ইউরোপে জাদুবিদ্যা (১৮০০-১৮৭৫)
যদিও এই জাদুকরগন সকলেই সফল, এদের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য নাম মধ্য-ঊনবিংশ শতাব্দীতে Jean Eugene Robert-Houdin. জাদুবিদ্যায় তার স্বকীয় সত্ত্বা ও প্রভাবই তার দান, সেইজন্য তাকে "আধুনিক জাদুবিদ্যার জনক" বলা হয়। Blois শহরে, যা উত্তর-মধ্যবর্তী ফরাসীতে অবস্থিত, সেখানে ৭ই ডিসেম্বর ১৮০৫ খৃস্টাব্দে এই বিস্ময়কর জাদুকর জন্মগ্রহণ করেন। সেই সময়ে তাঁর নাম ছিল Jean Eugene Robert. তাঁর বাবা ছিলেন একজন ঘড়ি প্রস্তুতকারক। যন্ত্রের উপর যার যান্ত্রিক ক্ষমতা ও নিপুণতা বালক Robert খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। পরে Robert-Houdin লিখেছিলেন, "যে পৃথিবীতে এসেছিলাম হাতে একটি হাতুড়ি নিয়ে কারন আমার যৌবনের প্রারম্ভে থেকে এই যন্ত্রগুলো আমার খেলনা ও আনন্দ।"
Jean Eugene এর বাবা খুব উদগ্রীব হয়েছিলেন যে তার পুত্র একজন আইনজ্ঞ হোক, তাই একটি ছোট আইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অল্প কিছুদিনের জন্য শিক্ষানবীশ করার পর যুবকটির কিন্তু যন্ত্রপাতির দিকেই নজর গেল। এরপর তাঁর পিতার অনুমতি অনুসারে তিনি তার এক খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে Avaray তে বাস করতে লাগলেন এবং ঘড়ি তৈরী শিখতে গেলেন। একদিন বাড়ী ফেরার পথে সে একটি বই এর দোকানে ঢুকলো ঘড়ি ও হাতঘড়ি সমন্ধে নিবন্ধ কিনতে। বইটি কিনে, সন্ধ্যায় যখন ঘরে বসে বইটি খুলে দেখল তখন বুঝলো, দোকানের মালিক ভুলবশতঃ তাকে একটি জাদুবিদ্যার বই দিয়েছে। বইটির নাম Dictionnaire Encyclopedique des Amusments des Sciences, Mathematiques et Physiques. এই বইয়ে লিখিত বিষয়গুলি তাঁর মনে যে কৌতুহল জাগিয়ে ছিল, তা থেকে Jean Eugene নিজেকে হাতসাফাই এর কাজ শেখা ও একজন শৌখিন জাদুকর হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেন নি।
১৮৩০ খৃষ্টাব্দে যুবক Robert, Josephe Houdin নামে সতেরো বছরের এক মহিলাকে বিয়ে করেন, যার বাবাও ছিলেন একজন ঘড়ি প্রস্তুতকারক। যাইহোক, বিবাহের পর তিনি স্ত্রীর পদবী ব্যবহার করলেন। তার স্ত্রীর বাবার প্যারিসে একটা ঘড়ি প্রস্তুতের ব্যবসা ছিল। Robert-Houdin তাঁর সঙ্গে কাজ করবার জন্য প্যারিসে গেলেন। পার্শ্ব ব্যবসা হিসাবে তিনি যান্ত্রিক খেলনা ও জাদুকৌশলের কেনাবেচা করার জন্য তাঁর শ্বশুরের ঘড়ি প্রস্তুত ব্যবসার পাশে আর একটি দোকান দিলেন।
নিজের সংসার চালানোর জন্য সে ঘড়ির দোকানে কাজ করতো। কিন্ত ওই সময়ের মধ্যে Robert-Houdin তার সময় ও শক্তি দুইই বেশি ব্যয় করতো স্বয়ংক্রিয় ও জটিল যন্ত্রপাতির উদ্ভাবনে নিজের স্বার্থে। বহু হতাশা ও ক্লেশ স্বত্বেও সে সফল হয়ে ছিল একটি সম্পূর্ণ যান্ত্রিক মানুষ তৈরী করতে, যে কাগজে সকল প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারতো। একটি কৃত্রিম পাখী সে বানিয়ে ছিল, যে গান গাইতে পারে এবং নাইটিঙ্গেলের গান হুবহু নকল করতে পারে এবং সেইসঙ্গে অন্যান্য সকল স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রকে নকল করতে পারে। এরপর ১৮৪৪ সালের প্রদর্শনীতে তিনি তার সৃষ্টির বহুল অংশ প্রদর্শন করেন। রাজা Louis Philippe দুঘন্টা ধরে Robert-Houdin এর প্রদর্শনী দেখেন এবং তার উচ্চ প্রশংসা করেন এবং তাহাকে রৌপ্য পদক দান করে ছিলেন।
সেই অবধি তার স্বপ্ন যে, সমস্ত সন্ধ্যা হতে হবে পেশাদারী। তিনি অনুভব করেন যে, তার আবিষ্কৃত স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রগুলো এইরূপ প্রদর্শণগুলিকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলবে। Palaris Royal এ একটি প্রশস্ত ঘর লীজ নিয়ে সে এটিকে একটি আরামপ্রিয় ছোট থিয়েটার হলে পরিণত করেন যার আসনসজ্জা ছিল ২০০।
এখানেই ১৮৪৫ খৃষ্টাব্দে ৩রা জুলাই Robert-Houdin তার চমৎকার ও বিখ্যাত খেলাগুলো নিয়ে প্রদর্শন শুরু করেন, সঙ্গে ছিল তাঁর জাদুর স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রগুলি। এদের মধ্যে একটি "কমলালেবুর গাছ" যে সমন্ধে আমি আলোচনা করব পরে ফুলের জাদু অনুচ্ছেদে। আর একটি হলো "Pastrycock of the Palaris Royal." প্রথমে দর্শকেরা তাদের নিজ নিজ পছন্দের পানীয় এর নাম বলবেন। আর তারপর একটি খালি দরজা থেকে Palaris এর মডেল অনুযায়ী একটি স্বয়ংক্রিয় মানুষ বেরিয়ে এলো হাতে একটি ট্রেতে দর্শকদের অনুরোধ অনুযায়ী সকল প্রকার পানীয় বহন করে। Brioches, কেক, পানীয় ও বরফ টুকরো। এরপর একজন মহিলা দর্শকের আংটি অলৌকিক ভাবে অদৃশ্য করা হল। তারপর সেটি পাওয়া গেল ওই মহিলার ব্যাগের মধ্যে। এমনকি Pastrycook কর্তৃক পরিবেশিত Brioche এর মধ্যে। এই Pastry'র জন্য যে মূল্য দিয়ে ছিলেন মহিলা সেটিও পরিবর্তিত হল একটি স্বর্ণ মুদ্রায়।
(ক্রমশ)