বিবিধ

কথার কথা ও কথার বাজার



অভিজিৎ রায়


কাউকে কিছু বলার ছিল না, কাউকে কিচ্ছু বলিনি। কাউকে কিছু না বলেই আমি উঠে দাঁড়ালাম, ঘুরে দাঁড়ালাম এবং চলতে শুরু করলাম। এর মানে, উঠে দাঁড়ানোর আগে আমার কিছু বলার ছিল। এর মানে আমার যে কথাগুলো বলার ছিল সেই কথাগুলো আমি বলতে পারিনি ভয়ে অথবা বলতে চাইনি অভিমানে।

তাহলে কী দাঁড়াল? সমস্ত কথার ভবিষ্যৎ ভয় আর অভিমানের চাহিদা এবং যোগানের উপর নির্ভর করে। অন্যভাবে বলা যায় যে কথার দাম বা মূল্য নির্ভর করে অভিমানের চাহিদা এবং ভয়ের যোগানের উপর। এরপর এই সিদ্ধান্তে আসাই যায় যে, কথার খুব ভাল একটা বাজার আছে। সেই বাজারকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে আমি কাউকে কিচ্ছু না বলেই উঠে দাঁড়াই এবং ঘুরে হাঁটা শুরু করি বাজারের উদ্দেশ্যে।

আসলে আমার কথার দাম পাওয়া মানেই এই আমিও একটা ভাল দাম পেয়ে যায়। যে দামের সঙ্গে সম্মানের একটা ভাল গাঁটছড়া বাঁধার গল্প থেকেই যায়। ব্যক্তিগত স্তরে যে কথা উপেক্ষিত, নৈর্ব্যক্তিক স্তরে সেই কথাই এনে দেয় সীমাহীন মান সম্মান। তাকে জড়িয়ে ধরে আরও কত কথার বাজার গড়ে ওঠে তা শুধু শ্রোতারাই জানেন। এইসব কথার লিখিত রূপের বাজার আরও একটু ভাল নাকি সামান্য খারাপ তা বুঝে উঠবার আগেই কে যেন পিছন থেকে ডাকে। আমাকে ফিরতে হয় কথার ব্যক্তিগত বৃত্তে। যে বৃত্তের কেন্দ্রে থাকে অভিমান আর পরিধি জুড়ে থাকে ভয়। এই সঞ্চয় আমাকে আনন্দ দেয় না। দেয় শুধুমাত্র অবসাদ।

অবসাদের একটা নতুন বাজার গড়ে উঠেছে অনেকদিন এবং সম্প্রতি সেই বাজার দ্রুতগতিতে বড় হচ্ছে। অবসাদের বাজার বড় হচ্ছে আর অবসাদগ্রস্ত কথারা জড়ো হচ্ছে পার্কে, ময়দানে, চায়ের দোকানে, কাঁচাবাজারে অথবা মাছের বাজারে। অবসাদের গল্প থেকে উঠে আসা কথারা হারিয়ে যায় দ্রুত। কাজের বাজার থেকে হারিয়ে যায় আবার সাজের বাজার থেকেও হারিয়ে যায়। সাজানো কথায় থাকে চালাকি, অবসাদগ্রস্ত কথারা চতুর নয়; আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। বিষণ্ণ সময় শুধু ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলে। চেনা নোনাজলে ভেসে যায় ভয় আর অভিমান। মূল্যবান কথারা অভিমান আর ভয়ের যোগানের ভারসাম্য হারিয়ে মূল্যহীন হয়ে পড়ে। এই অবসরে ভয়ে আর অভিমানে না বলতে পারা কথাগুলো বাজার থেকে তুলে নিই আমি।

যে কথা বলার ছিল আজ তা বাজারে নেই। এমন কেউ কি আছ যে সেই কথাগুলো খুঁজছ আজও?

চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।