সত্যম শিবম্ সুন্দরম। জয় হর হর মহাদেব। সত্ত্ব, রজঃ তমঃ - এই তিন গুণের সমাহারে এই বিশ্বজগতের সৃষ্টি। এই ধরিত্রীর বুকে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় আছে। ব্রহ্মার শক্তি সরস্বতী, বিষ্ণুর শক্তি লক্ষ্মী, দেবাদিদেব মহাদেবের শক্তি পার্বতী অর্থাৎ মা দুর্গা। সুদূর পুরাকাল থেকে প্রাচীন আধ্যাত্মিক ভারতবর্ষ একটি পুণ্য দেবভূমি। এই দেবভূমির পবিত্র মাটি কত মুনি, ঋষি, সাধুসন্ত সন্ন্যাসী আচার্য মহাপুরুষের জন্মভূমি। অতীতের ভারতবর্ষ জগতের শ্রেষ্ঠ মনীষার আসনে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাই এই দেবভূমি ভারতের ধূলিকণা অমৃত সমান। তাই তামাম দুনিয়ার মানুষ এই দেবভুমি ভারতবর্ষ দর্শনে আসেন। আমাদের দেশের দর্শনীয় তীর্থস্থানগুলি দর্শন করে নিজেদের ধন্য মনে করেন। যুগপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ বলছেন, "ভারতবর্ষ পাশ্চাত্য থেকে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তি আহরণ করবে আর ভারতবর্ষ দেবে তার অফুরন্ত আধ্যাত্মিক সম্পদ"।
আমি প্রথমেই বলি, আমার লেখাটি লিখতে গিয়ে আমার বারবার মনে হয়েছে যে, এই মহাকুম্ভে অমৃত অবগাহনের কাহিনী যথাযোগ্য মর্যাদায় লিখতে পারব কিনা। কিন্তু আমার ভেতরের এক অদৃশ্যমান শক্তি আমায় বারবার বলছে, তুই লিখে যা।
স্বামী বিবেকানন্দ এক জায়গায় বলছেন, "জীবনে এসেছো যখন একটা দাগ রেখে যাও"। কি সেই দাগ? স্বামীজি বলছেন, "টাকায় কিছু হয় না, বিদ্যায় নয়, নামেও নয়, যশেও নয়, জীব সেবা ও ভগবানের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসাতে সব হয়। ভালোবাসাতে বিশ্বজয় করা যায়"। আরও বলেছেন, "Be and Make", অর্থাৎ নিজে মানুষ হও, অপরকে মানুষ হতে সাহায্য করো। আমরা সপ্তরথী অর্থাৎ সাতজন সংসারবদ্ধজীব চললাম উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ মেলায় ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নানের উদ্দেশ্যে এবং সেই সঙ্গে সাধুসঙ্গ দর্শনের বাসনা নিয়ে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব গৃহী সংসারী মানুষদের বলেছেন, "এক হাতে সংসার করো আর এক হাতে ঈশ্বরকে ধরে থাকো এবং দিনশেষে দু'হাত তুলে ঈশ্বরকে ডাকো"। আবার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলছেন, "ঈশ্বরদর্শন কেমন হবে? বিষয়ীর বিষয়ের উপর টান, সতীর পতির উপর টান, ভক্তের ভগবানের উপর টান। এই তিন টান একত্রিত হলে তবেই ঈশ্বর দর্শনলাভ হয়"।
আমরা সাত বন্ধু মিলে অফিস থেকে স্করপিও গাড়িতে করে রওনা দিয়েছিলাম। গত ১০.২.২০২৫ সোমবার সন্ধ্যা ৭:৪৫ মিনিটে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর বোগদা থেকে রওনা হলাম প্রয়াগের উদ্দেশ্যে। আমাদের যাত্রাপথ ছিল জামশেদপুর, রাঁচি, হাজারীবাগ, আওরঙ্গাবাদ এবং অবশেষে বেনারসের রুট ধরে প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভ মেলা। আমি অর্থাৎ সমীরণ ভৌমিক, অমিয় কুমার সিনহা, অশোক কুমার সাহু, বি. এম. ভি. জয়রাম, শংকর সিং, ইন্দ্রজিৎ মোদক এবং আমাদের সর্ব সময়ের সারথী ছিলেন