আবির্ভাব
এক সময় তো জীবের চক্ষু ছিল না, চক্ষু কেমন করে ক্রমে জীবের অভিব্যক্তিতে ফুটল? জীবের মধ্যে আলোককে পাবার তৃষ্ণা ছিল, দেহীর দেহের পর্দার আড়ালে বিরহীর মতো সেই তৃষ্ণা জেগে ছিল, তার সেই দীর্ঘ বিরহের তপস্যা সহসা একদিন চক্ষু বাতায়নের ভিতরে সার্থক হল। আলোকের আনন্দদূত তার চোখের বাতায়নে এলো। আলোককে পাবার আনন্দের জন্য তপস্যা ছিল, সেই তপস্যা অন্ধ জীবের অন্ধকার দেহের মধ্যে চক্ষুকে বিকশিত করে স্বর্গের আলোকের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছে। সেই একই সাধনা অন্ধ চৈতন্যের মধ্যে রয়েছে, আত্মা কাঁদছে সেখানে। যতদিন পর্যন্ত অন্ধ জীব চক্ষু পায়নি সে জানতো না তার ভিতরে আলোক বিরহী কাঁদছিল, সে না জানলেও সেই কান্না ছিল বলেই চোখ খুলেছে। অন্তরের মধ্যে চৈতন্য গুহায় অন্ধকারের পরম জ্যোতির জন্য মানুষের তপস্যা চলেছে। একথা কখনোই সত্য নয় যে কোন মানুষের আত্মা ধনজনের জন্য লালায়িত। মগ্নচৈতন্যের অন্ধকারময় রুদ্ধ বাতায়নে বিরহী আত্মা কাঁদছে, সেই কান্না সমস্ত কোলাহলের আবরণ ভেদ করে নক্ষত্র লোক পর্যন্ত উঠেছে। আনন্দ যেদিন আসবে সেদিন চোখ মেলে দেখব সেই জ্যোতির্ময়কে। সেদিন তিনি আমার ভবনে আসবেন এবং বিশ্বভুবনে তার সাড়া পড়ে যাবে।
আমাদের ভাষা-আমাদের উন্নতি
আমরা লাভ করিব কিন্তু সে লাভ আমাদের ভাষাকে পূর্ণ করিবে না, আমরা চিন্তা করিব কিন্তু সে চিন্তার বাহিরে আমাদের ভাষা পড়িয়া থাকিবে, আমাদের মন বাড়িয়া চলিবে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ভাষা বাড়িতে থাকিবে না, সমস্ত শিক্ষাকে অকৃতার্থ করিবার এমন উপায় আর কী হইতে পারে।
আমাদের যুদ্ধ
আমরা কার সঙ্গে যুদ্ধ করব। রূঢ় মানবপ্রকৃতির চিরন্তন নিষ্ঠুরতার সঙ্গে! যীশু খ্রীষ্টের পবিত্র শোণিত স্রোত যে অনুর্বর কাঠিন্যকে আজও কোমল করতে পারেনি সেই পাষাণের সঙ্গে! প্রবলতা চিরদিন দুর্বলতার প্রতি নির্মম, আমরা সেই আদিম পশু প্রকৃতিকে কী করে জয় করব? সভ্য করে? দরখাস্ত করে? আজ একটু ভিক্ষা পেয়ে? কাল একটা তারা খেয়ে? তা কখনোই হবে না?
আমি ও দেশবাসী
প্রশ্নকারী বলতে পারেন, তেত্রিশ কোটির তোমরা কি করতে পারো। কিন্তু বিধাতা তো তেত্রিশ কোটির ভার আমাদের হাতে দেননি? তিনি শুধু একটি প্রশ্ন করেন, তুমি কি করছ। যে কার্যক্ষেত্র তোমার, সেখানে তুমি নিজেকে সত্য করেছো কিনা। তেত্রিশ কোটির কী করতে পারি, এ প্রশ্ন যাঁরা করেন তাঁরা সত্য কাজের পথকে রুদ্ধ করেন। দুঃসাধ্য সাধনের চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু অসাধ্য সাধনের চেষ্টা মূঢ়তা। যারা আমাদের চারদিকে রয়েছে তাদের মধ্যে যদি সত্যকার আগুন জ্বালতে পারি, তবে সে আগুন আপনি আপনার শিখার পতাকাকে বহন করে চলবে।
সৌজন্যেঃ অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায়
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।