেঘে অভিমানের আবেগে মুখ ভার তার। আমি মেপে নিই খাদ, ঝাঁপিয়ে পড়ার স্বাদ বদলে যায়। শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাওয়া শরীর শূন্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ হাওয়া কেটে অবসরে খাদের ভিতর ঘরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বসা। যাবতীয় লাভ-ক্ষতি কষা শেষ করে ভালবাসার শরীর খুঁজে বেড়ানো মন নিয়ে পাইন বনের কুয়াশায় নিজেকে হারিয়ে ফেলার অনবরত চেষ্টা করে যাওয়া। চেষ্টা করা আর না পারার উত্তেজনায় ক্রমশ ক্ষয়কার্য চলে নিজের ভিতরে। আবহবিকারের অবসরে কল্পনার শরীর বদলায়, মন বদলায়, বদলায় প্রেম। অচেনা স্পর্শের শরীর জুড়ে উত্তেজনার ছবি ড্রয়িংরুমে সাজানো থাকে সোনালি ফটোফ্রেমে।

বেডরুম থেকে ড্রয়িংরুমের দূরত্ব বাড়ে স্মৃতির ভারে। তবু, ঘুমের ভিতর কেউ এসে দাঁড়ায় এবং সাজানো স্বপ্নগুলো কেড়ে নেয়, কাড়ে।