ড্রাইভার ঝন্টু মাইতি দা। দীর্ঘ যাত্রাপথ ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার, রেলশহর খড়গপুর ডিআরএম অফিস থেকে সুদূর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভ মেলায়। প্রয়াগরাজের এই মেলা বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ। এবারে ১৪৪ বছর পর এই কুম্ভ মেলা যেটি প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে হল সেটি 'মহাকুম্ভ' মেলা। এই মহাকুম্ভ মেলা শুধুমাত্র হিন্দুর ধর্ম, সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতা নয়, এ এক মানবতার বিশ্ব মহাসম্মেলন। 'ইউনেস্কো' এই মহাকুম্ভ মেলাকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দিয়েছে। এ যেন কবিগুরুর ভাষায়, "এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে"।
ভারতবর্ষে প্রতি ১২ বছর অন্তর এই পূর্ণকুম্ভ মেলা হয় - প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী এবং নাসিক-এ। প্রয়াগের মহাকুম্ভ অর্থাৎ ত্রিবেণী সঙ্গম হল গঙ্গা, যমুনা ও অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদী। মহাকুম্ভের সময় ও দিনক্ষণ নির্ধারণ হয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিত্তিতে। প্রয়াগের ক্ষেত্রে মহাকুম্ভের মিলন বৃহস্পতি ও সূর্যের মেষ রাশিতে। আমাদের এই দীর্ঘ যাত্রাপথ গাড়ি করে আসার পথে রাস্তায় প্রচুর ট্রাফিক জ্যাম পেয়েছি। এই মেলায় শুধু ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে নয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটেছে।
মানুষ কেন তীর্থস্থান ও তীর্থ দর্শনে যায়! তীর্থ কি? তীর্থের অর্থ হল - যেখানে গেলে দেহের এবং মনের গ্রন্থিমোচন ও চিত্তশুদ্ধি হয় তাই তীর্থ। আমাদের গাড়ি খড়গপুর রেলশহর ছেড়েছিল ১০.২.২০২৫ (সোমবার) সন্ধ্যে ৭টা ৪৫ মিনিটে। পরের দিন মঙ্গলবার বিহারের আওরঙ্গাবাদে প্রায় ঘন্টা দুয়েকের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক জামের মধ্যে আমাদের চলমান গাড়ি ধৈর্য ও দীর্ঘ প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। উক্ত সময়ে আমরা গাড়ি থেকে নেমে পেট্রোল পাম্পে তেল ভরে সেই সঙ্গে দুপুরের লাঞ্চ করলাম। আবার আমাদের গাড়ি রওনা হল সুদূর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের দিকে। আমাদের চলমান গাড়ি চলতে শুরু করল কিন্তু মাঝরাস্তায় আবার ট্র্যাফিক জাম। আমরা আবার অপেক্ষমান এবং উপস্থিত ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ANI-এর সম্মুখীন হলাম। আমরা মিনিট দশেকের জন্য যাত্রাপথের ধৈর্য, কতক্ষণ এইভাবে ট্র্যাফিক জাম, কোথায় যাচ্ছি, কি জন্য যাচ্ছি এবং কোথা থেকে এসেছি, কি নাম - এইসব কথার সম্মুখীন হই ও প্রতিটা প্রশ্নের সাবলীল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের অতিরিক্ত সময় এবং ট্রাফিক জাম ঝাড়খন্ড এবং বিহার সীমান্তেই বেশি অতিবাহিত হয়েছিল। আমাদের মধ্যে দুজন সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে বললাম তোমরা ধৈর্য ধরো। তীর্থে যখন যাচ্ছি, উদ্দেশ্য যখন মহৎ, মহাকাল, দেবাদিদেব মহাদেব অবশ্যই আমাদের ধৈর্য ও কষ্ট দেখছেন ও অনুভব করছেন এবং আমরা অবশ্যই আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছবো।
