বিবিধ

স্কুলবেলা



চিরঞ্জীব হালদার


আমার মফস্বল কেটেছে হারিকেনের আলোয়।

অঙ্কের থেকে ইংরেজী ভীতিটা বেশ প্রবল।

বাহাত্তর সনে হাইস্কুল ঢোকার বছরে বাঙাল চকোত্তিস্যার অবসর নিয়ে সোজা শহরে পাড়ি দিলেন। আমরা বুঝিনি আমাদের আকাট মেধা শুকিয়ে আমশী পাকিয়ে যাবে। w আর r-এর বিভাজন শোধরানোর লোক নেই। ক্যাপিটাল আর স্মল লেটারের মাধুরীকে বোঝানোর দায় নেবেন। Wright আর right তখন মহাশূন্যে ভোকাট্টা পেটকাটি। এর ওপর সাক্ষাৎ যমের মত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সংস্কৃতের ধাতুরূপ শব্দরূপ।

একা রামে র়ক্ষে নেই সুগ্ৰীব দোসর। এদিকে ওদিকে হলেই দুই জুলপিতে আড়াইপ্যাঁচ আটকানো কার সাধ্য। ধীরেন পন্ডিত বলে কথা। তিনি আবার চেয়ারে বসতেন আসনপিঁড়ি হয়ে। তিনি কক্ষে ঢুকলে সারা ক্লাসে পিন পতনের নৈঃশব্দ্য। তার বুক পকেট থেকে কার দিয়ে বাঁধা বিদেশী ঘড়িটা আরো কয়েক নেগেটিভ ডেসিবেল উগরে দিতো সারা শ্রেণীকক্ষে।

আমাদের স্কুল শি়ক্ষকরা যেন পঞ্চরত্নের সমাহার।

সারা ২০ মাইল ব্যাসার্ধে এমন শিক্ষককুল আমাদের স্লাঘার বিষয় ছিলো।

চিটুদাদু যখন ঘন্টা বাজাতো পান্যিপাড়ার ঘোড়াও সেই ধ্বনিতে মাথা দোলাত। বিকেল চারটের ঘন্টা বাজার পর আমাদের মত স্মৃতিবিভ্রম ছাত্ররা এক একজন আমোদ কৌশলী। তখন ধাতুরূপ, শব্দরূপ, পার্ট অফ স্পিচ, কর্তৃকারক সব ভোকাট্টা।

আমি খালি ভাবতাম চকোত্তিস্যারের চশমার কাঁচ কি রুপোর। কখনো কখনো তার মুখ নয় যেন রুপোর কাঁচ দিয়ে মেধার পাকদন্ডি বেয়ে অনর্গল ইংরাজী অক্ষরমালা নবান্নের খই হয়ে উঠতো।

আপাদমস্তক ওই ধবধবে মানুষটা একটা আস্ত অক্সফোর্ড। আমাদের বাড়ির একশ মিটারের মধ্যে তার আংশিক ভদ্রাসন। যদিও কখনো তাকে স্কুল ছাড়া চোখে পড়েনি। তিনি বাজারে যেতেন কিনা জানা হয়নি। মাছওয়ালা বা বেগুন মাসীর সাথে কোন ভাষায় কথা বলতো এখন আর জানা যাবেনা।

যত না পড়তাম তার থেকে বইগুলোর হাডুডু দশা।

জানুয়ারিতে নতুন মলাট যদি পাঁচ ডিগ্ৰী অক্ষাংশ বরাবর থাকে তা জুলাইয়ে কোন দ্রাঘিমাংশে বোঝা মুশকিল। পঞ্চম ক্লাসে ভাগ্যিস শ্লেট নিতে হতো না।

আমার অপটু কবিতার ইংরাজী অনুবাদটা এখন কাকে দিয়ে দাঁতে ওঠাবো?