সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত একটি বিজ্ঞাপন এই লেখার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছে। সেই বিজ্ঞাপনে রাজনৈতিক দল সিপিআই(এম) অবশেষে ভাড়া করা সৈনিকের ওপর আস্থা রেখে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে অথবা নিজেদের হারানো জমি ফিরে পাবার লড়াইয়ে নেমেছে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। মার্কসবাদ যদি সত্যিই কোনও শাশ্বত মতবাদ হতো তাহলে পুঁজির সঙ্গে লড়াইয়ে কি পুঁজিকেই হাতিয়ার করার দরকার পড়তো? পাশাপাশি আরও একটা প্রশ্ন সামনে এসে পড়ছে মগজ ধোলাইয়ের মানবযন্ত্র ঠিক কতটা কার্যকরী হবে, যেখানে একটা ছোট রাজ্যে ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর এই রাজনৈতিক দলটি মানুষকে নিজেদের সঙ্গে মানসিকভাবে সংযুক্ত করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে এবং এই ব্যর্থতা প্রতিটি ভোটের ফলাফলে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মার্কসবাদের দুর্বলতম দিক হচ্ছে মানুষের মন নিয়ে মার্কসের সিদ্ধান্ত। একইরকম পরিস্থিতি ও শিক্ষায় দু'জন মানুষের বিপরীতধর্মী প্রতিক্রিয়াই মানুষকে অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা করেছে। এ ব্যাপারে মার্কসের পর্যবেক্ষণ ভুল হবার কারণেই মার্কসবাদী দলগুলোতেই প্রচুর বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। শোষিত শ্রেণির মানুষের আবেগ ও স্বপ্ন নিয়ে খেলা করতে করতে কিছু চালাকচতুর মানুষের নেতা বনে যাওয়া এবং পরবর্তীকালে তাদের জীবনযাপনে বিন্দুমাত্র সমাজতন্ত্রের ছোঁয়া না থাকায় মানুষ মেনে নিতে শিখেছে নেতার সঙ্গে ক্যাডারের জীবনযাপনগত পার্থক্য। আর এই মেনে নেওয়া আরও পরিবর্তিত হতে হতে মানুষ তার সাময়িক চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দিতে শিখেছে। এভাবেই ডোল রাজনীতি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত নেতার প্রসাদ পেতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া জনগণ এবং ক্যাডারের কাছ থেকে ভোটের আশা ছেড়ে দিয়ে সিপিআই(এম) এখন বাজারে আনতে চলেছে মানবিক মগজ ধোলাই যন্ত্র অথবা ভাড়া করা বামপন্থী। যারা নিজেরা বিশ্বাস করবেন না বামপন্থায় কিন্তু মানুষকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে যাবেন বামপন্থায়। তার মানে আদর্শগত বিভেদ থাকা সত্ত্বেও একজন বামপন্থার প্রচার ও প্রসারে সহযোগী হবেন শুধুমাত্র জীবিকার জন্য।
পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করে সমাজবাদ কায়েম করতে পুঁজির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিল দল এভাবেই। আসলে মার্কসবাদ ক্রমশ ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অচল হয়ে পড়ছে। এই সমাজব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা ও আর্থিক পরিকাঠামোয় মানুষকে পুঁজির ক্রীতদাস বা দালাল হয়েই বেঁচে থাকতে হবে। একটাই আশার কথা এই ব্যবস্থায় যে পুঁজির কিছু বণ্টন হবে সাধারণ, শিক্ষিত মানুষের মধ্যে। প্রশান্ত কুমারের আইপ্যাকের মতো কিছু সংস্থা তৈরি করবেন হয়তো কোনও বামপন্থী নেতা এবং তারপর সেই সংস্থার লাভ জমে জমে তিনি নিজেই একসময় পুঁজিবাদী যে হবেন না এ গ্যারান্টি কী আদৌ আছে?
তবে পাশাপাশি এ কথা অনস্বীকার্য যে এই পুঁজিভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে বামপন্থী দলই শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলের জন্য বেঁচে থাকতে চাইবে, তার জন্য এই পথ ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা নেই। এখন এরপর একটাই প্রশ্ন সামনে এসে পড়ে। 'বামপন্থা' কি শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার, নাকি শোষণের বিরুদ্ধে মানুষকে শিক্ষিত করে এক দীর্ঘস্থায়ী বিপ্লবের আদর্শ?
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।