এই সময় বিশ্বমহামানব স্বামী বিবেকানন্দের সেই অমৃত, শাশ্বতবাণী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় - "ওঠো, জাগো, যতদিন না লক্ষ্যে পৌঁছচ্ছো থেমো না"। গাড়ির মধ্যে আমরা খঞ্জনী, মাউথঅরগ্যানে "হরে কৃষ্ণ হরে রাম নিতাই গৌর রাধেশ্যাম° ধ্বনিতে, হরিনাম সংকীর্তনে, আধ্যাত্মিক সংগীতে নিজেদেরকে মাতিয়ে রাখলাম। আবার আমরা সবাই মিলে সমবেত কন্ঠে গাইতে শুরু করলাম "তোরে হৃদ মাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবো না, ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর তো পাবো না"। এই মুহূর্তে আমার পরমপুরুষ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর কাছে প্রার্থনা করছেন, "মা আমায় শুকনা সন্ন্যাসী করিস না, রসে বসে রাখিস মা"। তিনি ঠাকুরের নরেনের কাছে নরেনের মতো, গিরিশ ঘোষের কাছে গিরিশের মতো, কেশব সেনের কাছে কেশবের মতো, আবার পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কাছে বিদ্যাসাগরের মতো। আবার ছেলে-ছোকরা ভক্তদের কাছে ছেলে-ছোকরার মতো। তখন প্রেমের ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব ছেলে-ছোকরাদের কাছে হয়ে গেলেন ফচকেমি ও মস্করার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ। ছেলে-ছোকরাদের মুখ দিয়ে বলালেন, "বল তোরা - মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী মেয়ের কোল। বল হরিবোল, বল হরিবোল"। ঠাকুর ছেলে-ছোকরাদের আধ্যাত্বিক প্রবচনে বোঝাচ্ছেন - কি বোঝাচ্ছেন? মাগুর মাছের ঝোল হল সুস্বাদু হরিনাম, যুবতী মেয়ের কোল মানে চির পবিত্র ধরিত্রী মাতা অর্থাৎ আমাদের পৃথিবী। বাবা, এই পৃথিবীতে বাঁচতে হলে ভগবত কথা, ঈশ্বরের কথা, ঈশ্বরীয় নাম গুণগান ও তার গুণকীর্তনে নিজেকে নিমজ্জিত রাখো। এই আধ্যাত্মিক আলাপ আলোচনা আমরা সাতজনের মধ্যে করতে করতে চলেছি প্রয়াগের পথে। এই আলাপ আলোচনাগুলি, এই আধ্যাত্মিক ঠাকুর, মা ও স্বামীজির এবং ভগবততত্ত্ব কথাগুলিই হল 'অমৃতের সন্ধানে মহাকুম্ভে'। আবার একটি বাস্তব চালচিত্র 'পয়সা যার শক্তি তার'। দুনিয়া তার কাছে হাতের মুঠোয়। এরকমই একটি সুমধুর সুর ও অসুরের মিলে - দেব ও দানব মিলে একটি ভাইরাল ওড়িয়া গান "ছিঃ ছিঃ ছিঃ রে ননী ছিঃ..."। এই ভাইরাল গূঢ়তত্ত্বের গান (এই গানের মধ্যে মারাত্মক ইনার মিনিং আছে) আমাদেরকে খানিক মাতিয়ে রাখল।
এই মুহূর্তে আমরা বিশ্বমহামানব স্বামী বিবেকানন্দের অমৃতবাণী স্মরণ ও মনন করি - "ধর্ম এমন একটি ভাব যা পশুকে মনুষ্যত্বে ও মানুষকে দেবত্বে উন্নীত করে"। আধ্যাত্মিক তীর্থভূমি, দেবভূমি প্রয়াগরাজে আমাদের মনকে নিমজ্জিত রাখলাম। আমাদের আধ্যাত্মিক ভাবে পরিপূর্ণ গাড়িটি, ভগবতপ্রেমী নামের গাড়িটি চলতে থাকল 'মরুতীর্থ হিংলাজ'-এর সেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের চিরস্মরণীয় গানটি গাইতে গাইতে - "পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তব, মাগো, বলো কবে শীতল হবো? কতদূর আর কত দূর বলো মা"। বলতে বলতে আমাদের গাড়ি রাস্তার সমস্ত জামকে অতিক্রান্ত করে দ্রুতবেগে ঈশ্বরের কৃপায় উত্তরপ্রদেশের বেনারসে প্রবেশ করল।
আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের দিন ১২.২.২৫, বুধবার, ভোর ৪:৩০ মিনিটে প্রয়াগরাজের ফ্লাইওভারের তলায় আমাদের গাড়িটি 'Kanha Motors Parking Entrance'-এ এসে দাঁড়াল। ওখান থেকে প্রতি মোটর সাইকেলে আমাদের দুজন সওয়ারি হিসেবে মাথাপিছু একশত টাকা নিয়ে মহাকুম্ভ মেলার প্রাঙ্গণে পৌঁছে দিল। ওখান থেকে তিন কিলোমিটার পদব্রজে, ডাক্তার অনুপ ঘোষালের গানের কলিতে "আহা কি আনন্দ, আকাশে বাতাসে" গাইতে গাইতে আমরা পৌঁছে গেলাম মহাকুম্ভ মেলার ত্রিবেণী সঙ্গমে। শুভ প্রত্যুষে আমাদের সকলের হৃদয়ে সঞ্চিত হয়ে উঠল গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানের কলি "কি মিষ্টি দেখো মিষ্টি কি মিষ্টি এ সকাল। সোনা ঝরছে ঝরে পড়ছে কি মিষ্টি এ সকাল"। আমরা নৌকায় উঠে সকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে, অর্থাৎ ব্রাহ্মমুহূর্তে শাহী স্নান করতে জলে নামলাম। সে কি আনন্দ। কোটি মানুষের ভিড়ে সে এক অনাবিল আনন্দ। জয় শিবশম্ভূ, জয় মা দুর্গা, জয় ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব কি জয়, জয় বিশ্বপ্রসবিনী জগতজননী মা সারদাদেবী কি জয়, জয় বিশ্বমহামানব স্বামী বিবেকানন্দজী কি জয়... বলে পাঁচের বেশি ডুব দিলাম, সূর্যের দিকে তাকিয়ে সূর্য প্রণাম করলাম। উচ্চারণ করলাম, "জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম। ধ্বান্তারিং সর্ব্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।" ডুব দিতে দিতে জগতের সকল মানুষের, সকল জীবের মঙ্গল হোক বলে প্রার্থনা করলাম। বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান। সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সাধু, সন্ত, সন্ন্যাসী, বৈষ্ণব, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মহামিলন। ত্রিবেণীতে অর্থাৎ মহাকুন্তে স্নান করলে সব পাপ দূর হয়।
পৌরাণিক কাহিনীতে আছে মহর্ষি দুর্বাসার অভিশাপে দেবতারা দুর্বল হয়ে পড়লে ভগবান বিষ্ণু ক্ষীরসমুদ্র মন্থন করার পরামর্শ দেন। অমৃতলাভের আশায় দেবতা ও অসুরেরা একজোট হয়ে সমুদ্র মন্থন করলে সেই সমুদ্র থেকে অমৃত ভর্তি কলসী উঠে আসে। অমৃত খেলে অমর হওয়া যায়। তাই দেবতা ও অসুরেরা দু'পক্ষই অমৃত পেতে উদ্যোগী হলে দেবরাজ ইন্দ্রের ছেলে জয়ন্ত সেই অমৃত নিয়ে পালিয়ে যান। আর তা নিয়ে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ লাগলে জয়ন্ত সেই ফাঁকে সেই অমৃত কলসি ১২ দিন ধরে প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী এবং নাসিকে সংরক্ষিত রাখেন। সুতরাং ওই চার জায়গায় কুম্ভের অমৃতের কয়েক ফোঁটা ওই চার স্থানে পড়ে, তাই ওই চার জায়গা পবিত্র তীর্থরূপে চিহ্নিত হয়।
আবার পৌরাণিক ইতিহাসবিদ ডক্টর নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির মতে, হরিবংশে বলা হয়েছে সমস্ত দেবতা ও অসুরেরা যখন সমুদ্র মন্থন করলেন তখন সমুদ্রের মধ্যে অনেক ঔষধি সম্পন্ন গাছগাছালি ছিল। প্রায় এক হাজার বৎসর ধরে সমুদ্র মন্থন করা হয়। তারই ফলস্বরূপ বহু মূল্যবান গাছগাছড়া ও ঔষধি সমুদ্রের তলদেশ থেকে উঠে আসে। মহামূল্যবান গাছগাছালি থেকে মানুষ যখন প্রথম ঔষধ আবিষ্কার করল রোগ নিরাময়ের জন্য তাই-ই 'অমৃত'। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করলে সব পাপ মুছে যায় ও মোক্ষলাভ হয়। বেণী মানে প্রবাহ। এই তিন প্রবাহ হল - গঙ্গা যমুনা ও সরস্বতী। স্বামী বিবেকানন্দ ইংরেজি ১৮৯০ সালে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই প্রয়াগরাজে এসেছিলেন এবং একুশে জানুয়ারি পর্যন্ত এখানে ছিলেন। ধ্যান ও তপস্যার মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ ডুবেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এখানে প্রবাহিত হয় সচ্চিদানন্দের প্রবাহ। কি সচ্চিদানন্দের প্রবাহ? সত্য, জ্ঞান ও আনন্দের প্রবাহ।
এখানে একটি পৌরাণিক কাহিনীর কথা উল্লেখ না করলেই নয় - কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষ। যুদ্ধের পর রাজা যুধিষ্ঠিরের মন ছিল শ্রান্ত, ক্লান্ত, অবসন্ন। কিছুই ভালো লাগছে না তাঁর। তিনি ঋষি মারকন্ডর সান্নিধ্যে এলেন। সবিস্তারে, সমস্ত বৃত্তান্ত খুলে বললেন। ঋষি মারকন্ড রাজা যুধিষ্ঠিরকে প্রয়াগরাজের কথা বললেন। বললেন প্রয়াগে দেহত্যাগ হলে মুক্তিলাভ হয়। প্রয়াগে দেহত্যাগ হলে আর পরবর্তীতে জন্মলাভ হয় না। প্রয়াগের কথা স্মরণ করলেই মুক্ত হওয়া যায়। 'প্রয়াগ' শব্দের অর্থ ত্যাগ করা বা দান করা। প্রকৃষ্ট রূপে ত্যাগ করতে হবে, দান করতে হবে। কি দান? আমাদের শরীর, বোধবুদ্ধি ত্যাগ করতে হবে, আমি শরীর, আমি কর্তা - এই অহং ত্রিবেণীতে স্নানের সময় ভগবানের কাছে সমর্পণ করতে হবে। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলছেন, "ডুব-ডুব-ডুব রূপ সাগরে, আমার মন।/ তলাতল পাতাল খুঁজলে,/ পাবি রে প্রেম রত্ন ধন।/ খোঁজ, খোঁজ খোঁজ খুঁজলে পাবি/ হৃদয়-মাঝে বৃন্দাবন..."।
ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলছেন, "সচ্চিদানন্দ জলে ডুব দিতে হবে। উপর উপর ভাসলে চলবে না"। ঠাকুর বললেন, "আমরাই সমুদ্র। আমাদের মধ্যেই রয়েছে অমৃত। আমাদেরকেই মন্থন করতে হবে। এরকম করে মন্থন করতে হবে সাধন, ভজন ভগবত চিন্তায় মন্থন করতে হবে"। শ্রীরামকৃষ্ণদেব আরও বলছেন, "সচ্চিদানন্দ সাগরে ডুব দিলে কেউ মরে না অমর হয়। ভগবানে ডুব দিলেই অমর হবে। কিভাবে আমরা ডুব দেবো? 'আমার সব পাপ নষ্ট হয়ে গেছে' এই মনে করে ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দিতে হবে। 'আমার অতীত যা ছিল সব তোমায় দিয়ে আমি মুক্ত হলাম' - তারপর যেন আর কোনো পাপ চিন্তা না আসে"। জগৎ জননী মা সারদা বলছেন, "বাসনাশূন্য হয়ে আমাদের ডুব দিতে হবে। তবেই আমাদের নিস্তার"। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলছেন, "যাকে জাত সাপে ধরেছে তার আর নিস্তার নেই"। "ঠাকুর তোমারও নিস্তার নেই আমাদের দর্শন না দিয়ে"। আমাদের জলে ডুব দেওয়ার সময় মনে করতে হবে আমার যত পাপ-পুণ্য, লাভ-লোকসান দুঃখ-কষ্ট আমার অতীত সব মাগো তোমার পায়ে দিলাম। আমি কিছু চাইনা আমি শুধু তোমাকেই চাই। হে মহাকাল আমার তনু মন তুমি আত্মসাৎ করে নিয়েছ। তাই, হে পরমেশ্বর ঈশ্বর, হে দেবাদিদেব মহাদেব আমার বিদ্যামায়ার চৈতন্য হোক। কি বিদ্যা মায়া? বিবেক ও বৈরাগ্যের চৈতন্য হোক।
হে শিবশঙ্কর, তুমি লয়ের দেবতা। আমার শরীর ও মন থেকে নাশ করে দাও অবিদ্যা মায়া। কি অবিদ্যা মায়া? ষড়রিপুর অবিদ্যামায়া - কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য। আমার প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি পল, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি হৃদয়তন্ত্রীতে মাগো তোমার উপস্থিতি সর্বদা অনুভব করি। প্রয়াগের মহাকুম্ভ মেলায় আমাদের সকলের স্নান হল। কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে, প্রয়াগের মহাকুম্ভ মেলা ও ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান সব যেন আধ্যাত্মিকতার ক্ষীরসমুদ্রের জলে, মানস সরোবরের জলে আমরা একাকার হয়ে গেলাম। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলছেন, "আসল নকল সব একাকার হয়ে গেছে"। মানুষের ভিড়ে স্নানের পর আমরা সাধুসন্তদের আখড়া দর্শন করলাম। সাধুসঙ্গ, বিভিন্ন সন্ন্যাসী দর্শন করলাম। ভিন্ন ভিন্ন মার্গের সন্ন্যাসী, নাগা সন্ন্যাসী, নাগা বাবা, আইআইটি বাবা, কাঁটাবাবা যিনি কাঁটার মধ্যে শুয়ে আছেন এবং ডুগডুগি বাজাচ্ছেন, কিন্নর অঘোরী বাবা দর্শন করলাম। প্রত্যেক সাধু সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসীনীরা যে যার আরাধ্য ইষ্টদেবতার স্মরণে মননের ধর্মে, যে যার কর্মে ঈশ্বরের কাছে সমূহ জাগতিক সুখ, দৈহিক সুখ, দেহ জ্ঞান বোধ সব বিসর্জন দিয়ে ঈশ্বরের পাদপদ্মে নিজেদেরকে সঁপে দিয়েছেন। মৃত্যুভয় ওঁনাদের নেই। মৃত্যুভয় ওঁনাদেরকে অর্থাৎ সাধু সন্ন্যাসীদের স্পর্শ করতে পারেনি।
স্বামী চন্ডিকানন্দের তেজোদীপ্ত গান এই মুহূর্তে আমাদের মনে করিয়ে দেয় - "অমৃতস্য পুত্র আমরা, মৃত্যু মোদের নাহিরে আর,/ কার ভয়ে তবু কেঁদে দিশেহারা উঠে দাঁড়া মিছে স্বপন ছাড়।/ ত্যাগ ও সেবার বিজয় কেতন, নির্ভয়ে চল বিদরি গগন,/ ধন্য হইবে বিশ্ব ভুবন সাথে আছে সদা আশিস তার"। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আসা সাংবাদিকরা নাগা সন্ন্যাসীদের ও সাধুদের প্রশ্ন করছে আপনারা পাহাড় পর্বতে, বিভিন্ন গুহায় নিজেদের মুক্তির জন্য ঈশ্বরের সাধনা করেন কিন্তু সমাজের জন্য আপনারা কি করছেন? উক্ত সোশ্যাল মিডিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন সাধুবাবারা। এক উচ্চবর্গের সাধু তিনি উত্তরে বলছেন, "ভারতের বিজ্ঞানীরা অর্থাৎ সাইন্টিস্টরা রিসার্চ করে অনেক কিছু আবিষ্কার করছেন। তাদেরকে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না। পরে কোনো জিনিস আবিষ্কার করলে হয়ত সংবাদ শিরোনামে তাঁর নাম ভেসে উঠল তখনই তাঁকে জানতে পারলেন, চিনতে পারলেন। সেই রকমই ডাক্তারের কাজ ডাক্তার করছেন, সাইন্টিস্টদের কাজ সায়েন্টিস্টরা করছেন, শিক্ষকদের কাজ শিক্ষকরা করছেন, উকিলের কাজ উকিলেরা করছেন, জগতে প্রত্যেকটি মানুষ তাদের নিজ নিজ কর্ম করে যাচ্ছেন। জগতের সকল মানুষের মঙ্গলের জন্য আমরাও প্রার্থনার কাজ করছি ঈশ্বরের কাছে"। আবার সোশ্যাল মিডিয়া প্রশ্ন করছেন সাধুকে - "আপনাদের মধ্যে কতজন উচ্চশিক্ষিত সাধু আছেন এবং কতজন অশিক্ষিত সাধু আছেন?" যে সাধু প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি অনেকটাই উচ্চশিক্ষিত, প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও তেজোদীপ্ত। সাধুটি বললেন, "আমাদের সাধু সন্ন্যাসী মহলে অনেক হাইলি লিটারেট সাধু আছেন কিন্তু সাধু শিক্ষিত ও অশিক্ষিতর মানেটা কি! সাধু মানে সাধু। সতে মন ন্যস্ত করার নামই হল সন্ন্যাস। যাঁরা তনু মন ঈশ্বরের পাদপদ্মে বিলীন করে দিয়েছেন। এই ১৪৪ বছরের মহাকুম্ভে পুণ্যস্নান করে ধীরে ধীরে অন্তরের সমস্ত গ্লানি তাঁরা ধুয়ে ফেলছেন"।
প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ মেলা বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশের একত্রিত হওয়ার মেলা। এই মহাকুম্ভে প্রথম নাগা সাধুরা স্নান করেন। অনেক কৃচ্ছসাধন করে তবেই নাগা সাধু হওয়া যায়। তাঁরা ধর্ম রক্ষার সৈনিক। তাঁরা প্রয়োজনে জীবনদানে সর্বদাই প্রস্তুত। তারপরে অন্য সাধু বৈষ্ণবদের স্নান, তারপরে গৃহস্থ ভক্তরা স্নান করেন। স্নানের পবিত্র জল হাতে নিয়ে মাথার উপর তুলে সূর্য দেবতাকে প্রণাম করেন। ভক্ত মানুষের ইচ্ছা এই ১৪৪ বছরের মহাকুম্ভ মেলায় স্নান এবং সাধু দর্শন। কিন্তু অনেকেই আসতে পারেননি। তার মানে তাদের দেহ আসতে পারেনি কিন্তু মন নামক আত্মাটা জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনে প্রয়াগের মহাকুম্ভ মেলায় নিমগ্ন ছিল। বহু কোটি মানুষ মহাকুম্ভে ও ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করেছেন। স্নানের সময় ডুব দিয়ে নিজ নিজ মনের প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছে, তাদের নিজ নিজ আরাধ্য দেবতার কাছে জানিয়েছেন। স্নানের পর বহু মানুষের আধ্যাত্মিকতার, ভালো মানুষ হওয়ার কোনো পরিবর্তনই হয়নি। এপ্রসঙ্গে একটা গানের কলির কথা মনে পড়ছে, "আগে আমি যেমনি ছিলাম তেমনি করে দে"। তাহলে কিসের জন্য ১৪৪ বছর অন্তর এই মহাপূর্ণ তীর্থস্থান প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান এবং সাধুদর্শন। ওড়িয়া ভাষায় একটি কথা আছে - "চকা আঁখি সবু দেখুছি" অর্থাৎ চাকার মতো চোখ যাঁর, জগতের নাথ যিনি, প্রভু জগন্নাথদেব যিনি সব দেখছেন। কে কি করছেন, কে কোথায় আছেন। "প্রার্থনাতে কইলি কত করলি নাকো কাজে,/ ফুটলো ওটা কল্পনাতে ফলটি পেলি বাজে"। আমরা কি তাহলে কোটি ভক্তের উপস্থিতির সঙ্গে আমাদের আরও সাতজনের উপস্থিতি, সংখ্যা বাড়ানোর জন্য গিয়েছিলাম? তাহলে তো আমরা ঘরে বসে থাকতে পারতাম। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের চিরন্তন, শাশ্বত কথাটি এই মুহূর্তে মনে করতে পারি - "নাম করো মনে, কোণে ও বনে"। আবার, ঠাকুরের চিরন্তন অমৃত কথা - "আপনাতে আপনি থেকো মন - যেও নাকো কারো ঘরে, যা চাবি তা বসে পাবি খোঁজ নিজ অন্তঃপুরে"। ওখানে কি তবে সেলিব্রিটি দেখতে গিয়েছিলাম? শুধু আনন্দ করতে গিয়েছিলাম? না নিজের মনের খোরাক জোগাতে গিয়েছিলাম? তা নয়। আমরা গিয়েছিলাম ওই ১৪৪ বছর অন্তর পৃথিবী বিখ্যাত উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভ মেলায় সাধুদের দর্শন ও ত্রিবেণী সঙ্গমে পুন্যস্নান করতে। যাতে আমাদের পূর্বের ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-প্রবৃত্তি, আমাদের দেহবোধ, আমাদের আমিত্ববোধ (অর্থাৎ আমি একজন কেউকেটা) সব ওই ত্রিবেণী সঙ্গমে ত্রিদেব (ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর) ও তিনশক্তি (গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী)-তে ডুব দিয়ে এবং আমাদের আমিত্বটাকে মহাকুম্ভের জলে সঁপে দিয়ে 'তুমিময়' হয়ে গিয়েছিলাম।
এই মুহূর্তে একটি আধ্যাত্মিক গল্পের কথা স্মরণ করে আমার লেখার ইতি টানছি - এক গুরুদেব তাঁর সাতজন শিষ্যকে সাতখানা নারিকেল দিয়ে বললেন তোমরা এমন এক জায়গায় যাবে যেটি নির্জন। সেইখানে তোমরা আমার দেওয়া নারকেলটি দু'ভাগ করে আমায় এনে দেবে। কিন্তু মনে রেখো কেউ যেন তোমাদের দেখতে না পায়। সাতজন শিষ্য এরপর খুশিমনে গুরুদেবকে প্রণাম করে চলে গেল এবং মনে মনে তারা গুরুদেবকে বলল এটা আর কি এমন কাজ! আমরা অতি শীঘ্রই নারকেলটি দু'ভাগ করে এনে আপনার চরণে সমর্পণ করব। সব শিষ্যের মধ্যে ছয় শিষ্য নারকেলটি দু'ভাগ করে এনে গুরুদেবের কাছে সমর্পণ করল। কিন্তু একজন শিষ্য নির্জন স্থানে, গুহার মধ্যে প্রবেশ করেও নারকেলটি দু'ভাগ করতে পারল না। সেই ভক্ত শিষ্যটি হৃদয়ে অনুভব করল তাকে অলক্ষ্যে কেউ একজন দেখছেন। সে নারকেলটি দু'ভাগ করতে না পেরে গুরুদেবকে প্রণাম করে গোটা নারকেলটি গুরুদেবের হাতে দিল। অন্যান্য শিষ্যরা হেসে উক্ত শিষ্যটিকে বলল, "তুই কোথাও কোনো নির্জন স্থান পাসনি যাতে ওই নারকেলটি দু'ভাগ করা যায়!" অন্যান্য শিষ্যরা যখন হাসছে তখন গুরুদেব উক্ত শিষ্যটিকে বললেন, "তুমি কি কোথাও কোনো নির্জন স্থান পাওনি যাতে ওই নারকেলটি দু'ভাগ করে আনা যায়"? ভগবতপ্রেমী শিষ্যটি গুরুদেবকে বলল, "না গুরুদেব আমি কোথাও কোনো নির্জন স্থান পেলাম না। যেখানে আমি নারিকেলটি দু'ভাগ করব কারণ আমার মনে হল আমাকে কেউ একজন দেখছেন। আমি তার চোখকে কি করে ফাঁকি দেবো"। গুরুদেব তখন ওই শিষ্যকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন ও বললেন, "তোমার ঈশ্বরের উপর ষোল আনা অনুভূতি হয়েছে। পরমেশ্বর ঈশ্বর তোমার সঙ্গে রয়েছেন। আশীর্বাদ করি তোমার সার্বিক মঙ্গল হোক - তোমাদের সকলের চৈতন্য হোক"।
বাইবেলে ভগবান যীশুখৃষ্ট বলেছেন, "আমি সকলের দোরগোড়ায় যাই। সকলকে ডাক দেই। যে আমার ডাক শুনে ভেতরে ডাকেন, আমি কেবলই তার কথা শুনি।" প্রেমের ঠাকুর, প্রাণের ঠাকুর, অবতার বরিষ্ঠ ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের আশীর্বাদী বাণী স্মরণ ও মনন করে বলি - "ভাবছো মিছে চলবে কিসে ভাববার তুমি কে - তোমার ভাবনা ভাবছেন যিনি তুমি ভাবো তাঁকে"।
ওঁ তৎ সৎ।